সাতকানিয়ায় দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জামশেদ আবার ধরা, সহযোগীদের খুঁজছে পুলিশ

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জামশেদকে নলুয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। পুলিশ এখন তার সহযোগীদের খুঁজছে।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) রাত ১১ টার দিকে নলুয়া ইউনিয়নের হাঙ্গরমুখ বাজার এলাকা থেকে জামশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিষয়টি স্বীকার করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) সুদীপ্ত সরকার।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সাতকানিয়া থানার বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী এসব করে বেড়াচ্ছে। তাই আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়িয়েছি জেলা জুড়ে। আমাদের কাছে তথ্য আছে, সন্ত্রাসী জামশেদ সরকার বিরোধী জ্বালাও পোড়াওসহ নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। সে শিবিরের রাজনীতি করলেও নলুয়ায় নানার বাড়িতে মামা মিন্টু কামালের ছত্রছায়ায় থাকেন। তার প্রকৃত বাড়ি কাঞ্চনা। জামশেদকে গ্রেফতারের পর তার সাঙ্গপাঙ্গরা ককটেল জাতীয় দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও জানিয়েছেন এডিশনাল এসপি সুদীপ্ত সরকার।’

প্রসঙ্গত গত ১১ মার্চও জামশেদ সাতকানিয়া থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সর্বশেষ গতকাল এডিশনাল এসপি সুদীপ্ত সরকারের নির্দেশনায় ডিবির অভিযানিক টিমের নেতৃত্ব দিয়েছেন ইন্সপেক্টর নুর আহম্মদ।

স্থানীয়রা জানান, সাম্প্রতিক সময় পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। বহিরাগত শিবির ক্যাডার জামশেদ, ফাহিমসহ গুটিকয়েক সন্ত্রাসী স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে পুরো এলাকাকে অশান্ত করে রেখেছে। মারধর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে একাধিক। তাই প্রশাসন বিশৃঙ্খলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে বেশ তৎপর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জামশেদকে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযোগ আছে, জামশেদ কাঞ্চনার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার। পুরো এলাকার মানুষ তার ভয়ে তটস্থ থাকে। জামশেদ পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শিবির ক্যাডার বশরের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত। পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনায় সম্পৃক্ততা রয়েছে জামশেদের। হত্যা চেষ্টাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু জামশেদ এতোই ধূর্ত, তাকে গ্রেফতার করা যেত না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জামিন নিয়ে পালিয়ে বেড়াতেন। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী জামশেদকে কাঞ্চনা এলাকা থেকে বিতাড়িত করে। এরপর থেকে সহোদর মিন্টু-কামালের আশ্রয় প্রশ্রয়ে নলুয়ায় আত্মগোপন করেন।

জানা গেছে, জামশেদ তার প্রকৃত নাম গোপন করে পাসপোর্টও বানিয়ে নেন প্রতারণা ও তথ্যগোপনের মাধ্যমে। তার প্রকৃত নাম জামশেদুল করিম চৌধুরী হলেও পাসপোর্ট করা হয়েছে মোহাম্মদ জামশেদ নাম। বাবার নাম আবু বক্কর ও মায়ের নাম সায়রা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানা দেখানো হয়েছে পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা। অথচ তার প্রকৃত মা বাবার নাম ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী ও ছেনু আরা বেগম। ঠিকানা উত্তর কাঞ্চনা চৌধুরী পাড়া।

স্থানীয়দের অভিযোগ, জামশেদ বড় মাপের সন্ত্রাসী ও শিবিরের ক্যাডারভিত্তিক রাজনীতিতে জড়িত। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সন্ত্রাসী সহোদর মিন্টু-কামালের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থাকেন নলুয়ার পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গায়। সেখানেও বাহিনী গঠনের মাধ্যমে নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন জামশেদ। তার কাছে বেশকিছু আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি গত বছরের ১৩ আগস্ট রাতে নলুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা হয়েছে হত্যার উদ্দেশ্যে।

পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর রাতে মহিউদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি বন্দুক, হকিস্টিক, লোহার রড দিয়ে পিঠিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায় জামশেদরা। ওই হামলার পর মহিউদ্দিন আঘাতজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন পঙ্গু অবস্থা এবং টানা অসুস্থতা নিয়ে মহিউদ্দিন মারা যান গত ৯ নভেম্বর। মহিউদ্দিনের পরিবারের অভিযোগ, জামশেদ, মোরশেদ, জোবায়ের, খোরশেদ, শহীদ, ফারুকসহ এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের হামলার পর থেকে মহিউদ্দিন অনেকটা পঙ্গু অবস্থায় দিনাতিপাত করেছে। মাথায় আঘাতের কারণে বিভিন্ন সময় অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। তাদের হামলার পর আর সুস্থ হয়ে ওঠেনি। অবশেষে আঘাতের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হলে ওইদিনই মহিউদ্দিনের মৃত্যু হয়। মহিউদ্দিনের এই অকাল মৃত্যুর জন্য হামলাকারীরাই দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন ছোট ভাই নাজিম উদ্দিন।

সর্বশেষ ২০ জানুযারি রাতে সাতকানিয়া থানা যুবলীগের সাবেক নেতা শাকিলের ঘরে গুলিবর্ষণের ঘটনায়ও এলাকাবাসীর সন্দেহের তীর তার দিকে। এছাড়া জামশেদ সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন ঘন ঘন দুবাই যাওয়া আসা করে প্রচুর সোনা পাচার করেছেন জামশেদ। অনেকের সোনা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মূলত মিথ্যা তথ্যে প্রতারণার মাধ্যমে বানানো পাসপোর্টে সে সোনা চোরাকারবারের কাজ করতেন এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাঙ্গরমুখ বাজারে সাতকানিয়া থানা পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করে। ওই সভায় সাবেক ওসি ইয়াসির আরাফাত শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী জামশেদের নাম উল্লেখ করে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন।

এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রিটন সরকার বলেন, শিবির ক্যাডার জামশেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ায় জামশেদকে আদালতের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হয়েছে। তার সাঙ্গপাঙ্গদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!