কর্তাদের প্রশ্রয়ে মনসুরাবাদ পাসপোর্ট অফিসে ‘পুলিশ-দালালের’ জোট, সাধারণের হয়রানি

চট্টগ্রামের বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিসে হয়রানির শিকার হচ্ছে পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং করতে আসা গ্রাহকরা। গ্রাহকরা পাসপোর্ট অফিসের মূল গেইটে পা রাখতেই শুরু হয় দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবলদের হয়রানি। সেখান দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট গ্রাহকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরপর ধাপে ধাপে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে অন্তহীন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করতে আসা একাধিক ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, পাসপোর্ট অফিস এখন ‘দালালমুক্ত’ বললেও কথার সাথে কাজের কোনো মিল নেই। ঠিকই দালালচক্র ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ধাপে ধাপে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আমাদের কাগজপত্র সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও কাগজে ছোটখাটো ‘ভুলভ্রান্তি’ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা দিতে রাজি না হলে একদিনের কাজ ১০ দিনেও করে দিচ্ছে না। জরুরিভিত্তিতে পাসপোর্ট এর প্রয়োজন হলে তো কথাই নেই। ক্ষুধার্ত বাঘের হরিণ পাওয়ার মতো অবস্থা করে।

এর পাশাপাশি দালালদের দৌরাত্ম্য ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট হারে গুণতে হচ্ছে টাকা। টাকা না গুণলে পরতে পরতে ভেরিফিকেশন জটিলতায় আটকে যাচ্ছে পাসপোর্ট।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও আনসার সদস্য ও মূল গেইটে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল টিটুর কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকরা। পাসপোর্ট করতে আসা গ্রাহকরা সকল কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের মূল গেইটে প্রবেশ করতেই পুলিশ কনস্টেবল টিটুর ‘ব্যারিকেড’ পার হতে হয়। এরপর ‘আপনার কাগজপত্র দেখি’ বলে হাতে নিয়ে নেন গ্রাহকের সকল নথি। নথিতে নানা ত্রুটি রয়েছে বলে শুরুতেই ভড়কে দেন গ্রাহকদের। পরে ‘সহজে কাজ করিয়ে দেবো’ বলে ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ অহরহ এই পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে। এছাড়া গ্রাহকরা পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত ধাপে ধাপে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেও বলেও অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিদেশ যাওয়ার জন্য আমি জরুরিভিত্তিতে সব কাগজপত্র নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে আসছিলাম। পাসপোর্ট অফিসের মূল গেইট দিয়ে যাওয়ার সময় গেইটে থাকা দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল টিটু ডাক দেন। আমি তার কাছে গেলে সে আমার কাগজপত্রগুলো দেখার জন্য নিয়ে বলে— কাগজপত্রে অনেক ভুলভ্রান্তি আছে। একপর্যায়ে সে আমাকে সব কিছু ঠিকঠাক করে দেবে আর দ্রুত পাসপোর্ট পাইয়ে দেবে বলে দুই হাজার টাকা দাবি করেন। আমি টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় কাগজপত্র ঠিক করে আসতে বলেন। এরপর আমি কাগজপত্রগুলো নিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে যাই। পরে দেখি আমার দেওয়া তথ্যে কোনো ভুল নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘নাগরিক অধিকার নিয়ে যদি এইভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় তাহলে আমরা যাবো কোথায়? তারা মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলা করে। প্রত্যেক পদে পদে আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা ব্যবস্থা না নিলে এই ভোগান্তির কখনও দূর হবে না।’

এ বিষয়ে জানতে মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের পরিচালক আবু সাইদের মুঠোফোনে গত বুধবার থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোনো ধরনের সাড়া মেলেনি। মোবাইলে এসএমএস পাঠানোর পরও তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!