গাড়ির বাজারে হঠাৎ লালবাতি, আমদানি কমছে চট্টগ্রাম বন্দরেও

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমে যাচ্ছে বিস্ময়করভাবে। ফলে কমছে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে গাড়ি বিক্রি কমে গেছে আগের তুলনায়, তাই আমদানিও কমে গেছে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে শেড ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বেশি হওয়ায় আমদানি করা গাড়ির উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বের হচ্ছে মংলা বা অন্য বন্দর দিয়ে।

চলতি অর্থবছরসহ বিগত অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে গাড়ি আমদানিতে রাজস্ব আদায়ের হার কমেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গাড়ি আমদানির বিপরিতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৮১৫ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে গাড়ি আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক হাজার ৯৫৭ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা।

এদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরুতে গাড়ি আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় নিম্নমুখী। বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে কমছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায়।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের তথ্য মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১২ হাজার ৬২টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ব্রান্ড নিউ হাইব্রিড দুই হাজার ৯১০, রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিড ৮৪, ব্রান্ড নিউ নন হাইব্রিড এক হাজার ৮৯৯, রিকন্ডিশন্ড নন হাইব্রিড সাত হাজার ১৬৯টি। এসব গাড়ি আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৮১৫ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ১৬ হাজার ২১৯টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এরমধ্যে ব্রান্ড নিউ হাইব্রিড দুই হাজার ৬৩৫, রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিড ৮৭, ব্রান্ড নিউ নন হাইব্রিড এক হাজার ১৭, রিকন্ডিশন্ড নন হাইব্রিড ১২ হাজার ৪৮০টি। এসব গাড়ি আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৯৫৭ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট ১৭ হাজার ৫৪৯টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ব্রান্ড নিউ হাইব্রিড এক হাজার ৫৯৪, রিকন্ডিশন্ড হাইব্রিড নেই, ব্রান্ড নিউ নন হাইব্রিড নেই, রিকন্ডিশন্ড নন হাইব্রিড ১৫ হাজার ৯৫৩টি গাড়ি । এসব গাড়ি আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৬৪৯ দশমিক ৮২ কোটি টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে গাড়ি আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে এক হাজার ৮১৫ দশমিক ৬৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে গাড়ি আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল এক হাজার ৯৫৭ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। এক বছরে ব্যবধানে কমেছে ১৪২ কোটি টাকা।

চট্টগ্রামের গাড়ির বিভিন্ন শো-রুম ঘুরে দেখা গেছে, আমদানি নীতি অনুযায়ী এখন বাজারে ২০১৪ বা ১৫ মডেলের রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু বাজারে ২০১১ ও ২০১২ মডেলের গাড়িও বিক্রি হচ্ছে। ১ হাজার ৫০০ সিসির ২০১৩ মডেলের প্রিমিও গাড়ি ২৪ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে পরবর্তী মডেলগুলোর দাম বেশি। সর্বশেষ ২০১৮ মডেলের গাড়ি ৩৬ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব গাড়ির ক্ষেত্রেই সর্বশেষ মডেলের দাম বেশি। মডেলভেদে এক্সিও ১৬ থেকে ২২ লাখ টাকায়, ফিল্ডার ১৬ থেকে ২২ লাখ টাকায়, এলিয়ন ২২ থেকে ৩৪ লাখ টাকায়, প্রাডো ৮২ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকায় এবং নোয়া মাইক্রোবাস ২৩ থেকে ৩৬ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শো-রুম ও গাড়ির অভ্যন্তরীণ ফিচারভেদে দামের তারতম্য আছে।

ব্যবসায়ীরা অবশ্য বলছেন, জাপানে গাড়ির দাম সামান্য কমলেও ডলারের বিপরীতে টাকা দুর্বল ও ইয়েন শক্তিশালী হওয়ায় সে সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার ৫ বছরের পুরনো গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে অবচয়ের হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করা হয়েছে। এ কারণে গাড়িপ্রতি ১ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক বেশি দিতে হচ্ছে। এ দুই কারণেই গাড়ির দাম আগের অবস্থায় আছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমসে গাড়ি আমদানির কাজে নিয়োজিত সিএন্ডএফ এজেন্ট শাহরিয়ার শিপিংয়ের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ বাহার উদ্দিন বলেন, বিগত বছরে আমরা প্রায় অর্ধসহস্রাধিক গাড়ি ছাড় করানোর কাজ করেছি। কিন্তু পর্যায়ক্রমে তা কমে গেছে। এখন গাড়ির কাজ তেমন নেই।

চট্টগ্রামের গাড়ির আমদানিকারক মোহাম্মদ নবীর হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে গাড়ির দাম আগের মতোই আছে। ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে গাড়ির আমদানি মূল্য বেশি গুণতে হচ্ছে আমাদের। প্রতিযোগিতামূলক বাজারের কারণে অল্প লাভেই গাড়ি বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। এরপরও গাড়ি বিক্রি কমে গেছে আগের তুলনায়। তাই আমাদের আমদানিও কমে গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি কমেছে, তাই রাজস্ব আদায়ের হারও কমেছে। অনেক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম দিয়ে গাড়ি আমদানি করছেন না। তারা মংলা বা অন্য বন্দর দিয়ে গাড়ি রিলিজ করাচ্ছে। এটিও আমাদের রাজস্ব আদায় কমার আরেকটি কারণ।

তিনি বলেন, গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কাস্টমসে সেড ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ অন্য যে কোন কাস্টমস হাউস থেকে বেশি। তাই হয়ত ব্যবসায়ীরা গাড়ি অন্য বন্দরে নিয়ে যাচ্ছে। তবে এটাও সত্য যে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দর ব্যবহার করবেন না। কারণ অন্য বন্দর থেকে গাড়িগুলো আবার চট্টগ্রামে আনতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যাবে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!