শোকজ নোটিশ হাতে পেয়েই বিপ্লব উদ্যানে ‘ঝাল’ মেটালো চসিক (ভিডিও)

নেপথ্যে প্রশাসকের ‘দুরভিসন্ধি’ দেখছেন আইনজীবীরা

আদালতের শোকজ নোটিশ হাতে পেয়েই বিপ্লব উদ্যানে বিপুল উদ্যমে দোকান ভেঙে দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেছেন, আদালত শোকজ নোটিশ দিলেও না ভাঙার কোনো আদেশ দেননি।

তবে শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর জবাব না দিয়ে যেকোন নালিশি স্থাপনা ভেঙে দেওয়াকে আইনসঙ্গত নয় এবং ‘জুডিশিয়াল ভদ্রতা’র আওতায় পড়ে না বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা। তাদের কেউ কেউ এর পিছনে চসিক প্রশাসকের ‘দুরভিসন্ধি’ও দেখছেন।

বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলীর নেতৃত্বে এসব দোকান উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

এর আগে বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের ষোলশহর বিপ্লব উদ্যানে সিটি কর্পোরেশনের ‘বেআইনি’ উচ্ছেদ কাজে কেন অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না— এটি জানতে চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনসহ ৬ প্রতিপক্ষকে ৫ দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) স্টাইল লিভিং আর্কিট্যাক্টসের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের করা আবেদনের শুনানি শেষে চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত এই আদেশ দিয়েছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকেলেই আদালতের দেওয়া এই শোকজ নোটিশ চসিকে পাঠানো হয়েছে।

আদালতের শোকজ নোটিশ হাতে পেয়ে নালিশী দোকান উচ্ছেদ প্রসঙ্গে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘তারা আদালতে একটা অভিযোগ করেছে। আদালত আমাদের কাছে জানতে চেয়েছে যে এই অভিযোগের বিষয়ে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। আদালত তো কোনো আদেশ দেয়নি। আদালত যা জানতে চেয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমরা আদালতের নোটিশের জবাব দেবো।’

শোকজ নোটিশ হাতে পাওয়ার পরও কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপনা ভাঙতে পারে কিনা জানতে চাইলে এডভোকেট জিয়া আহসান হাবীব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানকে যদি আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানতে চেয়ে শোকজ দেওয়া হয়, তাহলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শোকজের জবাব না দিয়ে স্থাপনা ভেঙে দেওয়াটা জুডিশিয়াল ভদ্রতার আওতায় পড়ে না। এছাড়া শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর দিনই যদি কোন স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়, এটিও এক ধরনের দুরভিসন্ধি হিসেবে দেখা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক্ষেত্রে যেকোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি চাইলে আদালতের কাছে পূর্বের স্থাপনা ফিরে পেতে প্রতিকার চাইতে পারে এবং নিষেধাজ্ঞাও চাইতে পারেন।’

এ বিষয়ে আরেক আইনজীবী স্বাগত চৌধুরী বিধান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আদালতে শোকজটি নিশ্চয়ই নালিশী সম্পত্তির নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে শোকজের জবাব না দিয়ে নালিশী কোন স্থাপনা ভেঙে ফেলা যাবে না। এটি আইনসঙ্গত না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু নালিশী স্থাপনার বিষয়ে কেন অন্তবর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে জবাবের জন্য নির্দিষ্ট সময় দিয়েছে, সেক্ষেত্রে আদালতের অনুমতি না নিয়ে কিংবা সন্তোষজনক ব্যাখা না দিয়ে কোন নালিশী স্থাপনা ভেঙে ফেলা যাবে না।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম আদালতের আইনজীবী মোকাররম হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কেউ আদালতে নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারে। যাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে আদালত এ বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল নিশ্চয়ই। বিষয়টি আদালতকে জানানোর পর আদালত নিষেধাজ্ঞা দিতেও পারেন, নাও দিয়ে পারেন। এটি পুরোই আদালতের এখতিয়ার। কিন্তু শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর জবাব না দিয়ে স্থাপনা ভেঙে দেওয়াটা কোনভাবেই আইনসঙ্গত না। এটি আদালতের নোটিশের প্রতি একধরনের অবজ্ঞা মনে করি।’

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বিপ্লব উদ্যানের দোকান ভাঙার সময় চসিক ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাদের আদালতে শোকজের কথা বলা হলে তারা প্রশাসকের নির্দেশনার কথা বলেন। আদালত শোকজ করার পরও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার মানে হল আদালতের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করা। সিটি করপোরেশন আদালতের শোকজ হাতে পেয়ে দোকান উচ্ছেদ করে নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে সংস্থা মনে করছে।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট বিপ্লব উদ্যানের সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রম পরিদর্শন ও গণশুনানিকালে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন সৌন্দর্যবর্ধন কার্যক্রমে নির্মিত দোকানের বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলার এবং চুক্তি লঙ্ঘিত হওয়ায় এর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত দোকান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!