মেয়র নাছিরের ক্ষোভ—শেখ কামালের ক্লাবে জুয়ার আসর সহ্য করবো না

বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামালের স্মৃতিবিজড়িত আবাহনী ক্লাবে জুয়ার আসর বসানোয় ক্ষোভ জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছেলে ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাই শেখ কামালের নাম দিয়ে ক্লাব করবেন, সেখানে জুয়ার আসর বসিয়ে সেই টাকা দিয়ে ক্লাব পরিচালনা করবেন—এসব অন্যায় কেউ বরদাশত করবে না। আমি তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাই এসব কর্মকাণ্ডের।’

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরীর ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমান বাজার আইএস কনভেনশন হলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকবিরোধী এক সমাবেশে আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে ইঙ্গিত করে তিনি একথা বলেন।

আ জ ম নাছির বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় ভ্রাতা শেখ কামাল যিনি অনেক বড় ক্রীড়া সংগঠক ছিলেন। উনার নাম ব্যবহার করে জুয়ার আসর বসিয়ে ক্লাব চালাবে—এটার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। যারা জুয়ার বোর্ড বসাবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এটা করবেন।’

মেয়র বলেন, ‘আমার বগলে কোনো গন্ধ নেই, তাই বুকে সাহস আছে। বগলে গন্ধ থাকলে বুকে সাহস থাকতো না। আমিও ক্লাব চালাই ১৯৮৫ থেকে। আমি চট্টগ্রাম ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। এখন দীর্ঘদিন যাবৎ প্রেসিডেন্ট। ফুটবল লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ক্রিকেট লীগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত অনেকগুলো ডিসিপ্লিনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কই আমি তো আমার ব্রাদার্স ইউনিয়নে ক্লাবঘর করিনি। কারণ ক্লাবঘর করলেই নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়বে। আমার ক্লাব এই ধরনের ফালতু কাজের সাথে জড়িত নয়।’

মেয়র বলেন, ক্রীড়াঙ্গনের নামে ক্লাব করলে সেখানে খেলাধুলার পরিবেশ সৃষ্টি করাই একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কেউ যদি বলে থাকেন ক্লাব চালানোর জন্য জুয়ার আসর প্রয়োজন—আমি এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মানুষের জীবনে বিনোদনের প্রয়োজন আছে। আর বিনোদনের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হলো ক্রীড়াঙ্গন। ক্রীড়াঙ্গনের মতো এমন পবিত্র একটি অঙ্গনকে পরিচালনা করতে হলে নিজের পকেট থেকে হোক বা প্রয়োজনে শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে অনুদান নিয়ে হোক যে কোনোভাবে পরিচালনা করা যায়। কিন্তু মদের আসর বসিয়ে, জুয়ার আসর বসিয়ে, ক্যাসিনো ব্যবসা করে সেই টাকা দিয়ে আপনার ক্লাব চালাতে হবে—এমন কথা সংবিধানের কোথাও উল্লেখ নেই। সংবিধান ও ইসলামে জুয়া নিষিদ্ধ। এটা জায়েজ করার সুযোগ নেই।’

সভায় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের যুগ্ম জেলা জজ জাহানারা ফেরদৌস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মা, ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক আহমদ চৌধুরী প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ক্যাসিনো বন্ধে চট্টগ্রামের ক্রীড়া ক্লাবগুলোতে অভিযানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের মহাসচিব সামশুল হক চৌধুরী। গণমাধ্যমকে চট্টগ্রামের পটিয়া আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ’’চট্টগ্রামে শতদল, ফ্রেন্ডস, আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২টি ক্লাব আছে। ক্লাবগুলো প্রিমিয়ার লীগে খেলে। ওদের তো ধ্বংস করা যাবে না। ওদের খেলাধুলা বন্ধ করা যাবে না। প্রশাসন কি খেলোয়াড়দের পাঁচ টাকা বেতন দেয়? ওরা কিভাবে খেলে, টাকা কোন জায়গা থেকে আসে, সরকার কি ওদের টাকা দেয়? দেয় না। এই ক্লাবগুলো তো পরিচালনা করতে হবে।’

সামশুল হক চৌধুরী আরও বলেন, ’তাস খেললে বোর্ড মানি দেয় ক্লাবকে। এসব পয়সা ক্লাবের কাজে ব্যবহার হয়। ফুটবল ফেডারেশন বা অন্য কোনো সংস্থা তো ক্লাবকে টাকা দেয় না। এইভাবে যদি অভিযান চালানো হয়, তাহলে লোকজন খেলাধুলা ছেড়ে চলে যাবে।’

সামশুল হক চৌধুরীর এ বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সুশীল সমাজের কাছে সমালোচিত হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!