হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছেড়েছে

হালদা নদীতে কার্প জাতীয় মা-মাছ ডিম ছেড়েছে 1আজিজুল ইসলাম, হাটহাজারী : দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ডিম সংগ্রহকারীদের হতাশ করে ডিম ছাড়ল কার্প জাতীয় (রুই, কাতাল, মৃগেল ও কালিবাইশ) মা-মাছ। অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করে গত কয়েকদিন এলাকায় বৃষ্টিপাত মেঘের গর্জন ও প্রবল বর্ষনের ফলে নদীতে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সৃষ্ট স্রোতে গতকাল শুক্রবার (২১ এপ্রিল) রাত ৮টা নমুনা ডিম ছাড়ার পর রাত ১টা দিকে পুরোপরি ডিম ছাড়ে মা-মাছেরা ডিম আহরণ কারীরা ডিম সংগ্রহ করে। ডিম সংগ্রহের পরিমাণ কম হওয়ার কারণে ডিম সংগ্রহকারীদের মাঝে হতাশার চিত্র পরিলক্ষিত হয়।
ডিম ছাড়ার স্থান সমূহ পরিদর্শন করে দেখা যায়, গতকাল শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় তিন শতাদিক ডিম সংহকারীরা জেলে ১০৫-১২০ নৌকা ও জাল নিয়ে হালদার হাটহাজারী ও রাউজানের দুই অংশের নাপিতের ঘোনা এলাকায় প্রথমে মা মাছের ডিম দেওয়ার খবর পেযে ডিম সংগ্রহকারীরা নেমে পড়ে এছাড়া নয়াহাট, অংকুরী ঘোনা, কাগতিয়ার টেক, রামদাশ হাট, আজিমার ঘাট, আমতোয়া, বাড়ি ঘোনা, নাফিতের ঘাট, হতে মদুনাঘাট পর্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন স্পটে ডিম আহরণ করেছে। ডিম আহরণের পরিমাণ আণুমানিক ১ হাজার ৭০০ শত কেজি মত। তবে এর মধ্য থেকে ২৮-৩০ কেজি রেনু পাওয়া যাবে বলে জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপাক হালদা বিশেষজ্ঞ ড.মনজুরূল কিবরীয়া ।

জানা গেছে, হালদা নদীর গড়দুয়ারা, রামদাশ হাট, নাফিতের ঘাট, কাগতিয়ার বাগ, খলিফার ঘোনা, বারিয়ে ঘোনা, এলাকায় ডিম সংহকারীরা বেশী ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছে। এ সময় প্রতিটি নৌকায় গড়ে অর্ধেক থেকে পুরো বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করলেও নদীতে ডিম ছাড়ার পরিমাণ কম হওয়ায় অনেকেই খালি হাতে তাদের পল্লীতে ফিরে যেতে হয়েছে। অথচ স্বাধীনতা পরবর্তী বছরগুলোতে এক একটি নৌকায় দশ থেকে পনের বালতি উপর ডিম সংগ্রহ করেছিল ডিম আহরণকারীরা। এতে করে ডিম সংগ্রহকারী ডিম আহরণকারীদের পল্লীতে খুশির আমেজের পরিবর্তে অনেকের মাঝে দেখা গেছে হতাশার চিত্র।
গত বছরের সবচেয়ে বেশি ডিম সংগ্রহকারী মো: কামাল উদ্দিন সওদাগর জানান, এ বছর হালদায় নদী থেকে তেমন বেশি মা-মাছের দেওয়া ডিম সংগ্রহ করতে পারেনি। যেখানে আমি গত বছর প্রতিটি নৌকায় গড়ে প্রায় ২-৩ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করছি। তবে এবার যতটুকু ডিম সংগ্রহ করেছি তা অন্যান্য বারের ১ অংশও নয়। এদিকে নদীতে মা-মাছ ডিম ছাড়ার পর থেকে কৃত্রিম রেনু পোনা উৎপাদনকারী ও বিক্রেতারা তৎপরতা চালাচ্ছে। এতে করে প্রকৃত ডিম সংগ্রহকারীরা আতংকে ভুগছে।

