চট্টগ্রামে এবার ‘মশা গবেষণাগার’ বানাচ্ছেন মেয়র রেজাউল

শীত শেষ হতেই বাড়ছে মশার যন্ত্রণা

চট্টগ্রাম নগরীতে মশা নিয়ন্ত্রণে এবার গবেষণাগার চালুর ঘোষণা দিলেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী। শীত শেষ হতেই মশার যন্ত্রণা বাড়ছে। আগামীতে বৃষ্টি হলেই ডেঙ্গু বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞানসম্মত উপায় জানতে এই গবেষণাগার চালু করা হবে।

ড্রোন উড়িয়ে এডিস মশার আবাস শনাক্ত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষকদের দিয়ে মশার ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই, মশার ওষুধ পরিবর্তনের পর গবেষণাগার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলেন চট্টগ্রামের মেয়র।

শনিবার (৩০ মার্চ) চট্টগ্রাম নগরের হালিশহরের মহেশখাল পরিষ্কারের মাধ্যমে ক্রাশ প্রোগ্রাম উদ্বোধন করেন মেয়র রেজাউল। সেখানে গিয়ে তিনি এই ঘোষণা দেন।

মেয়র রেজাউল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার জীবনচক্রও বদালাচ্ছে। এখন যে ওষুধ ছিটানো হবে তাতে কিছু প্রজাতির মশার হয়তো প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। তাই ৪১টি ওয়ার্ডেই নিয়মমাফিক মশা ওষুধ ছিটানোর পরও দেখা যাচ্ছে হালিশহরসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে মশা কমছে না। অথচ একই ওষুধে অন্যান্য এলাকায় মশা মরছে।’

তিনি বলেন, ‘কেন মশা মরছে না—এজন্য মশা নিয়ন্ত্রণের বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় জানতে এপ্রিলের মধ্যে গবেষণার জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে। এটি সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের অষ্টম তলায় চালু করা হবে।

মেয়র বলেন, ‘গবেষণাগারে আমরা প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখব। কোন ধরনের ওষুধ কোন ধরনের মশার জন্য কার্যকর তা জানা যাবে। তখন গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক ওষুধ ছিটানোর কার্যক্রম গ্রহণ করবো।’

এদিকে মহেশখালে সিটি কর্পোরেশনের ক্রাশ প্রোগ্রামে শনিবার দুপুর থেকে কালো তেল, নাফতা মিশ্রিত মাস্কুবান ও লার্ভিসাইড মহেশ খালে ছিটানো হয়৷

এছাড়া বিকাল থেকে খালের কচুরিপানা অপসারণ ও ফগার মেশিনের মাধ্যমে এডাল্টিসাইড প্রয়োগ করা হয়৷ প্রোগ্রামে প্রায় ১৫০ জন স্প্রেম্যান, ফগার অপারেটর ও পরিচ্ছন্নকর্মী অংশ নেয়৷

মশা নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরদের আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘ওয়ার্ড পর্যায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে কাউন্সিলররা তদারকি করছেন৷ সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম, তাই কাউন্সিলরদের আরও বেশি কার্যকর হতে হবে। সচেতনতা ও মশা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কাউন্সিলরদের ভূমিকা বেশি।’

চবি শিক্ষকদের বিজ্ঞানভিত্তিক পরামর্শে বর্তমানে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে একটি গবেষণা দল করি। তাদের পরামর্শেই মশার ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। আমাদের কাছে মশার ওষুধ পর্যাপ্ত মজুদ আছে৷ তবে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতাও প্রয়োজন। যদি না আমরা নিজেদের বাড়ি ও নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি অপসারণ না করি, তাহলে ওষুধ ছিটিয়েও কোনো কাজ হবে না।

প্রতি তিনদিনে একদিন বাসায় জমে থাকা পানি অপসারণের মাধ্যমে মশার প্রজননের সুযোগ কমাতে নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান মেয়র রেজাউল। তিনি বলেন, নালা-খালে জমে থাকা পানি মশার গুরুত্বপূর্ণ প্রজননক্ষেত্র। এজন্য প্রতিদিন বিভিন্ন নালা-খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে।

ক্রাশ প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর মো. ইসমাইল, মো. ইলিয়াছ ও আবদুল মান্নান, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, নগর সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন, উপ-প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোরশেদ আলম, ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি, জোন কর্মকর্তা আলী আকবর।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!