কোরআনসহ আটক যুবক কারাগারে, গভীর রাতে পূজা কমিটির নেতাদের থানায় ডাকল পুলিশ

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে পূজামণ্ডপে কোরআনসহ আটক যুবককে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তবে এই ঘটনায় পূজা কমিটির নেতাদের গভীর রাতে থাকায় ডাকা হয় প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে বিবৃতির জন্য।

এর আগে শনিবার (২১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে কোরআন শরীফসহ লোক আটক, ‘পাগল’ সাজিয়ে ছাড়লো পুলিশ’—শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের ১০ মিনিট পর সেই যুবককে ফের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।

দ্বিতীয় দফায় হাটহাজারী উপজেলার নাজিরহাট এলাকা থেকে ওই যুবককে আটক করে বলে জানায় পুলিশ। এদিকে দ্বিতীয় দফায় আটকের পর চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘চট্টগ্রামের পূজামণ্ডপে কোরআনসহ আটক যুবক নিয়ে ‘নাটক’, ছেড়ে দেওয়ার পর ফের ধরে আনল পুলিশ’—শিরোনামে আরও একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সংবাদ প্রকাশের পর গভীর রাতে সোমপাড়া পূজা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে হাটহাজারী থানায় ডাকে পুলিশ। প্রকাশিত সংবাদের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে দিতে তাদের চাপ দেওয়া হয়।

এদিকে আটক যুবকের নাম মো. শাহ আলম। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে। তবে তিনি নরসিংদী থেকে কি কারণে চট্টগ্রামের এই মণ্ডপে এসেছেন তা জানা যায়নি।

এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ওই যুবককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষার পর জানা যাবে পাগল নাকি সুস্থ। এরপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গভীর রাতে থানায় ডাকার বিষয়ে মির্জাপুর সোমপাড়া দুর্গা পূজা উদযাপন পরিষদ সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ নাথ বাবু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোরআন শরীফসহ আমরা পূজামণ্ডপ থেকে এক যুবককে আটক করি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে পুলিশের হাতে তাকে তুলে দিই। কিন্তু হাটহাজারী থানার এসআই জসিম তাকে মুহুর্তেই পাগল সাজিয়ে ছেড়ে দেন। এসআই জসিমের এমন আচরণ ও কৌশলের প্রতিবাদ জানিয়েছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘এরপর এই খবরটি চট্টগ্রাম প্রতিদিন প্রকাশ করার পরপরই ঘটনাস্থলে হাটহাজারী সার্কেলের এএসপি ও ওসি পরিদর্শনে আসেন। আমরা ছেড়ে দেওয়া যুবককে আটক করার জোর দাবি জানাই তখন। এরপরই জানতে পারি তাকে নাজিরহাট থেকে আবারও আটক করা হয়েছে।’

গোবিন্দ নাথ বাবু বলেন, ‘ওই যুবককে আটকের পর গভীর রাতে আমাকে এবং পূজা কমিটির সভাপতিতে জরুরিভাবে ডাকা হয় থানায়। আমরা থানায় গেলে ওসি এবং এএসপি সার্কেল আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত খবরটি মোবাইলে দেখান এবং এনিয়ে একটা বিবৃতি দিতে বলেন। এ সময় আমরা সরাসরি জানিয়ে দিই, গণমাধ্যমের কাজ গণমাধ্যম করেছে। এখানে মিথ্যা কিছুই নেই। বিবৃতির প্রশ্নই আসে না।’

তিনি বলেন, ‘কথার এক পর্যায়ে আমাদেরকে ওই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করবো কিনা জানতে চান পুলিশ কর্মকর্তারা। আমরা বলেছি, পূজামণ্ডপ থেকে ওই যুবককে আমরা আটক করে পুলিশকে দিয়েছি। কিন্তু পুলিশ স্পটেই তাকে পাগল সাজিয়ে পাঠিয়ে দেয়। পরে আবার পুলিশই আটক করে। এর মধ্যে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ওই যুবক কোথায় ছিল, কোথা থেকে আবার ধরা হয়েছে, তা আমরা চোখে দেখিনি। তাই পরে পুলিশ যেহেতু আটক করেছে, আমরা বাদি হবো কিভাবে?’

শনিবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে সাদা কাপড় পড়া এক লোককে দেখতে পায় পূজা কমিটির লোকজন। তার মুখে দাঁড়ি এবং হাতে একটা থলে ছিল। লোকজনের ভীড়ে সন্ধ্যার পর ওই লোক পূজামণ্ডপে ঢুকে পড়েন। তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় আটক করেন পূজা কমিটির নেতারা। এসময় তার হাতে থাকা থলের ভেতর থেকে একটি পবিত্র কোরআন শরীফসহ কয়েকটি ইসলাম ধর্মের বই উদ্ধার করে মণ্ডপে দায়িত্বরত পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু মণ্ডপটির আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা হাটহাজারী থানার এসআই জসিম লোকটিকে পাগল বলে ছেড়ে দেন। পরে দ্বিতীয় দফায় তাকে আবারও আটক করে পুলিশ।

বিএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!