যুবলীগ-ছাত্রলীগের মন কেড়েছে চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, চোখ কমিটির পদে

চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে পরিবর্তন এনেছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। আগে যেখানে আওয়ামী লীগের রাজনীতি বলতে শুধুমাত্র যুবলীগ ও ছাত্রলীগকে ধরা হতো সেখানে এসেছে পরিবর্তন। বছর দুয়েক আগেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানারে যেখানে ফুল দেওয়ার মানুষ পাওয়া যেতো না সেখানে এখন নেতাকর্মীদের ব্যানার ঝুলছে নগরীর প্রধান সড়ক ছাড়িয়ে অলিগলিতেও।

প্রায় ২০ বছর পর চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নতুন কমিটির ঘোষণার পর বেড়েছে সাংগঠনিক গতি। বর্তমান কমিটি কার্যক্রমে সংগঠনটির ওপর আস্থা রাখছে তৃণমূলের কর্মীরা। বাড়ছে সংগঠনের সদস্য সংখ্যাও। আর এতে চাপ কমছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ওপর। তবে স্বেচ্ছাসেবক লীগের গতি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক নেতাকর্মী যুবলীগ ও ছাত্রলীগ থেকে সরে এসে রাতারাতি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী-সংগঠক হয়ে গেছেন।

মূলত আগামীতে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ঘোষণা করবে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। তাই পদবির লোভে অনেকে এভাবে সাংগঠনিক পরিচয় ও নেতা বদল করছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

২০২২ সালের ৯ মার্চ দেবাশীষ নাথ দেবুকে সভাপতি ও আজিজুর রহমান আজিজকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন বছরের জন্য ঘোষণা হয় ২০ সদস্যের নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি। মূলত এরপর থেকেই নিয়মিত সাংগঠনিক কাজ দিয়ে সংগঠনের গতি বাড়াতে থাকে তারা। ইতোমধ্যে নগরীর তিনটি থানা ও একাধিক ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ করা হয়েছে। চলতি মাসে নগরীর সব কয়টি থানা সম্মেলন শেষ করার প্রস্তুতি থাকলেও চট্টগ্রাম-১০ আসনের উপ নির্বাচনের জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয় কার্যক্রম।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন সম্মেলনে গিয়ে দেখা গেছে, একসময় ছাত্রলীগ করা নেতারা এবং কিছুদিন আগেও যুবলীগের ব্যানারে রাজনীতি করা অনেকেই এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে।

কেন ছাত্রলীগ বা যুবলীগ ছেড়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে আসার চেষ্টা—এমন প্রশ্নের উত্তরে একাধিক নেতা জানান, ছাত্র অবস্থায় দীর্ঘ সময় রাজনীতি করেও কমিটির দেখা পাননি তারা। যুবলীগের ক্ষেত্রে কমিটিতে আসা আরও বেশি কষ্টসাধ্য। তাই নতুনভাবে সতেজ হওয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগই একমাত্র ভরসা। যেহেতু দীর্ঘ ২০ বছরের খরা কাটিয়ে সংগঠনটি নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছে। তাই এখানে শ্রম দিলে একটি সাংগঠনিক পরিচয় পাওয়া যাবে।

এর আগে ২০০১ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। তবে গত ২০ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। করতে পারেননি কোনো চোখে পড়ার মতো সাংগঠনিক কাজও। তাই নেতাদের নিষ্ক্রিয়তা দেখে সংগঠন ছেড়ে যুবলীগ বা অন্য সংগঠনে সময় দিতে থাকেন নেতারা। ফলে কর্মীশূন্য হয়ে পড়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এমনকি জাতীয় দিবসগুলোতে যেখানে অন্য সংগঠনগুলোর নেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন ফুল দিতে, সেখানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ব্যানার ধরতে কর্মী পাওয়া ছিল দুষ্কর।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুঃসময়ে পাশে থাকা হাতেগোনা নেতাকর্মীর একজন মো. কামরুল ইসলাম। প্রায় এক যুগ আগে থেকে ৩৭ নম্বর বন্দর ওয়ার্ডের বাসিন্দা প্রিন্টিং ব্যবসায়ী কামরুল ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী। যেকোনো জাতীয় অনুষ্ঠানে নিজের দোকান থেকে বানানো ব্যানার ও ফুল নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষে যেতেন শহীদ মিনারে। সেই কামরুলই সেদিন হালিশহর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনে কর্মীদের উপস্থিতি দেখে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এটা আমাদের স্বর্ণযুগ। সম্মেলনের এই দৃশ্য দেখার জন্যই আমরা এতদিন ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগকে আঁকড়ে ধরেছিলাম।’

