চট্টগ্রামে আমদানি পণ্যের সব কন্টেইনার যাবে বেসরকারি ডিপোতে, ব্যবসায়ীদের উষ্মা

জট কমাতেই এই ব্যবস্থা— বলছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ

চট্টগ্রাম বন্দরের জট কমাতে এখন থেকে সব ধরনের আমদানি পণ্য বেসরকারি ডিপোতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) পাঠিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই ডেলিভারি হবে কনটেইনার। এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৩৮টি পণ্যই শুধু বেসরকারি ডিপো থেকে খালাসের অনুমতি ছিল। তবে এ নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বন্দর কর্তৃপক্ষ মনে করছে, জট কমাতে এ সিদ্ধান্তের বিকল্প ছিল না। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাত পা বেঁধে এ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হল।

রোববার (২৫ জুলাই) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সব ধরনের আমদানি পণ্য বেসরকারি ডিপোতে (ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো) পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে অনুমোদন দেওয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন সিদ্ধান্তে খরচ ও সময় দুটোই বাড়বে। বাড়তে পারে হয়রানিও। মুলত কঠোর লকডাউনে শিল্পকারখানা বন্ধ থাকায় কন্টেইনারের স্তুপ জমে চট্টগ্রাম বন্দরে। গত তিনদিন ধরে গড়ে কন্টেইনার খালাস হয়েছে মাত্র ৫২০ টিইইউএস। যেখানে সাধারণ সময়ে গড়ে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার টিইইউএস কন্টেইনার খালাস হয়।

বর্তমানে প্রায় ৪২ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার জমেছে বন্দর ইয়ার্ডে। তবে এবার লকডাউনে কন্টেইনার জট হতে পারে এ বিষয়টি আগেই ধারণা করেছিল বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাই গত ১৬ জুলাই নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআরে একটি চিঠি পাঠানো হয়। যেখানে ৩৮ পণ্যের বদলে সব ধরণের পণ্যই বেসরকারি ডিপোতে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়।

এরই প্রেক্ষিতে রোববার এ ব্যাপারে অনুমতি দেয় এনবিআর। চিঠিতে তিনটি শর্তে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথমত, সব পণ্য বন্দর থেকে বের করার আগে স্ক্যানিং করে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, সব পণ্য কাস্টমস কর্মকর্তা ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তার উপস্থতিতিতে শতভাগ কায়িক পরীক্ষা (পুরো পণ্য চালান খুলে পরীক্ষা করা) করতে হবে। তৃতীয়ত, চিঠি অনুসারে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালাতে পারবে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও পোশাক কারখানার মালিক অঞ্জন শেখর দাশ বলেন, ‘আমাদেরকে অনেকটা বাধ্য করা হল। কিন্তু কারখানা বন্ধ থাকলে আমরা কাঁচামাল কোথায় নেব? আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটিতে। বেসরকারি ডিপোর চার্জ বেশি। বন্দর থেকে হলে খরচ ও সময় দুটোই বাঁচতো। এ টাকা কে দেবে? ওরা কি চার্জ কমাবে? তাছাড়া দীর্ঘসূত্রতায় পড়বো আমরা।’

ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ধরুন একই সাথে আমার তিনটি কন্টেইনার এলো বন্দরে। কর্তৃপক্ষ দুটি কন্টেইনার এক ডিপোতে এবং বাকি একটি কন্টেইনার আরেক ডিপোতে পাঠালো। এখন আমাকে দুই জায়গা থেকে কন্টেইনার সংগ্রহ করে কারখানায় আনতে হবে। তাতে তো হয়রানিও বেড়ে গেল।’

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো এসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, ‘এনবিআর যখন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, আমাদের পালন করতে হবে। এছাড়া বিকল্পও ছিল না। তবে আমরা কতটুকু পারবো জানি না। কারণ এবার রপ্তানিমুখী কন্টেইনারেরও জট আছে আমাদের।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ১৯টি ডিপোতে কন্টেইনার ধারণক্ষমতা প্রায় ৭৮ হাজার ৭০০ টিইইউএস। এখন কন্টেইনার আছে প্রায় ৫৩ হাজার টিইইউএস। খুব বেশি খালি নেই। যেখানে অন্য সময় ৬ হাজার টিইইউএস রপ্তানিমুখী কন্টেইনার থাকে, সেখানে এখন প্রায় ১৩ হাজার টিইইউএস কন্টেইনার আছে। তবে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে গিয়ে রপ্তানিমুখী কন্টেইনারে যাতে কোন ধরনের বিঘ্ন না ঘটে, সেটি থাকবে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘আমরা মনে করি এ সিদ্ধান্তে বন্দরে কন্টেইনার জট কমে আসবে। আমরা জাহাজ থেকে কন্টেইনার নামিয়ে তারিখ অনুসারে বেসরকারি ডিপোতে পাঠানোর কাজ শুরু করবো। তবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি যেন না হয়, সেই বিষয়টিও আমরা মাথায় রাখবো। চেষ্টা করবো প্রত্যেক আমদানিকারকের আনা সব কন্টেইনার একই ডিপোতে পাঠাতে। তবে দুই একটি ব্যতিক্রম হতে পারে।’

কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!