ফণীর প্রভাবে লাভই হলো বন্দরের!

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে তিন দিন চট্টগ্রাম বন্দরের অপারেশনাল কাজ বন্ধ থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে আপাতদৃষ্টে বন্দরের কোন আর্থিক ক্ষতি হয়নি। উল্টো লাভ হয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের। বরং বন্দরে কন্টেইনার জট, জাহাজ জট বন্দরের আয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে আমদানিকারক কিংবা ব্যবসায়ীরা বলছেন তিন দিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে তাদের গুণতে হবে বাড়তি মাসুল।

জানা গেছে, ঘুর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দর অচল ছিলো তিনদিন। এই তিন দিনে কোন কন্টেইনার ওঠানামা করেনি। পণ্যও খালাস হয়নি। তিন দিনে তৈরি হয়েছে জাহাজ ও কন্টেইনার জট। কাস্টমস, শিপিং এজেন্সি, আমদানি-রপ্তানিকারক, সিএন্ডএফ কোম্পানি, পরিবহন সেক্টরসহ সব প্রতিষ্ঠানকে গুণতে হবে আর্থিক ক্ষতি। তবে আর্থিক অংকে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা নির্ণয় করা কঠিন বলে জানেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, তিনদিনের এই অচলাবস্থার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে অন্তত ১৫ দিন।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক ( পরিবহন ) এনামুল করিম বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে যে জট সৃষ্টি হয়েছে সেটি পুরোপুরি সচল হতে অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে। তিনদিন বন্দর অপারেশনাল কাজ বন্ধ থাকায় আপাতদৃষ্টে চট্টগ্রাম বন্দর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ধারণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে বন্দর আর্থিকভাবে লাভবান হবে। কারণ টানা তিন বন্দরের অপারেশনাল কাজ বন্ধ থাকায় কন্টেইনারগুলো বন্দরে পড়ে ছিলো। সেই সাথে জাহাজগুলোও বন্দরে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে বেশি অবস্থান করছে। সে হিসেবে বাড়তি সময় অবস্থানের কারণে বিভিন্ন খাতে বন্দরকে বেশি চার্জ পরিশোধ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে ২১টি জাহাজ জেটিতে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

বন্দর সূত্র জানায়, বন্দরে চারদিনের বেশি কন্টেইনার অবস্থান করলে ২০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের জন্য ৬ ডলার এবং ৪০ ফুট সাইজের কন্টেইনারের জন্য ১২ ডলার অতিরিক্ত চার্জ পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া বন্দরে জাহাজ অবস্থানের জন্যও রয়েছে আলাদা মাসুল।

চট্টগ্রাম বন্দরের একে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার ২২০ কন্টেইনার হ্যান্ডেল করা হয়। তিনদিন বন্ধ থাকায় প্রায় ২৫ হাজার কন্টোইনার হ্যান্ডেল হয়নি । প্রতিদিন গড়ে ১৫ জাহাজ পণ্য জাহাজীকরণ কিংবা খালাসের কাজ সম্পন্ন হয়। গত তিনদিনে অন্তত ৪৫ জাহাজের পণ্য খালাস করা যায়নি।

চট্টগ্রাম বন্দরের উপ সংরক্ষক ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম জানান, ফণীর প্রভাবে যে তিনশ লাইটারেজ জাহাজ সদরঘাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত জায়গায় নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো সেগুলো বন্দর এলাকায় আনা হয়েছে। এরমধ্যে কিছু জাহাজ পণ্য বোঝাইয়ের কাজ করছে। কিছু জাহাজ রিভার মাউথে রাখা হয়েছে। বহির্নোঙ্গরে পাঠিয়ে দেওয়া ২১ টি বড় জাহাজকে পুনরায় জেটিতে আনা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘বন্দরের জাহাজ ও কন্টেইনার জট কমিয়ে আনতে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি দিনে অন্তত আরো দুই জাহাজের পণ্য খালাস করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবে বন্দর। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ পনের দিনের মধ্যে জট সারাতে কাজ করছে বন্দর।

ওমর ফারুক বলেন,বর্তমানে বন্দরের বহির্নোঙ্গরে ৯৭ বড় জাহাজ অবস্থান করছে। এরমধ্যে ৩৪ জাহাজ কাজ করছে। চারটি বাল্ক ভ্যাসেল এং ২০ কন্টেই ভ্যাসেল বার্থিং করার অপেক্ষায় আছে।

আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ওয়াশিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক সরওয়ার আলম খান বলেন, রমজানের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বন্দরে ৩ দিন পণ্য উঠানামা বন্ধ ছিলো। আমদানিকৃত অনেক ভোগ্যপণ্য খালাস হতে সময়ক্ষেপণ হবে। এতে করে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!