সরকারি জলমহালে চেয়ারম্যানের চিংড়ি ঘের ও দোকানবাণিজ্য

মিঠা পানি পাল্টে মাছ চাষ, দেড় হাজার পরিবারের মাথায় হাত

কক্সবাজারের পেকুয়ার উজানটিয়া সুতাচুরা এলাকায় তিন বছর আগে একটি সরকারি জলমহাল ইজারা নিয়েছিলেন স্থানীয় চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। ইজারা নেওয়ার কিছুদিন যেতে না যেতে তিনি দরপত্রের নিয়ম ভঙ্গ করে একের পর এক গড়ে তুলছেন বাণিজ্যিক স্থাপনা। খালটির প্রায় ৪ একর জায়গা দখল করে মাছের হ্যাচারি সহ নির্মাণ করেছেন একটি মার্কেটও। একইসঙ্গে ইজারা নেওয়ার পর থেকে মাছ চাষের সুবিধার্থে ব্যবহৃত খালের মিঠা পানি পরিবর্তন করে মজুদ করছেন লবণাক্ত পানি। ফলে স্থানীয়রা মিঠা পানির সংকটের পড়েছেন। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পরিবার।

জানা যায়, ২০১৮ সালে ৪২ একর জলমহালটি নাম মাত্র মূল্যে (প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা) ইজারা নেন উজানটিয়ার চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম। খালটির ইজারা মেয়াদ রয়েছে তিন বছর। বদ্ধ এ খালটির আয়তন প্রায় ২০ একর। স্থানীয়রা জানান, যুগ যুগ ধরে বান্ধা খাল নামে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত জলমহালটিতে ঘিরে সেখানকার প্রায় দেড় হাজার পরিবার গোসল, কাপড় ধোয়া ও রান্নাবান্নার জল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন।

কিন্তু চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খালটির ইজারা নেওয়ার পর থেকে কাউকে আর এ খাল ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে খালের মিঠা পানিরও পরিবর্তন করা হয়। ফলে তীব্র মিঠা পানির সংকটে রয়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন। এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব উল করিম অবৈধ নির্মিত বাঁধ কেটে জলমহলটি পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে একটি লিখিত আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রায় দুই বছর পার হয়ে গেলেও নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।

উজানটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফাজ্জল করিম বলেন, চেয়ারম্যান খাল দখল করে ব্যক্তিগত চিংড়ি ঘের ও দোকানপাট নির্মাণ করলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। একজন জনপ্রতিনিধি কতটা অমানবিক হলে হাজার হাজার পরিবারের পানির ব্যবহার বন্ধ করে দিতে পারে? অবিলম্বে ইজারা বাতিল করে খালটি দখলমুক্ত ও পূর্বের রূপ ফিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে নতুন করে কাউকে ইজারা না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অনুরোধ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উজানটিয়ার চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি খালটি ইজারা নিয়ে বসিয়ে রাখব। আমি লাভের জন্য ইজারা নিয়েছি। সেখানে মার্কেটের কথা বলা হলেও মার্কেট নয়, দুটি দোকান নির্মাণ করেছি। তিনি আরও বলেন, আমি এ এলাকায় দীর্ঘদিন সময় ধরে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। সম্প্রতি গুটিকয়েক লোকজন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র লিপ্ত রয়েছেন। তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজও করিয়েছে। নিউজ দিয়ে কি আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করা যাবে? আমি এসবের কিছু মনে করি না।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোতাছেম বিল্যাহ বলেন, ‘নতুন করে এখনও ওই জলমহালটির জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দরপত্রের নিয়ম হচ্ছে যারাই সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে যিনি হবেন তিনিই এ ইজারা পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘সাবেক চেয়ারম্যান প্রায় তিন বছর আগে এ জলমহালটি ইজারা নেন।’ তবে তার শর্ত ভঙ্গের বিষয়ে স্থানীয়দের যে অভিযোগ সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে মন্তব্য করেন।

মুআ/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!