সুজনের ‘ক্যারাভান শো’র বহর জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীতে

চকবাজার থেকে রাহাত্তারপুল থমকে ছিল যানজটে

সরু সড়ক। বিপরীতমুখী দুটি গাড়ি একসঙ্গে হলেই থমকে দাঁড়াতে হয়। রাস্তাটির দুই ধারে শত শত দোকানপাট। এমন এক সড়কের নাম কে বি আমান রোড। চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজারের ফুলতলা থেকে রাহাত্তারপুল মোড়ে গিয়ে মিলেছে এ সড়কটি।

বুধবার (১৪ অক্টোবর) নাগরিক সেবা নিশ্চিতের নামে এ সড়কে ২৫ থেকে ৩০টি মোটরসাইকেল নিয়ে শোভাযাত্রা করতে গেলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) প্রশাসক। সুজন যেটুকু সময় বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা নিয়ে ওই এলাকায় অবস্থান করেছেন, তার পুরো সময় ধরে থমকে ছিল গোটা ৩-৪ কিলোমিটার সড়ক। নাগরিক দুর্ভোগের হালচাল দেখতে গিয়ে প্রশাসক নিজেই হয়ে গেলেন দুর্ভোগের কারণ।

‘নগরসেবা ক্যারাভান শো’র নামে চসিক প্রশাসকের এই কর্মসূচি গোটা চট্টগ্রাম জুড়ে সৃষ্টি করেছে আলোচনা-সমালোচনার। নাগরিকদের অনেকেই এমন লোকদেখানো কাজে বিরক্তি প্রকাশ করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

সুজনের ‘ক্যারাভান শো’র বহর জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীতে 1

বাকলিয়া এলাকার অনেক বাসিন্দা অভিযোগের সুরে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘জনগণের সেবক হয়ে এমন লোকদেখানো কর্মসূচি থেকে কী লাভ হচ্ছে জনগণের?’

প্রশাসক সুজন যখন ওই রাস্তার ওপর মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বাকলিয়া পুলিশবিট এলাকার ৫৫ বছরের অসুস্থ ব্যক্তি সুরৎ আলী যাচ্ছিলেন ডাক্তারের কাছে। ঘণ্টাখানেক এক জায়গাতে আটকে থাকার পর ক্ষোভের সুরে তিনি বলেন, ‘আলার ভাইয়োর, এতুগ্গুন গাড়ি লই আইয়ুন পরে না? আষ্ট-দশজন আই হাম এগিন চাইয়েরে গেলি ন অয়?’ (শালার, এতগুলো গাড়ি আসতে হয়? ৮-১০ জন এসে কাজগুলো দেখে গেলে হয় না?)

চলতি বছরের ৬ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়ার পর নগরীর উন্নয়ন ও সংস্কার কাজের নানা অনিয়ম ও চলাচল অনুপযোগী রাস্তাঘাট দেখাশোনার জন্য প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন ‘নগরসেবা ক্যারাভ্যান শো’ নামে একটি কার্যক্রম হাতে নেন। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তাকে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে সেবার উদ্দেশ্যে যেতে দেখা যায়।

সুজনের ‘ক্যারাভান শো’র বহর জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীতে 2

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৪ অক্টোবর) নগরীর কে বি আমান আলী রোডে আসেন সুজন। এ সময় সরু সড়কটিতে ২৫-৩০টি মোটরসাইকেল এসে সৃষ্টি করে যানজট। যে যানজট মুহূর্তেই ছড়িয়ে যায় চকবাজার থেকে রাহাত্তারপুল পর্যন্ত। আবার শোডাউনে আসা মোটরসাইকেলগুলোর হর্নের কারণে এলাকার মানুষ ও যাত্রীদের পড়তে হয় অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে। এ সময় সাথে ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশনবিহীন কয়েকটি সিএনজি অটোরিকশাও।

চকবাজারের ফুলতলাতে থাকেন রমজান আলী। গত তিন বছর ধরেই ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন কে বি আমান আলী রোডে। তিনি বলেন, ‘রাস্তাটির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অনেকদিন ধরে কষ্ট পাচ্ছি আমরা। রাস্তার কার্পেটিংও উঠে গেছে দুই বছর আগে। সুজন ভাই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে আসবে শুনে খুশি হয়েছিলাম। তিনি কাজের মানুষ, তাৎক্ষণিক কাজের নির্দেশও দিয়েছেন। কিন্তু তিনি এত বেশি গাড়িঘোড়া নিয়ে এসে শোডাউন করে কী বোঝাতে চাইলেন বুঝলাম না। কয়েকজন এসে সমস্যার সমাধান করে দিলে মনে হয় ব্যাপারটা সুন্দর হতো। তার সফরসঙ্গীদের গাড়ির জন্য আজ খুব যানজট লেগেছে।’

তবে সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সুজন। এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে সড়কের ছোট গর্তগুলোকে ভরাট করে সড়কটি গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করে দেন চসিকের কর্মীরা। চসিক প্রশাসক সড়কটি স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্যও নির্দেশ দেন।

বিশ্বজিত/এফএমও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!