প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম বই মেলা গুনীজন সৃষ্টি ও জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়তা রাখবে

নুরুল আলম, চন্দনাইশ , চন্দনাইশ : প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের নামে বই মেলার আয়োজন নতুন প্রজন্মকে মহৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষ সৃষ্টির অনুপ্রেরনা যোগাবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন ও আত্মশক্তি অর্জন, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সুস্থ ও আলোকিত সমাজ বিনির্মানে সহায়তা করবে। প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম বই মেলায় বিশিষ্ঠ জনেরা এ কথা বলেন।

১৭ হতে ২১ই ফ্রেবূয়ারী ৫দিন ব্যাপি চন্দনাইশ সদরস্থ শাহ্ আমিন নগর পার্কে আয়োজিত এ মেলায় গুনীজনদের আলোচনা, বিভিন্ন গোষ্ঠীকর্তৃক দেশাত্মবোধক গান, কবি গান, আবৃত্তি পাঠ, বিভিন্ন প্রকাশনা, পাঠাগার ও লাইব্রেরীর স্টল ও প্রিন্সিপল আবুল কাসেম এর উপর দূর্লভ চিত্র প্রদর্শন ইত্যাদি মেলাকে দর্শক শ্রোতাদের উজ্জীবিত ও প্রাণবন্ত করে রাখে। ১৭ ফ্রেব্রূয়ারি মেলা উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নজুরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রধান অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সুকান্ত ভট্টচার্য্য, প্রধান বক্তা ছিলেন কবি সাহিত্যিক অভীক ওসমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী, চন্দনাইশ পৌরমেয়র মাহ্বুবুল আলম (খোকা), চন্দনাইশ উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি জাহেদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর। ২য় দিবস ১৮ ফ্রেবুয়ারি বরমা কলেজের অধ্যক্ষ আবুল মনসুর হাবিবের সভাপতিত্বে গাছবাড়ীয়া সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু ছাদেক মোঃ মুছা প্রধান অতিথি এবং প্রধান বক্তা ছিলেন লোক সংস্কৃতি ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক গবেষক শামসুল আরেফিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ লেখক সামশুদ্দিন শিশির, ৩য় দিবস ১৯ ফ্রেবূয়ারি প্রধান অতিথি ছিলেন বি.জি.সি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সরোজ কান্তি সিংহ হাজারি, প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যাপক ড. অর্থদর্শী বড়ুয়া, ৪র্থ দিবস এ প্রধান অতিথি ছিলেন ইউ.এস.টি.সি র উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ প্রবাদ চন্দ্র বড়–য়া, কক্রাবাজার ইন্টারনেশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মোঃ আবুল কাসেম প্রধান বক্তা, বিশেষ অতিথি ছিলেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফর রহমান, বরমা কলেজের অধ্যাপক শিব প্রসাদ দাশ, গনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুর রহিম, সভাপতিত্ব করেন আমানত ছফা বদরুনেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আবুল খায়ের। ২১ ফ্রেবূয়ারি ৫ম ও সমাপনি দিবসে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু।

৫দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, প্রধান শিক্ষক (অবঃ) আনোয়ার হোসেন। প্রধান শিক্ষক বিজয়ানন্দ বড়–য়া, পি.পি.এস এর নির্বাহী পরিচালক নুরুল হক, প্রধান শিক্ষক (ভারঃ) আবুল কালাম, প্রধান শিক্ষক প্রমোদ রঞ্জন বড়–য়া, প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হোসেন, প্রধান শিক্ষক বিষ্ণু যশা চক্রবর্তী, সাংবাদিক নুরুল আলম মাস্টার, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ন পরিচালক, শিক্ষানুরাগী একরাম হোসেন, শিক্ষক মহিউদ্দিন, সাংবাদিক শিবলী ছাদেক কফিল, শিক্ষক শাহ্জান আজাদ প্রমূখ। মেলার আয়োজক প্রিন্সিপল আবুল কাসেম ট্রাস্টের সাধারন সম্পাদক মাহমুদ বিন কাসেম সার্বিক তত্ত্ববধানে ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা ও উপস্থাপনায় ছিলেন মেলা আয়োজক কমিটির সমন্বয়ক, চন্দনাইশ ছাত্র সমিতির সম্পাদক তানভীর আহম্মদ ছিদ্দিকী ও মাসুদ।

বক্তরা বলেন পাকিস্তান উত্তরকালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশে যে গন আন্দোলনের ধারা সৃষ্টি হয় প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম ছিলেন সে আন্দোলনের জনক। তিনি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ১৭ দিনের মাথায় সাংস্কৃতিক সংগঠন, তমুদ্দন মজলিশ গঠন, রাস্ট্রভাষা ও সাব কমিটি গঠন, সম্প্রাসারিত রাস্ট্র ভাষা সংগ্রাম কমিটি গঠন এবং সর্বদলীয় রাস্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা সৃষ্টি করেন যেখানে দলমত নির্বিশেষে সকলের স্থান ছিল। তিনি ১৫ সেপ্টম্বর ১৯৪৭এ ভাষা আন্দোলনের ঘোষনাপত্র “পাকিস্তানের রাস্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু প্রকাশ করেন। নভেম্বর মাসে তৎকালীন প্রাদেশিক মূখ্য মন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন কে স্মারকলিপি প্রদান ও বাসা ঘেরাও করেন। ১৯৪৭ সালে ২৩ফ্রেবূয়ারি করাচিতে কেন্দ্রীয় এসেম্বেলী সভায় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র নাথ কর্তৃক বাংলায় বক্তব্য দেওয়া বাতিল হওয়ার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন অধ্যপক কাসেম সাহেব। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাস্ট্র ভাষা সংগ্রাম কমিটির কর্তৃক আহুত সফল হরতালে নেতৃত্ব দেন প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম। এ সময় অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব, তোয়াহা, শেখ মুজিবুর রহমান ( তৎ সময় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা, বর্তমান বাংলাদেশ এর স্থপতি) গ্রেফতার হন। আন্দোলনের ব্যাপকতায় ১৯৪৮ এর ১৫ই মার্চ রাস্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সব দাবী মেনে নিয়ে তদানীন্তন নাজিম উদ্দিন সরকার ৮দফা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর প্রায় ৪ বছর পর ১৯৫২ সালে খাজা নাজিম উদ্দিন চুক্তির বরকেলাপ করায় ২১ ফ্রেবূয়ারী গণ বিস্ফোরন ঘঠে এবং শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউর রহমান। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই স্বাধীন বাংলাদেশ। তিনি বাংলা ভাষাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক থেকে উচ্চ শিক্ষায় বাংলায় পাঠ্য পুস্তক প্রনয়নের পথিকৃত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে ২ হাজারের অধিক পরিভাষা সৃষ্টি করে।

বক্তরা বলেন, মহান পুরুষ প্রিন্সিপাল আবুল কাসেমের নামে বই মেলার আয়োজন নতুন প্রজন্মকে মহৎ ও দেশপ্রেমিক মানুষ সৃষ্টির অনুপ্রেরনা যোগাবে। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন ও আত্মশক্তি অর্জন, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সুস্থ ও আলোকিত সমাজ বিনির্মানে সহায়তা করবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!