চট্টগ্রামে এডিস তাড়াতে অস্ত্র হতে পারে হাতি মশা ও মশামাছ!

প্রয়োজন আরও গবেষণার, জরিপে দীর্ঘসূত্রতা

চট্টগ্রামে বিগত দুই বছর ধরে মশক জরিপ হয়নি। এ বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় মশক জরিপ করার। কিন্তু এটা সিদ্ধান্ত নেয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা থেকে জরিপ টিমের আসার কথা থাকলেও, এখনও আসা হয়নি তাদের। ফলে আটকে আছে জরিপ।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের পর আর মশক জরিপ হয়নি চট্টগ্রামে। ঢাকায় নিয়মিত জরিপ হলেও চট্টগ্রামে না হওয়ায় জানা নেই সর্বশেষ চিত্র। সিভিল সার্জন অফিস থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে মশক জরিপের জন্য দল পাঠানোর আবেদন করা হলেও এখনো দেখা মেলেনি টিমের। ঢাকার টিম না আসা, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের লোকবল সংকট এবং জরিপ বিশেষজ্ঞ না থাকায় মশক জরিপ বারবার পিছিয়ে পড়ছে।

নগরীর জীববৈচিত্র্যের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় অস্তিত্ব মিলেছে ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস খাদক মশার। এই মশা এডিসের লার্ভা খেয়ে ফেলে। যার নাম ‘টক্সোরিনসাইট’। এই মশা আবার ‘হাতি মশা’ নামেও পরিচিত। নগরীতে এই মশার অস্তিত্ব মিললেও জানা যায়নি এর ক্ষতিকর প্রভাব কিংবা বিস্তার বিষয়ে। গবেষণায় উঠে এসেছে এই মশার অস্তিত্ব এবং অবস্থান সম্পর্কে। গবেষকরা জানান, এই মশার অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও জানা যায়নি এর বিস্তৃতি, ক্ষতিকারক দিক বা প্রভাব বিষয়ে। তাই প্রয়োজন আরও গবেষণার।

সাধারণত টক্সোরিনসাইট বা হাতি মশা এডিস মশার লার্ভা খেয়ে ফেলে। যেহেতু ডেঙ্গু জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভা খায় সেক্ষেত্রে এর উপকারী কিংবা অপকারী দিক দুই-ই থাকতে পারে। এজন্য চাই সঠিক সমীক্ষা এবং আরও গবেষণা। এখনো পর্যন্ত কেবল অস্তিত্বের সন্ধানই পেয়েছেন গবেষকরা।

এদিকে নগরীর ‘জীববৈচিত্র্যের জরিপ ও সংরক্ষণ- ২০১৮’ শীর্ষক পাইলট প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও বায়োডাইভারসিটি রিসার্চ গ্রুপ অব বাংলাদেশ (বিআরজিবি) যৌথভাবে এ জরিপ চালায়। ৮নং শুলকবহর ওয়ার্ডে ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসব্যাপী এ গবেষণাধর্মী জরিপ চালানো হয়। গবেষণায় এডিস খাদক মশার পাশাপাশি ‘মসকুইটো ফিশ’ বা ‘মশামাছ’ নামে এক প্রজাতির মাছ পাওয়া গেছে, যেগুলো নালা-নর্দমায় বা দূষিত পানিতে জন্ম নেওয়া রোগ-জীবাণুবাহী মশা খেয়ে ফেলে।

বিআরজিবি’র প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. বদরুল আমিন ভূঁইয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, এই মশাগুলোর অস্তিত্ব আছে এই তথ্য আমাদের সার্ভেতে পেয়েছি এবং কোথায় পাওয়া যায় তাও জেনেছি। কিন্তু এটার উপরে আরও গবেষণা দরকার। এর সামগ্রিক চিত্রটা আমাদের গবেষণার মধ্য দিয়ে বের করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এ ব্যাপারে কিছু সুপারিশ করেছি। আশা করছি, সিটি করপোরেশন সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। মেয়র আগামী দুই বছরের মধ্যে একটা প্রজেক্ট নিয়ে এ গবেষণায় সহযোগিতার কথাও বলেছেন।

তিনি আরো জানান, এটা নিয়ে আরও অনেক দেশ গবেষণা করেছে। তবে সেটা বিক্ষিপ্ত। তাই গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কীটতত্ত্ব বিভাগে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন মাত্র পাঁচজন। এ অল্পসংখ্যক লোক দিয়ে মশক জরিপ চালানো সম্ভব নয় বলেই ঢাকার টিমের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বিআরজিবির জরিপে কেবল টক্সোরিনসাইট মশার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এই প্রজাতির মশা এডিস মশার লার্ভা খায়। তাই আপাতত এই মশাকে উপকারী মশা বলা যায়। তবে এই মশা নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। তাছাড়া ২০১৭ সালের পর কোনো জরিপ চালানো হয়নি। কোন জায়গায় এ মশার অস্তিত্ব বেশি তা জানার জন্য জরিপটি দ্রুত হওয়া দরকার।

সিআর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!