চট্টগ্রাম মেডিকেলের ল্যাবে বেড়েছে পরীক্ষা, কমেছে দালালের দাপট

প্রতিদিন ৬০০ টেস্ট হচ্ছে মেডিকেলের ল্যাবে, বুথ বেড়ে সাতে

চট্টগ্রাম নগরীর একটি প্রতিষ্ঠিত ল্যাবে ১০ বছর ধরে কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করতেন রতন দাশ। চট্টগ্রাম মেডিকেল থেকে রোগী ভাগিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সেই ল্যাবে নিয়ে যাওয়ায় ছিল তার মূল কাজ। কিন্তু সম্প্রতি তার চাকরি ছাড়তে হয়েছে। কারণ চট্টগ্রাম মেডিকেলের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগ থেকে রোগীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য এখন ছুটেন এনসিলারি বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলার প্যাথলজি ল্যাবে। রোগীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য মেডিকেলের বিভিন্ন ফ্লোরে ল্যাবের ঠিকানা ও প্যাথলজি পরীক্ষার টাকার পরিমাণ সম্বলিত তালিকাও টাঙানো আছে। এতে সহজেই রোগীরা বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখিয়ে ল্যাবে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সারতে পারেন। আর দিনে দিনেই পেয়ে যান রিপোর্ট। বেসরকারি ল্যাবের চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে এখানে করানো হয় যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

এছাড়া মেডিকেলের প্যাথলজিতে বেসরকারি হাসপাতালের মতোই ফ্লোরে বসানো হয়েছে স্যাম্পল কালেকশন বা নমুনা সংগ্রহের টেবিল। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে নমুনা দিচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনসিলারি ভবনের চতুর্থ তলায় প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার রোগী বিভিন্ন পরীক্ষার নমুনা দিতে পারছেন ভোগান্তি ছাড়াই।

আগে দালালদের জন্য রোগীরা নিজের পছন্দের ল্যাবে পরীক্ষা করাতে পারতো না। দালালরা এসে তাদের হাত থেকে পরীক্ষার স্লিপ নিয়ে যেতো অন্য ল্যাবে। এছাড়া এসব পরীক্ষার কাগজে কৌশলে নিজে থেকে বিভিন্ন পরীক্ষায় দাগ বসিয়ে দিতো দালালচক্র। এভাবে অসহায় রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতো টাকা। আর রোগীদের কাড়ি কাড়ি টাকা গচ্চা যেতে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষার পেছনে।

ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, নমুনা সংগ্রহে কাউন্টারের সংখ্যা আগে দুটি এবং বুথ ছিল তিনটি। এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে সাতটি। আগে বহির্বিভাগের রোগীরা সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টিকিট কেটে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে টেস্ট করার সুযোগ পেতেন। আর আন্তঃবিভাগে টেস্ট করানো হতো সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু এখন বহির্বিভাগের রোগীরাও সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্যাথলজিতে পরীক্ষা করানোর সুযোগ পাচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেলের নতুন বিল্ডিংয়ের চারতলায় ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্যাথলজি ল্যাব। ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে অনেকগুলো টেস্ট করাতে পারছেন রোগীরা। এদিকে বিআরটিএ থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত মোটর চালকদের ডোপ টেস্ট এখানে করা হচ্ছে ৯০০ টাকায়।
প্যাথলজি বিভাগের ইনচার্জ শুভাশীষ বড়ুয়া বলেন, ‘যে কোনো রোগী আউটডোরে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর পর এখন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আমাদের প্যাথলজি বিভাগে টেস্ট করাতে পারছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন ছয় শতাধিক টেস্ট হচ্ছে। তাছাড়া ডোপ টেস্ট চলছে। দিনে অন্তত ১০০ জনের ডোপ টেস্ট হয় এখানে। সবমিলিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।’

কোন পরীক্ষার খরচ কত
চট্টগ্রাম মেডিকেলের প্যাথলজি ল্যাবে রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করাতে খরচ ২০০ টাকা (বেসরকারি ল্যাবে ৬০০ টাকা), পিবিএফ পরীক্ষা ১০০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৪০০ টাকা), এমপি পরীক্ষা ২০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা), আরবিএস পরীক্ষা ৬০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা), ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা ৫০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা), লিপিড প্রোফাইল ৩০০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা), ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা ২৫০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা), এসজিপিটি পরীক্ষা ৭০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা), ইউরিন আর/ই পরীক্ষা ২০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা), স্টুল আর/ই পরীক্ষা ২০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা), ইউরিক এসিড পরীক্ষা ১০০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা), বিলিরুবিন পরীক্ষা ৬০ টাকা (বাইরের ল্যাবে ২৫০ টাকা)।
এছাড়া মেডিকেলের ল্যাবে এসজিপিটি পরীক্ষা করাতে খরচ পড়ে ৭০ টাকা, পিসি পরীক্ষা ৫০ টাকা, এএসও টাইটর পরীক্ষা ১০০ টাকা, বিটি.সিটি পরীক্ষা ৩০ টাকা, টিজি পরীক্ষা ৫০ টাকা, এইচবি% পরীক্ষা ৩০ টাকা, কোলেস্টেরল পরীক্ষা ৫০ টাকা, এফবিএস পরীক্ষা ৬০ টাকা, আরএ পরীক্ষা ৬০ টাকা, এস ক্যালসিয়াম পরীক্ষা ৮০ টাকা, ওজিটিটি পরীক্ষা ১২০ টাকা, অ্যালক্যালাইন ফসফেট পরীক্ষা ৭০ টাকা, ইউপিটি পরীক্ষা ৮০ টাকা, এচবিএ ওয়ান সি পরীক্ষা ৩০০ টাকা, ডোপ টেস্ট ৯০০ টাকা, ইউরিয়া পরীক্ষা ৫০ টাকা, সিমেন অ্যানালাইসিস ৫০ টাকা, বিলিরুবিন পরীক্ষা ৬০ টাকা, এস অ্যালবুমিন পরীক্ষা ১৫০ টাকা, ইএসআর পরীক্ষা ৩০ টাকা, ভিডিআরএল ৫০ টাকা এবং সিআরপি পরীক্ষায় খরচ মাত্র ১৫০ টাকা।

এছাড়া প্যাথলজি ল্যাবে চলছে থাইরয়েড ও হরমোনের সকল ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রম। বেসরকারি ল্যাবগুলোর তুলনায় অন্তত এক পঞ্চমাংশ কম খরচে মেডিকেলের প্যাথলজি বিভাগে থাইরয়েড ও হরমোনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাচ্ছে। রোগীদের ভোগন্তি যেমন কমেছে, তেমন কমেছে দালালের দৌরাত্ম্যেও।

থাইরয়েডের টিএসএইচ যেখানে বেসরকারি পর্যায়ে প্রকারভেদে ৮৫০ থেকে ১ হাজার টাকায় করা হয়, সেখানে চট্টগ্রাম মেডিকেলে করা যাবে মাত্র ২০০ টাকায়। টি-৩ ও টি-৪ বেসরকারিতে ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা করা হলেও একই পরীক্ষা চট্টগ্রাম মেডিকেলে করা যাবে মাত্র ২০০ টাকায়। আর এফটি-৩ ও এফটি-৪ বেসরকারিতে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকায় করা হলেও মেডিকেল হাসপাতালে করা যাবে মাত্র ২৫০ টাকায়। প্রোলেকটিন পরীক্ষা মাত্র ২৫০ টাকায় করা যাবে। যদিও এ পরীক্ষা বেসরকারি ল্যাবে প্রকারভেদে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!