মুচলেকা নিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

আবাসিক হলে না থাকা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাতায়াত ব্যবস্থার দাবি না করাসহ শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কয়েকটি বিভাগ। এ সংক্রান্ত নির্দিষ্ট ফরমে স্বাক্ষর বা গুগল ফরম পূরণ করলে তবেই মিলছে পরীক্ষায় বসার অনুমতি। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি স্বীকার করলেও শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই এমনটা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত গণিত বিভাগ, পদার্থবিদ্যা বিভাগ, পরিসংখ্যানসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় নির্দিষ্ট ফরমে স্বাক্ষর নিচ্ছে। গণিত বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট ওই ফরমে লেখা রয়েছে— ‘আমরা শতভাগ ছাত্র-ছাত্রী সর্বাবস্থায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো, আমরা হলে অবস্থান করবো না এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কোন যাতায়াতের দাবি করবো না, প্রত্যেকেই পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো এবং করোনাকালীন আমাদের যেকোন ধরনের দায়িত্ব আমরা নিজেরাই বহন করবো। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না।’

অন্যদিকে পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পূরণ করতে হচ্ছে একটি গুগল ফরম। সেখানে শিক্ষার্থীদের মন্তব্যের ঘরে ‘আবাসন ও পরিবহন সুবিধা ব্যতিরেকেই পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক’— এমন একটি অঙ্গীকারনামায় সম্মতি দিতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এটা যে একটা অঙ্গীকারনামা, শিক্ষার্থীরা তা বুঝতেছে না। কারণ শর্তগুলো প্রথম পাতায় আছে। আর স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছে পরের পাতায়। অনেকে জানেও না তারা কিসে স্বাক্ষর দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে এভাবে শর্ত দেওওয়ার কোনো মানেই হয় না।

অপর একজন শিক্ষার্থী ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘ফরমে লেখা আছে সর্বাবস্থায় পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। তাহলে একজন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হলে তখনও পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণিত বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আমান উল্লাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রো ভিসির সাথে যখন ছাত্ররা বসছিলো তখন বলা হয়েছিল ভ্যাকসিনেশন না হওয়া পর্যন্ত শাটল ট্রেন চলবে না। হল খুলবে না। তারা এটাতে রাজি হয়েছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বলছে যদি আপনারা পরীক্ষা নিতে চান, তাহলে আমাদের সাথে যেভাবে কথা বলেছে ওভাবে যদি হয় তাহলে আপনারা পরীক্ষা নিতে পারবেন। আমরাও তাই বলেছি।’

পদার্থবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন মিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত একটা কেন্দ্রীয় কমিটি আছে, সেই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে হলে উঠতে পারবা না। কারণ ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় মানা করে দিছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শতভাগ ভ্যাকসিনেটেড না হওয়া পর্যন্ত আমরা হল খুলতে পারবো না। ট্রেন চালু করতে পারবো না। তাই এমনটা করা হচ্ছে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও দাবির পর গত ১৫ জুন আবাসিক হল ও শাটল ট্রেন বন্ধ রেখে সশরীরে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করলে গ্রাম থেকে একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে ভাড়া কটেজ ও শহরের বিভিন্ন বাসায় আসতে শুরু করে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার সুযোগে কটেজ ও বাড়ির মালিকরা বাসা ভাড়া কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া শহরে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীরা শহর থেকে আসতে নানা রকম ভোগান্তির সম্মুখীন হয়। তাই শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল খুলে দেওয়া ছাড়াও শাটল ট্রেন চালু বা বাস সার্ভিস চালু করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!