আজব ‘ভুলে’ এক মামলায় গ্রেপ্তার আরেক মামলার আসামি

ঘটনা জেনে তখনই হাতকড়া খুলে দিতে বললেন আদালত

এক মামলার নথিতে ঢুকে গেল আরেক মামলার নথি। প্রথম মামলায় ওয়ারেন্ট ইস্যু হল আরেক মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে। একসময় কথিত ওই আসামিদের গ্রেপ্তারও করা হল। কিন্তু পুলিশ যখন তাদের আদালতে হাজির করলো, এমন গুরুতর ভুলের বিষয়টি আদালতের নজরে আসে। আদালত তখনই কথিত ওই আসামিদের মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ওয়ারেন্ট বাতিলের আদেশও দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ বিচারক মো. মশিউর রহমান খানের আদালতের নজরে আসার পর চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল-১ চট্টগ্রামে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ভুক্তভোগী এক নারীর দায়ের করা মামলার নথিতে ভিন্ন একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন যুক্ত হয়ে যায়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ওই নারীর করা মামলায় ভিন্ন একটি মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে আনোয়ারা থানা তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে আদালত তাদের মুক্তি দিয়ে ওয়ারেন্ট বাতিলের আদেশ দেন।

বিবাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট হামিদা চৌধুরী লুনা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, গত ১৪ জুলাই আনোয়ারা বৈরাগ ইউনিয়নে সাইমা সুলতানা সাকি নামের এক নারী যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে তার স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, দেবর ও ননদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত বিষয়টি তদন্ত করে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আনোয়ারার সমবায় কর্মকর্তা নির্দেশ দেন। আনোয়ারা থানা সমবায় কর্মকর্তার পদটি শূন্য থাকা ওই দিন এই অভিযোগের প্রতিবেদন আদালতে জমা হয়নি। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে ওই দিন আরেকটি প্রতিবেদন আদালতে জমা হয়। যার স্মারক নম্বর ১৯২/২০২০। আর ওই মামলার নম্বরও ছিল ১৯২/২০।

বৃহস্পতিবার নথি পর্যালোচনা করলে আদালতে ভুলটি ধরা পড়ে। আদালত সাথে সাথে অভিযুক্ত তিনজনের হাতকড়া খোলার আদেশ দেন এবং অপর দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জারি করা ওয়ারেন্ট আদেশ বাতিল করেন।

অভিযোগকারী সাইমা সুলতানা সাকির শ্বশুর জাকের হোসেন, শ্বাশুড়ি খুরশিদা বেগম ও দেবর মো. মোরশেদকে পরোয়ানা মূলে গ্রেপ্তার করেছিল আনোয়ারা থানা। বুধবার (৭ অক্টোবর) তাদেরকে গ্রেপ্তার করে থানা হাজতে রাখা হয়। সায়মা সুলতানার স্বামী হোসেন মো. শহীদ প্রবাসে এবং ননদ শিরিন আক্তার কলি স্বামীর বাড়িতে থাকায় গ্রেপ্তার হননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দিদারুল ইসলাম বলেন, আমাদের হাতে আদালতের ইস্যু করা ওয়ারেন্ট ছিল। গ্রেপ্তার না করে আমাদের উপায় ছিল না। আমরা আদালতের আদেশ পালন করে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করেছি। আদালত তাদের ওয়ারেন্ট বাতিল করেছেন।

ওয়ারেন্ট বাতিলের আদেশে আদালত উল্লেখ করেছেন, ১১৫/২০ মামলার স্মারক নম্বর ১৯২/২০। আর সাইমা সুলতানা সাকির করা মামলাটির নম্বর ১৯২/২০। সাইমা সুলতানা সাকির করা মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন এখনও জমা হয়নি। এতে আদালত গত ২৯ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে করা ওয়ারেন্ট আদেশ বাতিল করেন এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির আদেশ দেন।

ভুক্তভোগী জাকের হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বুধবার রাতে আনোয়ারা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে রাতভর থানায় রাখে। মামলায় আমার ১৩ বছরের ছেলে মোরশেদকে ১৮ বছর দেখিয়ে আসামি করা হয়েছে। সে এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট হামিদা চৌধুরী লুনা আরও জানান, সাইমা সুলতানা জানতেন এই মামলার তদন্তই হয়নি এখনও। কিন্তু তিনি ওয়ারেন্ট ইস্যুর তারিখে আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং থানা থেকে পুলিশ নিয়ে গিয়ে ভুক্তভোগীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করিয়েছেন। মামলার সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে বাদি ও বিবাদী উভয়পক্ষকে স্বচ্ছ থাকা উচিত।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!