ইংরেজি বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্সী স্কুল

সাউথইস্ট ব্যাংক-দৃষ্টি বিতর্ক প্রতিযোগিতা

চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিতর্কের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে বিতর্ক সংগঠন দৃষ্টি চট্টগ্রামের আয়োজনে ও সাউথইস্ট ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ‘গেইম অব লজিক’ শিরোনামে চট্টগ্রামের অনুষ্ঠিত হল জাতীয় ইংরেজি বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় সারা দেশের ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১২টি স্কুল অংশগ্রহণ করে। সোমবার (২৭ জানুয়ারি) প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে স্কুল ফাইনাল প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘এই সংসদ রোহিঙ্গা শিশুদের বাংলাদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার সুযোগ দেবে’— এই বিষয় নিয়ে সংসদে তর্কযুদ্ধ শেষে চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্সী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে, রানারআপ হয়েছে চট্টগ্রাম কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও রানাসআপ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যারয় (আইবিএ), তৃতীয় স্থান অধিকার করে ইউএসটিসি। এই প্রতিযোগিতায় নবীন ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হযেছে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রতিযোগিতা শেষে সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আবদুন নুর তুষার, সানশাইন গ্রামার স্কুলের অধ্যক্ষ সাফিয়া গাজী রহমান ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড এর এক্সকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদুল আমিন রাশেদ।

দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি মাসুদ বকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দৃষ্টি চট্টগ্রামের সিনিয়র সহ সভাপতি ব্যাংকার সাইফ চৌধুরী, সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাবের শাহ, যুগ্ম সম্পাদক সাইফুদ্দিন মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আরফাত, অর্থ সম্পাদক মুন্না মজুমদার ও বিতর্ক সম্পাদক রিদোয়ান আলম আদনান।

ইংরেজি বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্সী স্কুল 1

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও প্রাক্তন বিতার্কিক ডা. আব্দুন নূর তুষার বলেন, প্রবৃদ্ধি আর জিডিপিতে সুইজারল্যান্ড, সুইডেনসহ উন্নত দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়াই প্রকৃত উন্নয়ন নয়, আমাদেরকে হতে হবে তাদের মতই উন্নত মানুষ। তবেই আসবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখা সেই সোনার বাংলা আর আমরা হয়ে উঠবো সোনার মানুষ। সোনার মানুষ হচ্ছে সেই মানুষ যার হৃদয় স্বর্ণের মত উজ্জল, স্বর্ণের মত খাঁটি ও স্বর্ণের মত দামি, যোগ করেন তিনি।

তিনি উপস্থিত বিতার্কিকদের উদ্দেশ্যে তুষার বলেন, ‘উপার্জন আর অর্জন এক জিনিস নয়। মানুষ যতক্ষণ কর্মক্ষণ থাকবে ততক্ষণ উপার্জন করবে। কিন্তু অর্জন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করা যাবে।’ তিনি আরও বলেন, জীবনের প্রয়োজনে উপার্জন করে যাবে পাশাপাশি কিছু অর্জন করার জন্যও কাজ করে যেতে হবে। আর এটাও মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র এ প্লাসের পেছনে ছুটে চলায় চূড়ান্ত সাফল্য নয়, সেই সাথে আলোকিত ও দক্ষ মানুষ হিসেবেও নিজেকে গড়ে তুলতে হবে।

নগরায়ন বিষয়ে প্রাক্তন এ বিতার্কিক বলেন, এখন সবাই বাড়িকে বড় করায় মনোযোগী কিন্তু খোলা জায়গা যে ছোট হয়ে আসছে খেলার মাঠ যে হারিয়ে যাচ্ছে সেদিকে কারো নজর নেই। জায়গা যে ছোট হয়ে আসছে খেলার মাঠ যে হারিয়ে যাচ্ছে সেদিকে কারো নজর নেই। যে বাড়িতে দামি ফার্নিচার, আসবাবপত্র সবই আছে কিন্তু বই কিংবা জ্ঞানী মানুষ নেই সেই বাড়ি ও টাকার কোন মূল্য নেই। তাই শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। যার জন্য প্রয়োজন পড়াশোনার পাশাপাশি বিতর্ক, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, বিজনেজ কুইজসহ যেকোন সহপাঠ্যক্রমিক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখা।

শিক্ষার্থীদের প্রতি দিকনির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য যেন শুধু অর্থের পেছনে ছুটে চলা না হয়। আমাদের ছুটতে হবে জ্ঞানের পেছনে, হতে হবে একজন ভালো মনের মানুষ।”

অনুষ্ঠানের অতিথি কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধিতে সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, ইটালির মত দেশগুলোকে ছাপিয়ে যাবে। তিনি বলেন, অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় দেশে বর্তমানে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা সব থেকে বেশি। যার সুফল পাওয়া সম্ভব হবে যদি এ জনসম্পদকে যথাযতভাবে কাজে লাগানো যায়। তিনি বলেন, ‘আজকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয় নানা আয়োজন একটি ইতিবাচক দিক। এইসবের মধ্যদিয়ে শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের ভবিষ্যতের পথ খুঁজে নেয় এবং আগামীর সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অংশ হয় সেই কামনাই করি।’

শিক্ষাবিদ সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, আমরা আসলেই প্রত্যেকেই বিতার্কিক। প্রতিনিয়ত আমরা নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করতে থাকি। আমাদের দরকার শুধুমাত্র একটু চিন্তা শক্তির প্রসার বাড়ানোর।

ব্যাংকার রাশেদুল আমিন রাশেদ বলেন, জীবন অনেক সুন্দর যদি আমরা জীবনকে ওইভাবে দেখতে পারি। জীবনের ব্যর্থতা গুলোকে মেনে নিতে শিখায় বিতর্ক। বিতর্ক আরো শিক্ষা দেয় কিভাবে প্রতিকুলতাকে ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন বিতর্ক হলো একধরণের সৌন্দর্য্য, একধরণের ভালোবাসা। একে ভালোবাসতে শিখুন এবং উপভোগ করুন।

সভাপতির বক্তব্যে দৃষ্টি চট্টগ্রামের সভাপতি মাসুদ বকুল বলেন, চট্টগ্রামের ইংরেজি বিতর্ক চর্চাকে এগিয়ে নিতে এই আয়োজন বিতার্কিকদের ইংরেজি বিতর্কের প্রতি আগ্রহী করে তুলবে।

৯ দিনব্যাপী এ আয়োজনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল আন্তঃস্কুল এশিয়ান পার্লামেন্টারি ডিবেট কম্পিটিশন, আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ডিবেট কম্পিটিশন ও পাবলিক স্পিকিং প্রতিযোগিতা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!