বিদেশে আবার অর্থপাচার, কনটেইনারে এবার বালুর বস্তা

চীন থেকে আসা কনটেইনার খুলে পাওয়া গেলো বালুর বস্তা। এতে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ কাস্টমসের। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার মেসার্স সোয়ারা ফ্যাশন সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে বালু নিয়ে আসলো চট্টগ্রাম বন্দরে। এটি ছাড়ের দায়িত্বে ছিল চট্টগ্রামের বন্দরের ফকিরহাট এলাকায় তানসা ওভারসিস। এ ঘটনায় কাস্টমস হাউসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় এমন জালিয়াতির ধরা পড়ে কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে। বিষয়টি আরো তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন কাস্টমস কমিশনার।

জানা গেছে, সুতা আমদানির ঘোষণা দিয়ে আনা চালানের এক কনটেইনার বালু পেয়েছে কাস্টমসের কর্মকর্তারা। ঘোষণা করা চালানে সন্দেহ থাকায় পণ্যটি শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় এমন প্রতারণার সন্ধান পায় চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর ) শাখার কর্মকর্তারা।

২৫ হাজার ৫০৫ ডলার দিয়ে চায়না থেকে ২৩ হাজার ৪০ কেজি সুতা আমদানি করার কথা ছিল। কিন্তু আমদানিকারক সেটি না করে এনেছেন বালুর চালান। এতে বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২২ লাখ টাকা চায়নাতে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করছেন কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বিল অফ এন্ট্রি থেকে জানা যায়, গত ২২ জানুয়ারি কাস্টমস হাউসে বিল অব এন্ট্রি (সি নম্বর ১৪৩১৪২) দাখিল করা হয়। এ চালানের মাত্র ২৫ হাজার ৫০৫ ডলার ব্যয়ে ২৩ টন সুতা (কটন ও পলিস্টার ইয়ার্ন) আমদানির ঘোষণা দেয় আমদানিকারক নারায়ণগঞ্জের ফাতুল্লা এলাকার মেসার্স সোয়ারা ফ্যাশন। যার ঠিকানা প্লট নম্বর ১২৭ ব্লক নম্বর বি, বিসিক আই /এ , ফতুল্লাহ, নারায়নগঞ্জ ১৪০০।

ওই চালান ছাড়ের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে চট্টগ্রামের বন্দরের ফকিরহাটের সিএন্ডএফ তানসা ওভারসিস।

চালানটি চায়নার জিংতাই ইয়ামজি টেক্সটাইল কোম্পানি থেকে আমদানি করে। এগুলো ‘এমভি মার্কস বিনতুলো’ জাহাজে করে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। আমদানিকারক কোম্পানি এক্সিম ব্যাংক লিমিটেডের ১৯৬৪ শাখা থেকে ৪১৯০১০৫৪৩ নম্বর এলসি করেন। ওই চালান নিয়ে জাহাজ ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর সন্দেহ থাকায় ওই চালান কাস্টমসের বিশেষায়িত সফটওয়্যার অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ডে ‘লক’ করে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় কাস্টমস অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখাকে।

চালানের বিষয়ে জানতে চাইলে কাস্টমসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্য থাকায় চালানটি লক করা হয়েছিল। শতভাগ কায়িক পরীক্ষায় তা স্পষ্ট হলো। অনেক বড় জালিয়াতি করেছে আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ।’

মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা ও শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) অনুযায়ী মামলা দায়ের হবে জড়িতদের বিরুদ্ধে। ওই চালান ছাড়ের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের বন্দরের ফকিরহাট এলাকায় সিএন্ডএফ তানসা ওভারসিজ মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সুতার একটি চালান খালাসের জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেছিলাম। কিন্তু কনটেইনার খুলে বালু পাওয়াতে আমিও হতবাক হয়েছি। কারণ অনেক বছর ধরে আমরা ওই আমদানিকারকের হয়ে কাজ করছি। কোন সময় এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এবার কেন হলো তা জানতে আমিও চিঠি লিখেছি ওই আমদানিকারক বরাবরে।’

যোগাযোগ করা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার মেসার্স সোয়ারা ফ্যাশনের প্রতিনিধি মোহাম্মদ নাছির বলেন, ‘চায়না থেকে রপ্তানিকারক কোম্পানি হয়ত ভুল করে এটি পাঠিয়েছে। আমরা এখনো টাকা ছাড় দিইনি। তাই আমরা টাকা ফেরত পাবো। এখানে মানিলন্ডারিং হয়নি।’

এএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!