চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারাচ্ছেন মধ্যবয়সী নারীরা, সংসারের চাপে চিকিৎসা নিতে দেরি

চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ে ডেঙ্গুতে ৩৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মৃত্যুর প্রবণতা তুলনামূলক বেশি ঘটছে। এর কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা বলছেন, নিজেদের শরীরের প্রতি অবহেলা, সচেতনতার অভাব, আর্থিক স্বাধীনতা না থাকায় দেরি করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। তারা এও বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে নিজের প্রতি আলাদা যত্ন না নেওয়াই গড়ে ওঠেনি নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। অন্যদিকে সংসারের কাজের চাপে জ্বরকে তেমন গুরুত্ব দেওয়ার সুযোগই পান না মধ্যবয়সী এই নারীরা। পরবর্তীকে জ্বরটি ডেঙ্গুর দিকে চলে গেলে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন ডেঞ্জার সাইন দেখা দেওয়ার পর। তখন রোগীকে ‘সারভাইভ’ করানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন অফিসের ২৪ ঘন্টার প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৪১ বছর বয়সী মমতাজ বেগম ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন ৬ আগস্ট। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার রক্তে প্লাটিলেট কমে আসে। পরবর্তীতে ‘হেমেরেজিক শক সিনড্রোমে’ মারা যান নগরীর কোতোয়ালী এলাকার বাসিন্দা এই নারী।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসক হাবিবুর রহমান জানান, প্রথমে জ্বরকে ভাইরাস জ্বর মনে করে মোড়ের ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ খেয়ে যাচ্ছিলেন মমতাজ। পরে তীব্র জ্বরের মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে তার শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। ডায়রিয়া-বমিতে কাহিল হয়ে পড়েন মমতাজ বেগম। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে ঘাটতি হওয়ায় ৫ দিন পর থেকে তার শরীরে ডেঞ্জার সাইনগুলো চলে আসে। পরে শক সিনড্রোমে বুধবার রাত সাড়ে দশটায় মারা যান মমতাজ।

গত সোমবার সানজিদা ও সেতারা জাহান নামের দুই নারী মারা গেছেন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে। এর আগে গত শনিবার মারা গেছেন আলমাস খাতুন নামে অপর এক নারী।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নারী মারা গেছেন ১৩ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২৪৫ জন নারী। তবে পুরুষের সংখ্যা নারীর চেয়ে বেশি হলেও মৃত্যু বেশি হয়েছে নারীদেরই। হিসেবে পুরুষ আক্রান্ত হয়েছে ১৯৯৫ জন। মারা গেছে ১১ জন।

ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১০ নং মেডিসিন ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু সালেহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নারীর ক্ষেত্রে অপুষ্টি ও রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে। এ কারণে যেকোনো ভাইরাল ইনফেকশনে তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। আর গর্ভবতী ও ঋতুস্রাবকালীন শারীরিক দুর্বলতাও একটি অন্যতম কারণ।’

তিনি বলেন, ‘এছাড়া নারীর মধ্যে দ্রুত চিকিৎসাসেবা নেওয়ার প্রবণতা কম। পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে উদাসীনতা। আবার বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি অবহেলার কারণে দেরিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নারীর মৃত্যু বেশি।’

আবু সালেহ বলেন, ‘একই সাথে অনেক নারীর আর্থিক স্বাধীনতা না থাকায় চাইলে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের সেবা নিতে পারছেন না। তাই ডেঙ্গুর এই সময়টায় পরিবারের অভিভাবকদের নারীর অসুস্থতায় গুরুত্ব দিতে হবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার মাধ্যমে।’

আইএমই

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!