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের চাঙ্গা হয়ে ওঠার পেছনের কারণে হিসেবে কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জানান, নতুন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যে কমিটি হয়েছে, তাতে প্রায় সকলেই সদ্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। সকলেরই বড় কর্মীবাহিনী রয়েছে। আর নেতাদের দেখাদেখিতে সেই সকল কর্মীরাও ভিড়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে।

নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ নেতৃত্ব দিয়েছেন ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের। ছিলেন কেন্দ্রীয় ও নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে। সব কিছুর বাইরে নিজের একটি বিশাল বলয় রয়েছে তার। পদ পাওয়ার পর আজিজের প্রায় সকল কর্মীই চলে এসেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ করা সহ-সভাপতি হেলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ আচার্য্য, প্রচার সম্পাদক তোসাদ্দেক নূর চৌধুরী তপুও রয়েছেন নব্য স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে। এছাড়াও আবুল হাসনাত বেলাল, অ্যাডভোকেট তসলিম উদ্দিন, সুজিত দাশ, দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, নাজমুল হুদা শিপন, মো. আজিজ মিছির, আজাদ খান অভি, আবদুর রশিদ লোকমানদের মতো কর্মীনির্ভর একাধিক নেতা রয়েছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে। তাই তাদের অনুসারীরাও যোগ দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগে।

এসব বিষয়ে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজ বলেন, ‘চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন কমিটির একটি খরা ছিল। তবে সেটি এখন কেটেছে। আমরা কমিটি পাওয়ার পর থেকেই আমাদের তৃণমূলের কর্মীদের পরিচয় দিতে মাঠে নেমেছি। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়ার্ড-থানা কমিটিগুলো ঘোষণা করা শুরু করেছি। আর আমাদের গঠনতন্ত্রে ঠিক যেমনটা রয়েছে, আমরা তেমনভাবেই কমিটি ঘোষণা করছি।’

আজিজ আরও বলেন, ‘যেখানে গঠনতন্ত্রে একরকম থাকলেও ছাত্রলীগ, যুবলীগের ক্ষেত্রে এর বেশি মানুষ দিয়ে কমিটি করা হচ্ছে,সেদিক থেকে আমরা স্বচ্ছ। আমরা আমাদের নিয়ম মেনেই কমিটি দিচ্ছি এবং দ্রুত দিচ্ছি। তাই আমাদের তৃণমূলের কর্মীরা স্বেচ্ছাসেবক লীগকে বিশ্বাস করে, ভালবাসে আমাদের সংগঠনে আসছে।’

নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অনেকে এখনও যোগ দিচ্ছে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের মিটিং-মিছিলে। এর কারণ জানতে চাইলে কয়েকজন নেতা জানান, আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করা যেকোনো সংগঠনই ভালো, হোক তা যুবলীগ বা স্বেচ্ছাসেবক লীগ। তবে দীর্ঘদিন ছাত্র রাজনীতি করেছি। কিন্তু কমিটি ভাঙছে না, নতুন রাজনৈতিক পরিচয়ও পাচ্ছি না। আবার যুবলীগে আমাদের বহু সিনিয়ররা পদের আশায় সময় পার করছেন। আমরা সেখানে গিয়ে কিভাবে তাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো? তাই আমরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে আছি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!