সিএমপি ঘুরে আসা সেই সন্ত্রাসী পুলিশের হাতে ধরা চাঁদাবাজির দায়ে

রীতিমতো ‘অতিথি’র বেশে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সাথে সিএমপি সদর দপ্তর ঘুরে আসার কয়েক ঘন্টার মধ্যে ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন পূর্ব বাকলিয়া এলাকার আলোচিত সন্ত্রাসী মো. সোলাইমান।

সোমবার (২৭ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রামে পার্কভিউ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোলাইমানকে গ্রেপ্তার করে সিএমপির বাকলিয়া থানা পুলিশ।

সোলাইমানকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় সোলাইমানকে নগরীর একটি ক্লিনিক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

এনামুল হক মানিক নামে একজনের দায়ের করা মামলায় সোলাইমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। এর আগে ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর এনামুল হক মানিককে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন সোলাইমান। ওই মামলায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে দাবি করে গত ২৪ জুলাই সন্ধ্যায় মামলার বাদি মানিকের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন এনামুল হক মানিক। তিনি নগরীর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

গত রোববার (২৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপির) সদর দপ্তরে এলএইডি লাইট স্থাপন কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমানসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। পুলিশের এই অনুষ্ঠানে হত্যা ও অস্ত্রমামলাসহ বহু মামলার আসামি সোলাইমানকে সঙ্গে করে নিয়ে যান সিটি মেয়র আ জ ম নাছির। বাকলিয়া এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দেওয়া সোলাইমান স্থানীয় রাজনীতিতে আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

রোববার সিএমপির ওই অনুষ্ঠানে কখনও মেয়রের পাশে, কখনও সিএমপি কমিশনারের পাশে, আবার কখনও নগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশে চিহ্নিত এই সন্ত্রাসীকে দেখা গেছে ফেসবুকে শেয়ার করা বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে।

বালু ব্যবসায়ী সোলাইমানের বিরুদ্ধে বাকলিয়া থানায় মাহবুব হত্যা মামলা, কোস্টগার্ডের হাতে চারটি অস্ত্র ও গুলিসহ হাতেনাতে আটকের মামলা, বাকলিয়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক মানিককে হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর লেখালেখির অভিযোগে কিছুদিন আগে সোলাইমানের ছোট ভাই এনামুলকেও গ্রেপ্তার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ।

হত্যা ও অস্ত্র মামলার একজন আসামি কিভাবে সিএমপি সদরদপ্তরে এই ধরনের একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিল— এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিএমপির মুখপাত্র এডিসি মির্জা সায়েম জানিয়েছেন, ‘অনুষ্ঠানে সিএমপি কাউকে দাওয়াত করেনি। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকেই বাতিগুলো বসানো হয়েছে। এটির উদ্বোধনে সিএমপি কমিশনারসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে সেখানে আর কে আসবে না আসবে সে বিষয়টা সিএমপির দায়িত্বের মধ্যে ছিল না।’

সিএমপি সদরে একজন দাগি আসামির এমন উপস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ব্যাপক সমালোচনার সূত্রপাত হয়। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন সোলাইমান।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!