ভুয়া ডাক্তারের হাতে গর্ভবতীর মৃত্যু, ধামাচাপা দিতে চলছে ‘বৈঠক’

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চেকআপে এসে কাফকো সেন্টারের পাশে মহালখান বাজারে পরিবার পরিকল্পনার অবসরপ্রাপ্ত মাঠকর্মী সেলিনা আকতার (৬৫) নামের এক ভুয়া চিকিৎসকের কাছে প্রাণ হারালেন ছলিমা আকতার (৩৫)। তিনি জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের খুরস্কুল এলাকার ফারুক আহমদের স্ত্রী।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পুলিশের নীরব ভূমিকায় এলাকার ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, বুধবার বিকালে দুই সন্তানের জননী ছলিমা আকতার বাপের বাড়িতে (ছিরা বটতলীর আসাদ মেম্বারের বাড়ি) বেড়াতে এসে ছোট ভাই মো. শাহজানের সঙ্গে চেকআপের জন্য সেলিনার চেম্বারে আসে। সেখানেই অপচিকিৎসায় তার করুণ মৃত্যু হয়।

নিহত ছলিমার ছোট ভাই মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমার বড়বোন ছলিমা ৪ মাসের অন্তসত্ত্বা। বিকালে তাকে নিয়ে ডাক্তার সেলিনার কাছে আসি। সেলিনা আমার বোনের পেট ধরে বলেন ছলিমার পেটে মরা বাচ্চা রয়েছে। ওয়াশ করে বাচ্চা বের করতে হলে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সাড়ে ৩ হাজার টাকায় মরা বাচ্চা গর্ভপাত করানোর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর ইনজেকশন প্রয়োগ করে গর্ভপাত করাতে গেলে আমার বোন ছলিমার মৃত্যু হয়।’

ভুয়া ডাক্তার বলেছিলেন, ‘ওয়াশ করে বাচ্চা বের করতে হলে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে।’
ভুয়া ডাক্তার বলেছিলেন, ‘ওয়াশ করে বাচ্চা বের করতে হলে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সেলিনার ‘উন্নত চিকিৎসা’র জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডেকে আমার বোনকে গাড়িতে তুলে দেন। আমরা তাকে গাড়িতে তুলতে গিয়ে বুঝতে পারি তিনি মারা গেছেন। এরপর আমরা প্রতিবাদ করলে ওই ডাক্তার কোনো উত্তর দিতে পারেনি।’

এদিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ছলিমার মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পিতার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ভুয়া চিকিৎসকের বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। সেখানে উপস্থিত হন বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ আলম সুমন ও এসআই মোহাম্মদ আলী এবং স্থানীয় ইউপি সদস্যরা। এ সময় নিহত ছলিমার স্বজনেরা সাংবাদিকদের কাছে জোরালো প্রতিবাদ জানান। কয়েক ঘন্টা ধরে বাগবিতণ্ডা চলতে থাকে। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ পুলিশ-জনপ্রতিনিধি ও স্বজনেরা বিষয়টি আপস করতে বৈঠকে বসেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১১টা) আপস বৈঠক শেষ হয়নি। এ ধরনের ঘটনার সত্যতা পেয়েও পুলিশের রহস্যজনক নীরব থাকায় জনতার মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শাহ আলম সুমন বলেন, ‘চিকিৎসা নিতে এসে চার মাসের অন্তসত্ত্বার মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ না দিলে আমাদের আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।’

অভিযুক্ত ভুয়া চিকিৎসক সেলিনার জানতে চাইলে তিনি অকপটে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন এবং সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি চিকিৎসক নন বলে জানিয়ে দ্রুত ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (রাত ১১ টা ২০ মিনিট) টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সমঝোতা বৈঠক চলছে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!