করোনা দূর্যোগে নিরন্তর সেবা দিয়ে যাওয়া চিকিৎসক ডা. নুরুল হকের নির্মম মৃত্যু হলো করোনা উপসর্গে। তাও নিজের চিকিৎসা পেশার শুরুর দিন থেকে যে প্রতিষ্ঠানে হাজারও মানুষের সমস্যায় দৌঁড়ে যেতেন সেই মেট্রোপলিটন হসপিটালের আইসিইউতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
বুধবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে ৬টায় তিনি মেট্রোপলিটন হসপিটালের আইসিইউতে মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেন ওই হসপিটালের মহাব্যবস্থাপক মো. সেলিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, ডা. নুরুল হকের জ্বর ছিল, সুস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু তিনদিন আগে নিজের কর্মস্থল আইসিইউতে ভর্তি হন। উনিও বুঝতে পারেন নি তার অবস্থা এমন খারাপের দিকে গিয়েছে। তাঁকে বাঁচাতে আইসিইউ সাপোর্ট, হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপোর্ট সবই দেওয়া হয়েছিল। বুধবার রাতে তার অক্সিজেন মাত্রা ছিল মাত্র ৫১ ভাগ। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৬টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সোমবার (১৫ জুন) করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট এখনও আসেনি বলেও জানান মো. সেলিম উদ্দিন।
জানা গেছে, ডা. নুরুল হক বায়তুশ শরফের মরহুম পীর মাওলানা কুতুব উদ্দিনের চিকিৎসা দিয়েছিলেন। ১৮ মে মাওলানা কুতুব উদ্দিন অসুস্থ হয়ে মেট্রোপলিটনে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৯ মে তাঁকে ডা. নুরুল হকের পরামর্শে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০ মে বিকেলে মাওলানা কুতুব উদ্দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যান। ওই রাতেই তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ডা. নুরুল হক বায়তুশ শরফের পীরের সংস্পর্শে এসেই করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
ডা. নুরুল হকে মৃত্যুতে তার পেশার বাহিরে সাংবাদিক সমাজেও শোকের ছায়া নেমে আসে। তাকে যে কারো অসুস্থতাজনিত সমস্যা রাত বা দিন সব সময় কাছে পাওয়া যেতো উল্লেখ করে চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের বিভাগীয় এডিটর কামাল পারভেজ বলেন, ডা. নুরুল হক অত্যন্ত সহজ-সরল, নির্লোভ ও মানবিক চিকিৎসক ছিলেন। আমাদের যে কোনও সহকর্মী অসুস্থ হলে আমরা ডা. নুরুল হককে কাছে পেতাম। চমেকের ছাত্রজীবন থেকেই চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালের সাথে নিজেকে জড়ান ডা. নূরুল হক। ডাক্তারী পাশের পর ওই হাসপাতালই ছিল বলতে গেলে তার ঘর-বাড়ি। কখনও অপারেশন থিয়েটার, কখনও আইসিইউ ইউনিট, কখনও জররি বিভাগে। সবখানে ছিল ডা. নূরুল হক। ফোন ধরতে না পারলে নিজেই ফোন ব্যাক করতেন। ডা. নুরুল হক বেঁচে থাকলে আরও হাজারও মানুষ উপকৃত হতো।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা. নুরুল হক মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম দৈয়ার পাড়ার সন্তান। নূরুল হকের স্ত্রী, ৫ বছর বয়সী সন্তান ও আড়াই বছর বয়সী কন্যা সন্তান ছাড়াও মা, এক ভাই ও ৫ বোন রয়েছে।
এফএম/এসএ