করোনার পর অচেনা অসুখ, চট্টগ্রামে বাড়ছে নানা উপসর্গের রোগ

করোনা আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরে নানা উপসর্গ ও সমস্যা দেখা গেলেও করোনা থেকে মুক্ত হওয়ার পর অনেক রোগীই পড়ছেন নতুন অসুখে। এর মধ্যে রয়েছে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা, দুর্বলতা, বুক ধরপড় করা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, কাজে অমনোযোগিতা, স্মৃতিশক্তি ভ্রম, বিরক্তি, রাতে ঘুম না হওয়া ইত্যাদি। ডাক্তাররা বলছেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর অক্সিজেন স্যাচুরেশন কম নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, তারাই মূলত এসব রোগের শিকার হচ্ছেন করোনামুক্ত হওয়ার পর। চট্টগ্রামে দেড় বছর আগে করোনায় ভোগা এমন রোগীও পাওয়া যাচ্ছে, দেড় বছরেও যাদের স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসেনি। গন্ধ না পাওয়ার সাথে সাথে শ্বাসকষ্টটাও থেকে যাচ্ছে অনেকের।

করোনা শুরুর পর থেকে করোনা থেকে মুক্ত হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা প্রায়ই দেখা গেলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নতুন আরেক ধরনের অসুখ দেখা যাচ্ছে। আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই জানাচ্ছেন, করোনা সেরে যাওয়ার এক-দুই সপ্তাহ পরও তাদের অনেকের শ্রবণশক্তি বেশ কম। কানে তালা লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা হচ্ছে অনেকেরই। আবার স্বাদগন্ধ ফিরতে যেমন সময় লাগছে, তেমনি শ্বাসকষ্টেও পড়ছেন অনেকে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. সঞ্জয় দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন সাধারণত যেসব পোস্ট-কোভিড রোগী আছে তাদের অনেকেরই কোভিড মুক্ত হওয়ার পর গন্ধের অনুভূতি আসছে না। দেড়বছর আগে করোনায় ভোগা এমন রোগীও পাওয়া যাচ্ছে, দেড় বছরেও যাদের স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি ফিরে আসেনি। গন্ধ না পাওয়ার সাথে সাথে শ্বাসকষ্টটাও থাকছে অনেকের।’

তিনি বলেন, ‘অনেক রোগী আছেন যাদের ফুসফুস ভালো কাজ করছে, শারীরিক অন্য কোনো সমস্যাও নেই। কিন্তু তারপরও শ্বাসকষ্ট ভোগাচ্ছে তাদের দিনের পর দিন।’

ডা. সঞ্জয় দাশ বলেন, ‘করোনা থেকে মুক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে তিনটি সমস্যা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। সেগুলো হল— Post-Covid Anosmia বা কোভিডের পর দীর্ঘমেয়াদে ঘ্রাণশক্তি লোপ পাওয়া), Post-Covid breathing problem and sensation of nasal blockage (কোভিড পরবর্তী শ্বাসকষ্ট এবং নাক বন্ধ থাকার অনুভূতি), Increased incidence of Sudden Sensory Neural Hearing Loss (SSNHL) which may have connection with Covid 19 (হঠাৎ করেই কানের শ্রবণক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়া— যার সাথে হয়তো করোনার সম্পর্ক থাকতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু কিছু রোগীর কাছ থেকে জানা গেছে, করোনার থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেক সময়ই কানে শুনতে নানান সমস্যা হচ্ছে তাদের। কানে কম শোনা, তালা লেগে যাওয়া এবং মাঝে মাঝে মাথা ঘোরানোর সমস্যায়ও ভুগছেন অনেকে।’

ডা. সঞ্জয় দাশ বলেন, ‘অত্যধিক মাথাব্যথা, মুখে ব্যথা এবং কালো ছোপ দেখলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ এটি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণও হতে পারে।’

এই চিকিৎসকের কথার সূত্র ধরে জানা যায়, করোনার উপসর্গ হিসেবে স্বাদ ও ঘ্রাণ চলে যাওয়া, মাথাব্যথা এসব সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুক্ত হওয়ার কথা। কমপক্ষে দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে স্বাদ বুঝতে পারা এবং ঘ্রাণ ফিরে আসা স্বাভাবিক। করোনাভাইরাসের প্রভাব ক্রমশ কমে গেলে সহায়ক কোষগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে এবং গন্ধের অনুভূতি পুনরুদ্ধার হয়। তবে কয়েক সপ্তাহ পরেও যদি রোগীরা তাদের গন্ধের অনুভূতি ফিরে না পান, তখন ডাক্তাররা স্টেরয়েড, ন্যাজাল স্প্রে এবং ঘ্রাণ প্রশিক্ষণ ছাড়াও অনেককেই যোগব্যায়ামের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে শ্বাসকষ্টের জন্য ফুসফুসের ব্যায়ামও করতে বলেন চিকিৎসকরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, যেসব রোগী কানের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের অবশ্যই ইএনটি স্পেশালিস্টের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। ইভ ওরাল স্টেরয়েড এবং কানের পর্দায় স্টেরয়েড ইনজেকশন শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।

এদিকে করোনা-উত্তর শারীরিক সমস্যা থেকে দেখা দিচ্ছে মানসিক সমস্যাও। অনেকে কারণ ছাড়াই নিরন্তর নাক টানছেন। কেউ কেউ সারাক্ষণ মুখ একদিকে বাঁকাচ্ছেন। এ ধরনের সমস্যা আবার অন্য শারীরিক সমস্যা ডেকে আনছে। তবে অচেনা সমস্যাগুলোর বেশিরভাগই শরীরের অন্য অঙ্গগুলোকে প্রভাবিত করছে।

ডা. সঞ্জয় দাশ আরও বলেন, ‘ইদানিং হাসপাতালে ও আমার চেম্বারে এমন সব রোগী পাচ্ছি, সুস্থ মানুষ রাতে খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়েছেন, সকালে উঠে হঠাৎ কানে শুনতে পাচ্ছেন না। এ ধরনের রোগী আগে মাসে একটা পাওয়া গেলেও এখন আট থেকে ১০জন রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। এসব রোগীর করোনার নমুনা পরীক্ষা করিয়েও করোনা শনাক্ত হয়নি। সেক্ষেত্রে ধারণা করা হচ্ছে এটা করোনা-উত্তর উপসর্গ। হয়ত সেই ব্যক্তির শরীরে করোনার মৃদু উপসর্গ ছিল, হয়তো বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই ভালো হয়ে গেছে।’

‘এক্ষেত্রে আমরা রোগীদের পুষ্টিকর খাবারটাকেই সাপোর্ট করছি। সাথে ভিটামিন সাপ্লিমেন্টটা দিচ্ছি’ জানিয়ে ডা. সঞ্জয় দাশ বলেন, বিষয়গুলো আমাদের নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!