চট্টগ্রাম থেকে ৬২ হাজার কোটি টাকা আয় কাস্টম হাউসের

দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেকর্ড ৬১ হাজার ৪৬৪ দশমিক ৭২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এবার আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি বা ২ হাজার ৩০৪ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের এমন রেকর্ড দেশের অর্থনীতির জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক খবর। চোরাচালান বন্ধ, জালিয়াতি রোধসহ শুল্ক ফাঁকি রোধে কাস্টমসের নানা উদ্যোগের কারণে রাজস্ব আদায় বেড়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য মতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুন মাসে ৬ হাজার ৩৬৫ দশমিক ৭১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মাস হিসেবে সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে জুলাই মাসে ৪ হাজার ৭৮১ দশমিক ২১ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ৫ হাজার ৪৯৮ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ৫ হাজার ১০৫ দশমিক ১৮ কোটি টাকা, অক্টোবর মাসে ৪ হাজার ৯১৮ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা, নভেম্বর মাসে ৫ হাজার ৪৭৯ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা, ডিসেম্বর মাসে ৪ হাজার ৩৮৮ দশমিক ০৫ কোটি টাকা, জানুয়ারি মাসে ৪ হাজার ৭৪৪ দশমিক ৬১ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৪ হাজার ২৮৭ দশমিক ৭৯ কোটি টাকা, মার্চ মাসে ৫ হাজার ০৫২ দশমিক ৫২ কোটি টাকা, এপ্রিল মাসে ৪ হাজার ৫৩৪ দশমিক ০৫ কোটি টাকা এবং মে মাসে ৬ হাজার ৩০৮ দশমিক ৯১ মাসে কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১২ মাসের মধ্যে ৬ মাসে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক। অর্থবছরের সেপ্টেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রয়ারি, মার্চ এপ্রিল পর্যন্ত ক্রমাগত ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। এর ফলে কাস্টমসের সার্বিক প্রবৃদ্ধিও ক্রমাগত কমে যায়। তবে মে এবং জুন মাসে রাজস্ব আয় বেড়ে যাওয়ায় অর্থবছর শেষে রাজস্ব আয়ে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পায় কাস্টমস।

কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বেশি হয় এমন পণ্য, গাড়ি, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্সসহ বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে। তবে বাজেটের আগে মে এবং জুন মাসে গাড়ি আমদানি বেড়ে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বেড়ে যায়। আমদানি ২০২১-২২ অর্থবছরে মতো স্বাভাবিক থাকলে রাজস্ব আদায়ের ৭০ হাজার কোটি টাকা হতো।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ডেপুটি কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, ‘চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ইতিহাসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে। এটি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জন্য একটি মাইলফলক।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি করে। এতে কমে যায় গাড়িসহ উচ্চ শুল্কের পণ্য আমদানি। এমন সংকটকালীন সময়েও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আদয়ে ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আমরা বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক হিসেবে দেখছি।’

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা পরিস্থিতির সময়েও কাস্টমসের রাজস্ব আয় ৬১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো সংবাদ। এতে প্রতীয়মান হয় দেশে আমদানির পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে যেমন সাপ্লাই চেইনে উন্নতি ঘটেছে, তেমনি রাজস্ব আয়ও বেড়েছে।’

এএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!