বোয়ালখালীতেও মালদাররাই পেলেন প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার টাকা

ব্যবসায়ী প্রবাসী ছাড়াও তালিকায় কাউন্সিলরের নিজের লোক

করোনাভাইরাস উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বোয়ালখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মতো ১ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহযোগিতা গেল কাউন্সিলরের ব্যক্তিগত সহকারী, সহকারীর ভাই, বিত্তশালী ব্যবসায়ী ও সচ্ছল প্রবাসীর ঘরে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিত্তশালীর ঘরে মানবিক সহায়তা যাওয়ার কথা স্বীকার করে বললেন, ‘তারা সবাই কর্মহীন। বিত্তশালীরাও কষ্টে আছে তাই প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার আড়াই হাজার টাকা প্রদানের তালিকায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা প্রদানের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডের তালিকায় ১০৮ নম্বরে আছেন শিরিন আক্তার। শিরিন আক্তারের সাথে কথা বলে জানা গেল তার এক ছেলে প্রবাসী, স্বামী মো. আলী চট্টগ্রাম নগরীর মুরাদপুর এলাকায় গ্যাস-ওয়েল্ডিংয়ের ব্যবসায়ী। পৌরসভা এলাকায় বিল্ডিংয়ের মালিক এই বিত্তবান পরিবারও আছে কাউন্সিলরের বিশেষ আনুকূল্যে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা গ্রহণকারীর তালিকায়।

তালিকার ৭৩ নম্বরে আছেন ‘চাকুরীজীবি’ পরিচয়ে ইয়াছমিন আকতার নামের এক নারী। তালিকায় দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করে পাওয়া গেলো তার স্বামী আবু তৈয়বকে। এলাকার সবাই জানেন আবু তৈয়ব জায়গা-জমির ব্যবসায়ে জড়িত। তিনি প্রথমে স্বীকার করলেন, জি আমার ল্যান্ড ব্যবসা আছে। প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তায় তার স্ত্রীর নাম কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এখন ব্যবসা বাণিজ্য খারাপ যাচ্ছে তাই কাউন্সিলর সাহেব সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।’

চট্টগ্রাম শহরের আরেক ব্যবসায়ী জানে আলম চৌধুরী। পৌরসভাতেই আছে দালানঘর। তালিকায় ৫৯ নম্বরে আছে তারও নাম। থাকেন পাকা ঘরে, করেন শহরে ব্যবসা। এরপরও প্রধানমন্ত্রীর সহয়তার সুবিধাভোগীরদের তালিকায় আপনার নাম কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ইদানিং ব্যবসাপাতি ভালো যাচ্ছে না। বুঝেনই তো ভাই। কাউন্সিলর সাহেব দয়া করে দিয়েছেন।’

তালিকা থেকে বাদ যাননি আন্দরকিল্লায় প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করা সাইফুল আলমও। তালিকায় ১৪ নম্বরে থাকা সাইফুল আলমের প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা রয়েছে নগরীর আন্দরকিল্লার যমুনা ব্যাংক ভবনে। ব্যবসার কথা তিনি নিজে স্বীকার করে বলেন, ‘কাউন্সিলর সাহেব চেয়েছেন তাই আইডি কার্ড দিয়েছি। বাকিটা উনারা বুঝবেন। এখানে আমার কী দোষ?’

২১ নম্বরে থাকা মো. ওয়াসিমের আছে কধুরখীল চৌধুরী হাটে গ্যাস ও গ্যাসের চুলার ব্যবসা। তার প্রতিষ্ঠানের নাম খাজা আজমীর ট্রেডার্স। মুঠোফোনে ব্যবসা ভালো চলছে জানিয়েছেন। মানবিক সহায়তার কথা জিজ্ঞেস করলে বিব্রত হয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তালিকায় থাকা ৩২ নম্বর বায়জিদ হোসেন রাজুর জুতোর ব্যবসা আছে বোয়ালখালী মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটে। তালিকায় ৫ নম্বর মো. ইব্রাহীমের ফলের দোকান আছে কধুরখীল চৌধুরী হাটে। দুজনই তাদের ব্যবসার কথা স্বীকার করেছেন প্রতিবেদকের কাছে।

তালিকার ১০ নম্বরে থাকা মো. মহিউদ্দিন হলেন কাউন্সিলর শাহজাদা এসএম মিজানুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী। তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুদি দোকানের কর্মচারী পরিচয় দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

মহিউদ্দিনের ভাই কাউয়ুম উদ্দিনের আছেন তালিকার ১২৩ নম্বরে। তিনি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তার মুঠোফোনে ফোন করলে নিজের এক অধীনস্থকে দিয়ে কথা বলান। ওই অধীনস্থ জানান, ‘কাউয়ুম সাহেব ব্যস্ত আছেন, পরে ফোন করেন।’

তালিকার ৩০ নম্বরে আছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বাদলের নামও। বিত্তশালী এই নেতা পেশায় ব্যবসায়ী। তার নাম ও আইডি কার্ডের পাশে দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে তালিকায় বিত্তশালী থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বোয়ালখালী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহজাদা মো. মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তালিকা আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহায়তায় করেছি। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ। প্রবাসী সন্তান মা বাবার খোঁজ খবর রাখে না— এমন প্রবাসীর পরিবারও তালিকায় আছেন।’

তার ব্যক্তিগত সহকারী মহিউদ্দিন ও তার ভাই কাইয়ুম উদ্দিনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন পৌরসভায় মাস্টাররোলে চাকরি করে, তার ভাই একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করে। গার্মেন্টস বন্ধ থাকায় আমরা তাদের নামও তালিকায় রেখেছি।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা নিম্ন আয়ের কর্মহীন মানুষের জন্য, বিত্তশালীদের জন্য নয়। ওরকম কোন কিছু পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!