৯ মাস পর স্কাইপে বৈঠকে তারেক রহমান, চট্টগ্রাম বিএনপির ভাগ্য ঝুলছে লন্ডনে

প্রায় নয় মাস পর চট্টগ্রাম নগর বিএনপির নেতাদের সাথে স্কাইপে সংলাপে বসছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় রাজধানী ঢাকার গুলশানে দলীয় চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এর আগে ২০ জানুয়ারি সর্বশেষ চট্টগ্রাম নগর নেতাদের সাথে তারেক রহমান স্কাইপে সংলাপ করেন।

বছরের এই দ্বিতীয় স্কাইপে সংলাপে দলের মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশিদ, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর ছাড়াও নগর কমিটির সকল সহ-সভাপতি, যুগ্ম ও সহ-সম্পাদক, এবং থানা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

তবে নগর বিএনপির বর্তমান কমিটি সবগুলো থানা কমিটি গঠন করতে না পারায় ডবলমুরিং, আকবরশাহ ও কোতোয়ালী ছাড়া অন্য কোন থানা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ে কেউ উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তাদেরকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব পরিচয়েই উপস্থিত থাকতে হবে।

কারণ একমাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে নির্দেশনা দিয়ে ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে তিন সদস্যের চট্টগ্রাম নগর কমিটি ঘোষণা করেছিল দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। এক মাসের পরিবর্তে এগারো মাস সময় নিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ১৫১ সদস্যের স্থলে ২৭৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। নিজেদের ৪ বছর দুই মাস সময়ে থানা কমিটিগুলো তারা রেখে দিয়েছে সুপার ফাইভের নেতৃত্বে।

আবার কোনো কোনো থানায় আছে মাত্র তিনজনের কমিটি। খুলশী থানার কমিটিতে হাতই দিতে পারেননি শাহাদাত-বক্কর।

জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত স্কাইপে সংলাপের দ্বিতীয় সেশনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের তোপের মুখে পড়েন চট্টগ্রাম নগর নেতারা। সেই বৈঠকে শাহাদাত-বক্করসহ উপস্থিত ছিলেন ৬ নেতা। সংলাপে তারেক রহমান নগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। নেতারা চসিক নির্বাচন পর্যন্ত সময় চাইলে তারেক রহমান নির্বাচনের পরপরই নগর কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েও যায়। আহ্বায়ক কমিটির সম্ভাব্য আহ্বায়ক, সদস্য সচিব হিসেবে দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে শোনা যায় বেশ কয়েকজন নেতার নামও।

গত ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচনে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত ছিল। অব্যাহতভাবে করোনার আঘাত বাড়তে থাকায় ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। নির্বাচনও স্থগিত করা হয়। ৫ আগস্ট চসিকের মেয়াদ শেষ হলে ৬ মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। প্রশাসক ইতোমধ্যে দুই মাস অতিক্রম করেছেন। সেই হিসেবে নতুন বছরের শুরু দিকে চসিক নির্বাচনে ভোট গ্রহণ হতে পারে।

চসিক নির্বাচনের জন্য নগর বিএনপির কমিটি গঠন প্রক্রিয়া থেমে থাকলেও নগর নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে লড়ে যাচ্ছেন ডা. শাহাদাত হোসেন। কারণ দল পরিচালনায় তার সফলতা-ব্যর্থতা মূল্যায়ন করেই গত স্কাইপে সংলাপে নগর কমিটির বর্ধিত সভা, থানা কমিটি গঠন, ওয়ার্ড কমিটি গঠন, ছাত্রদলসহ দলের সহযোগী সংগঠনগুলো বেহাল দশা নিয়ে একের পর এক তারেক রহমানের প্রশ্নের মূখে নীরব থাকতে হয়েছে ডা. শাহাদাতকে। ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করার নির্দেশনা এলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের জন্য তা থমকে যায়। তবে নির্বাচনের জন্য দল গোছানো আর সময় নষ্ট করতে তারেক রহমান রাজি নয় বলে জানান একাধিক নেতা।

চসিক নির্বাচনে দলের প্রার্থী নিয়ে একাধিক নেতা জানান, চসিক নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে এরশাদ উল্লাহকে বিএনপি ঠিক করে রেখেছিল। কিন্তু এরশাদ উল্লাহ নগর রাজনীতিতে যুক্ত হলে মোরশেদ খান আবার নগর কমিটি নিয়ে যদি সক্রিয় হন তখন হিসেবেনিকেশ উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারতো। তাই নেতারা ‘নতুন ঝামেলায়’ না গিয়ে প্রার্থী হিসেবে ডা. শাহাদাত হোসেনকেই চালিয়ে নিয়েছেন।

চসিক নির্বাচনে প্রার্থীতা পেতে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার কয়েকদিন আগেই ডা. শাহাদাত হোসেন ঢাকায় গিয়ে সিনিয়র নেতাদের দ্বারস্থ হন। তাদেরকে দিয়ে ম্যানেজ করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও।

ঠিক একই কায়দায় এবারের স্কাইপে সংলাপের আগের রাতে সব নেতা ঢাকা গেলেও ডা. শাহাদাত হোসেন আগেই চলে যান বলে জানান নগর নেতারা।

বুধবার থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ডা. শাহাদাতের ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোনই বন্ধ পাওয়া যায়। তাই নগর নেতাদের ধারনা, তিনি কোনো অনিশ্চয়তা ভুগছেন। তা কাটাতে আগের মতো লবিং করছেন। তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

দলের এক নেতা বলেন, ‘তিনি দৌঁড়াচ্ছেন, দেখা যাক কী হয়। দল যে ধরণের সিদ্ধান্ত নিবে রেজাল্টও তা আসবে। জাম গাছ রোপন করেতো আর আম গাছের ফলন পাওয়া যাবে না। আর স্কাইপে সংলাপের এজেন্ডা এখনো আমরা জানিনা। নগর কমিটি নিয়েতো আলোচনা অবশ্যই হবে। এমন অগোছালোভাবে দলতো চলতে পারে না।’

দলের এক প্রবীণ নেতা জানান, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব রাতদিন পরিশ্রম করছেন সারা দেশের সংগঠন গোছাতে। চট্টগ্রাম নগর কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটিতো এপ্রিলেই হতো। কিন্তু করোনায় চসিক নির্বাচনের মতো আমাদের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও থমকে গেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব ডেকেছেন। কী সিদ্ধান্ত তিনি দেন তাও আপনারা জানবেন।’

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে বিএনপির নগর ছাড়াও আরও যে দুটি ইউনিট উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা রয়েছে সেগুলোর অবস্থাও করুণ। উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন কারাগারে, সদস্য সচিব জীবিত নেই। দক্ষিণ জেলা গোছাতে নগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক ও মোস্তাক আহমদ খানকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়েছে এক বছর আগে।

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন ও করোনায় দক্ষিণ জেলার থানা কমিটি গঠনের গতিও কমে গেলেও কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। হাই কমান্ডের গ্রীন সিগন্যাল পেলে এ কমিটিও ঘোষণা করা হবে বলে জানান বিএনপি নেতারা।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!