চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রকে শাসন করায় ঘুষি খেলেন শিক্ষক

ক্ষমা চেয়ে পার অভিভাবকের

চট্টগ্রাম নগরীর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রুমেই এক শিক্ষকের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রকে শাসন করার অপরাধে শিক্ষকের ওপর হামলা চালায় শিক্ষার্থীর অভিভাবক। এতে ঘুষির আঘাতে শিক্ষকের নাক ফেটে রক্ত ঝরে।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) ক্লাস চলাকালীন ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ষোলশহর রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষকের নাম শৌভিক আচার্য্য অর্ণব। তিনি ওই স্কুলের গণিতের শিক্ষক।

তবে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এর আগেও একটি পক্ষ একাধিকবার শিক্ষক নির্যাতনের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানান স্কুলটির পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি তালেব আলী।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির গণিতের ক্লাস চলাকালীন দুষ্টুমি করায় এক ছাত্রকে বকা ও চড় দেন শিক্ষক অর্ণব। এরপর ওই শিক্ষার্থী বাসা থেকে তার বাবাকে ডেকে আনেন স্কুলে। এই বিষয়টির মীমাংসার জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের রুমে উপস্থিত হন, কিন্তু অভিভাবক সবুজ আহমেদ শিক্ষক অর্ণবকে দেখা মাত্রই কোনো কথা না বলে হাতে থাকা চাবি দিয়ে নাকে ঘুষি মারেন। সঙ্গে সঙ্গেই নাক ফেঁটে রক্ত বের হতে থাকে শিক্ষকের।

এই ঘটনার পর অভিযুক্ত অভিভাবককে থানায় নিয়ে যাওয়া হলেও শিক্ষকের ওপর পাল্টা মামলা করার ভয় দেখালে বিষয়টি সমাধান করেন দু’পক্ষ।

ঘটনার বিষয়ে আহত শিক্ষক শৌভিক আচার্য্য অর্ণব বলেন, ‘ক্লাস চলাকালীন দুষ্টুমি করায় তাকে শাসন করেছি। তার অপরাধে আজ আমাকে লাঞ্ছিত হতে হলো।’

বিচার চাইবেন না—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এদেশে কিসের বিচার? ওই অভিভাবক ক্ষমা চেয়েছেন, তাই থানাতেই বিষয়টি আপোষ হয়ে গেছে। চাবির আঘাতে আমার নাকে ফ্রেকচার হয়েছে, বর্তমানে আমি মেডিকেল লিভে আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রথমে আমরা মামলা করতে চেয়েছি, কিন্তু শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, ওনারাও আমার বিরুদ্ধে ছাত্র নির্যাতনের মামলা করবেন। তাই আমার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে আর মামলার দিকে যাইনি।’

পরিচালনা কমিটির সভাপতি তালেব আলী বলেন, ‘ঘটনার পর সবুজ আহমেদ নামের অভিযুক্ত অভিভাবককে পাঁচলাইশ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির অন্যদের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমঝোতা করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রকে আঘাত করার কথা শুনে আমরা প্রধান শিক্ষকের রুমেই বসেছিলাম। কিন্তু সবুজ আহমেদ এসেই কাউকে কিছু বলার আগেই শিক্ষকের ওপর আক্রমণ চালান। শিক্ষকের সঙ্গে এমন আচরণ মোটেও কাম্য নয়। যদি শিক্ষকের কোনো দোষ থাকতো তবে আমরা কথা বলে তার বিচার করতাম।’

তবে থানাতে সমাধান হলেও প্রিয় শিক্ষকের ওপর হামলায় তাৎক্ষণিক ক্ষোভ জানায় শৌভিকের ছাত্রছাত্রীরা। ঘটনার পর স্কুল ক্যাম্পাসেই শিক্ষকের ওপর নির্যাতনের বিচার চেয়ে নানান প্লে-কার্ড হাতে আন্দোলন করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

জানা গেছে, আগামী ৭ আগস্ট স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন ঘিরে স্কুলের শিক্ষকদের প্রভাবিত করতে ও শিক্ষকদের নিজেদের হয়ে কাজ করাতে নানা রকম হুমকি-ধমকি, এমনকি নির্যাতনও চালাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগেও স্কুলে এসে নূর হোসেন নামের এক শিক্ষককে হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এছাড়া স্কুলের নির্বাচনে একটি পক্ষের হয়ে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় স্কুলের এক শিক্ষকের নির্মাণাধীন ঘরের কাজও বন্ধ করে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্তমান পরিচালনা কমিটির এক সদস্য।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!