আতঙ্কে টেকনাফ, থেমে নেই ইয়াবা পাচার

শাহীন শাহ, টেকনাফ

কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে মাদক ও অস্ত্রধারীদের সাথে বন্দুকযুদ্ধ, আটক ও মামলা চলমান হলেও থেমে নেই ইয়াবার পাচার। ফলে আতঙ্ক ও উদ্বেগের মাঝে কাটছে টেকনাফবাসী। তবে সীমান্ত উপজেলার পুলিশ, র‌্যাব, ও বিজিবি বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর থেকে কঠোরতর অভিযানের কারণে প্রায় ৭০ পার্সেন্ট ইয়াবা ব্যবসায় কমে আসছে।

উল্লেখ্য, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আত্মসমর্পণ করেছেন। কিন্তু বন্ধ হয়নি ইয়াবার পাচার, বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা ব্যাবসায়ীর নির্মম মৃত্যু।

টেকনাফ থানা পুলিশের উদ্যোগে ইতোমধ্যে মাদক, জঙ্গি, সন্ত্রাসবিরোধী সভা সেমিনার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়েও কমিটি করার উদ্যোগ নিয়েছে টেকনাফ থানা পুলিশ। এরপরও আগের মতোই প্রতিনিয়ত আসছে ইয়াবা। তাই উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা কাটেনি এলাকাবাসীর। তাদের দাবি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একাংশ আত্মসমর্পণ করলেও এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। অনেক গডফাদার আছে যারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অথচ ইয়াবার তালিকায় এই প্রভাবশালী গ্রুপটিই সবার উপরে। তাদের থামানো না গেলে টেকনাফ ইয়াবা মুক্ত হবে না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকা অনুযায়ী, ওই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সাবেক এক সাংসদের নাম। তার পরিবারের ১২ জন সদস্য আত্মসমর্পণ করেছেন। এমনকি টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও টেকনাফ উপজেলার ভাইস-চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দিন, বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিনসহ ওই তালিকায় নাম থাকা বেশিরভাগ প্রভাবশালী রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এলাকাবাসীর দাবি তালিকায় নাম থাকলেও যারা গ্রেপ্তার হয়নি তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে ইয়াবা ব্যবসা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টেকনাফের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ইয়াবা ব্যবসা করে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার আশায় টেকনাফের বেশিরভাগ লোক এ ব্যবসায় নাম লেখায়। একমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেই এই সমস্যা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে বলে জানান তারা।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, আতœসমর্পণ ইয়াবা পাচারের বন্ধের শেষ বিষয় বা সমাধান নয়। ইয়াবা পাাচার বন্ধ করতে হলে সীমান্তে ও জলপথে নিñিদ্র টহল ও কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। অন্যথায় কখনো ইয়াবা পাচার বন্ধ হবেনা।

সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, বড় বড় ইয়াবা কারবারী গা ঢাকা দিলেও যাদের নূন্যতম আইন সম্পর্কে ধারণা না রাখেননা তারাই মূলত ইয়াবা পাচার করছে এখনো। তারা এখনো ইয়াবা পাচার অব্যাহত রেখেছে। সেক্ষেত্রে তাদের মুটিভেশনের প্রয়োজন রয়েছে।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, টেকনাফের কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ীকেই ছাড় দেয়া হবেনা। আগের তুলনায় টেকনাফে ৭০ শতাংশ চালান কমে গেছে। পর্যায়ক্রমে আরো কমে আসবে। তিনি জানান, যে কোন মূল্যে ইয়াবা পাচার নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।

এদিকে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে টেকনাফ থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪৯ মামলার বিপরীতে ২২৬ আসামির মধ্যে ১৭০ জনকে গেপ্তার করা হয়েছে। বিজিবি সূত্রমতে, মার্চ মাসে জব্দ করা হয়েছে ১১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৫৪ পিস ইয়াবা। ২০ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে। বন্দুকযুদ্ধে রোহিঙ্গা নারীসহ মারা গেছেন ৬ জন। এ ছাড়া ধরা পরেছে ফেনসিডিল, গাঁজা , আন্দামান গোল্ডসহ নানান ধরনের মাদক। ৫ এপ্রিল দুপুরের দিকে ১৯ হাজার ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে বিজিবি।

সর্বশেষ ৬ এপ্রিল টেকনাফের নয়াপড়া মোচনী শরণার্থী ক্যাম্পে পুলিশ অস্ত্র উদ্ধারে গেলে রোহিঙ্গাদের সাথে গুলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে তিন রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পুলিশের তিন সদস্যও। ঘটনাস্থল থেকে ৪টি এলজি ও ৭ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। নিহত রোহিঙ্গারা হলোÑ নয়াপাড়া মুচনী ক্যাম্পের বি-ব্লকের বাসিন্দা আমির হোসেনের ছেলে নুর আলম (২৩), একই ক্যা¤েপর এইচ-ব্লকের মো. ইউনুসের ছেলে মো. জুবায়ের (২০)ও ইমান হোসেনের ছেলে হামিদ উল্লাহ (২০)।

এডিটেড বাই শহিদ রাসেল

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!