ডেঙ্গুর শঙ্কা কাটেনি চট্টগ্রামে, ভীতিকর অবস্থা বিশ্বকলোনিতে

তিন বছরের রেকর্ড এবার ছাড়িয়ে গেছে আগেই। চট্টগ্রামে এ বছরেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। মারাও গেছেন বেশ কয়েকজন। ‘ডেঙ্গুর পিকটাইম’ সেপ্টেম্বর কাটিয়ে অক্টোবরে এসে প্রাদুর্ভাব খানিকটা কমলেও শঙ্কামুক্ত নয় চট্টগ্রাম নগর। এখনও প্রায় প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এডিস মশার প্রভাব-বিস্তার-উপসর্গ এ বছর সম্পূর্ণ আলাদা। ফলে নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও কবুল করছে— ডেঙ্গু পরিস্থিতি পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই পুরোপুরি আশঙ্কামুক্তও হওয়া যাচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘মাঝারি নিয়ন্ত্রণ’ হিসেবেই দেখছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গেল সপ্তাহে চট্টগ্রামে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল ৫৬ জন রোগী। চলতি সপ্তাহে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন আরও ১০ জন রোগী। তবে সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষের খাতাকলমে উপজেলা ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী নেই।

নগরীতে চলতি বছরের শুরু থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৯০৯ জন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে বেড়েছে প্রায় ১০০ জন রোগী। এই সংখ্যার মাঝে এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ মানুষ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে আতঙ্ক থেকে মুক্তি মেলেনি নগরবাসীর। বৃষ্টি কিংবা জ্বর সর্দি হলেই ডেঙ্গু আতঙ্ক জেঁকে বসছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার বিশ্ব কলোনি এলাকায় বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। একই এলাকায় ছয় মাসে শনাক্ত হয়েছে ২৮ জন রোগী। যথাসময়ে পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তীতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা। সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় প্রথম দিকের চেয়েও মৃত্যু বাড়ছে শেষ সময়ে। কেননা একদিকে ডেঙ্গুর সঠিক উপসর্গ না থাকায় ডাক্তার দেখিয়ে শনাক্ত করতেও সময় চলে যায় অনেকখানি। ফলে অধিকাংশ রোগীর ক্ষেত্রে একই সাথে অন্যান্য রোগবালাই বাসা বেঁধে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন প্রকোপ কমলেও মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হলে বাড়ে। এখন যারা আক্রান্ত হয়ে আসেন তারা খুব খারাপ অবস্থা নিয়ে আসেন। প্রথমদিকে যেমন ছিল, তার তুলনায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা এখন বেড়েছে। তার বড় কারণ হলো যে এটার তেমন উপসর্গ দেখা যায় না। কিন্তু বইপুস্তকে যেভাবে ডেঙ্গু লেখা আছে এটার সাথে এবারের ডেঙ্গুর ক্রাইটেরিয়া মেলে না। আর অনেক রোগীও জ্বর হলে তেমন গুরুত্ব দিতে চায় না। ফলে একইসাথে অন্য রোগ বাসা বেঁধে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কেউ কারো কথা শোনে না। আর ঈদের সময়েই ডেঙ্গুর প্রকোপটা বেড়েছে এবং ঢাকা থেকে পুরো বাংলাদেশ ছড়িয়েছে। তখন সরকার একটা অনুরোধ করেছিল— যে পরিবারের ডেঙ্গু হয়েছে তারা যেন ঢাকার বাইরে না যায়। কিন্তু কেউ শোনেনি যার ফলে পুরো বাংলাদেশ ছড়িয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ মোটামুটি কম এবং আগের চেয়েও কমে এসেছে। উপজেলাগুলোতে এখন ডেঙ্গু রোগী নেই। একবার কমবে আবার বাড়বে। একটু তো সময় লাগবে। প্রকোপের সময় সেপ্টেম্বর থাকলেও আগের চেয়ে কমেছে। তবে বিশ্ব কলোনি এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। আমি সিটি করপোরেশনকেও বলেছি যাতে ওই এলাকায় ক্রাশ প্রোগ্রাম করে।’

ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন ডেঙ্গুর পরিস্থিতি ভালো। অবস্থার উন্নতি হতে সময় লাগবে তো সময় দেবেন না?’

এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কীটতত্ত্ববিদ বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই জানিয়েছেন বাংলাদেশে সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। সেটা যে বরাবরই সত্যি তা পরিস্থিতি দেখিয়ে দিচ্ছে। আমাদের এখানকার সংশ্লিষ্ট কর্মব্যক্তিরা ঢাকার পরিস্থিতি দেখে যেভাবে হৈচৈ করেছিল (আমরা এলার্ট আছি, সচেতন আছি) সেভাবে কাজ করেনি। সচেতনতার স্বাক্ষর রাখার জন্য যত না প্রচার প্রচারণার দিকে জোর দিয়েছে কিন্তু করণীয় কাজটা সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে করেনি। এখনও মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়। তাছাড়া এডিস মশার লার্ভা ফুটে জন্মাবার সম্ভাবনা বৃষ্টিতে থাকে। ডেঙ্গু বা এডিস মশা জন্মাবার পরিস্থিতি যতক্ষণ আছে ততক্ষণ সচেতন থাকা লাগবে। তাছাড়া ঠিকই জনগণের আতঙ্ক আছে। সামান্য জ্বর হলেই বেশির ভাগ মানুষ ডেঙ্গুর আতঙ্কে ভোগে।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!