এদিকে বিগত ও বর্তমান সময়ে হালদা নদীতে নির্বিচারে মা-মাছ নিধন, হালদার বাঁক কাটা, ডিম ছাড়ার পরিবেশ নষ্ট, রাবার ড্যাম ও এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য হালদা নদীতে পতিত না হত তা হলে আরো অধিক পরিমাণে ডিম ছাড়ত মা-মাছ বলে মনে করেন হালদা নদী গবেষকরা ।

মৎস অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর মা-মাছেরা বিশেষ করে গড়দুয়ারা নায়াহাট এলাকায় থেকে আজিমের ঘাট পর্যন্ত ডিম ছেড়েছে। ম-মাছ ডিম ছাড়ার পর নাদীতে ভাটাঁ হওয়ায় নদীর নিচের দিকে সমস্ত হালদা নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি নৌকায় আধা থেকে পুরো বালতি পর্যন্ত প্রতি নৌকায় কম বেশি ডিম সংগ্রহ করেছে ডিম সংগ্রহকারীরা। সেই হিসাবে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহের পরিমান ১০০-১১০ বালতি বা ১ হাজার ৭০০ কেজি পর্যন্ত। আর এই সংগৃহীত নিষিক্ত ডিম থেকে রেনু উৎপাদন হবে প্রায় ২৮-৩০ কেজি। আর ওই উৎপাদিত রেনুর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৭০-৭৫ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক মনজুরূল কিবরিয়া সাথে এই বিষয়ে আলাপকালে তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, অতীত ঐতিহ্যকে ধারণ করে হালদায় প্রবল বর্ষন ও মেঘের গর্জনে স্বাভাবিক অবস্থায় ডিম ছেড়েছে মা-মাছ। নদীতে ডিম সংগ্রহকারীরাও প্রস্তুতি ছিল। তবে খুর স্বল্প পরিমাণেও বলা যায় না ডিম সংগ্রহের পরিমাণ। এতে করে মৎস্যজীবিদের পারিবারিক ও আর্থ-সামাজিক ভাবে তাদের মাঝে যে বিপর্যয় নেমে আসবে তা কিছুটা দূরবিত হতে অনেক সময় লাগবে। তবে ফটিকছড়ি এলাকায় নির্মিত রাবার ড্র্যাম, অধিক পরিমাণে মা-মাছ নিধন, হালদার বাঁক কাটা, ডিম ছাড়ার পরিবেশ নষ্ট ও এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য হালদা নদীতে পতিত হওয়ায় এমন প্রতিকুল অবস্থার কারণে মা-মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ কম বলে তিনি মনে করেন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে হাটহাজারী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকার হালদার নদীর হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার বিশ কিলোমিটার অংশে মা মাছ শিকার করতে না পারে তার জন্য মৎস অধিদপ্তর পাহারা বসিয়েছে ।

এছাড়া হাটহাজারী উপজেলার গড়দুয়ারা ও মদুনাঘাট সাহামাদারী, মাছুয়াগোন এলাকায় হ্যাচারী প্রস্তুত রেখেছে মৎস অধিদপ্তর যাথে ডিম আহরণকারীরা হ্যাচারীতে সহজে ডিম ফুটাতে পারে ।
তিনি আরো বলেন, এবার মৎস্য দস্যুরা নির্বিচারে মা-মাছ নিধন করতে পারেনি। তবে মা-মাছ যাতে নিরাপদে ফিরে যেতে পারে এবং কেউ যাতে মা-মাছ শিকার করতে না পারে সে জন্য আমাদের অভিযান তথা পুলিশি টহল অব্যাহত ছিল ও থাকবে বলে তিনি জানান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!