পাবনায় মাটির নিচ থেকে কলস ভর্তি ‘গুপ্তধন’ উদ্ধার করলো চট্টগ্রামের কোতোয়ালী পুলিশ

গুপ্তধনের মতোই মাটির নিচে কলসিতে ভরে পুঁতে রাখা হয়েছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের চট্টগ্রাম থেকে আত্মসাৎ হওয়া টাকা।

মাত্র ১০ দিনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা পণ্যের বিপরীতে দেড় কোটি টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেছে মো. ফারুক হোসেন নামে এই প্রতিষ্ঠানের চট্টগ্রামের এরিয়া সেলস ম্যানেজার ফারুক হোসেন।

এই বিশাল অংকের টাকা আদায় করে চট্টগ্রাম থেকে লাপাত্তা হয়েছেন তিনি। পাবনা জেলায় তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মাটির নিচ থেকে আত্মসাৎ হওয়া টাকার মধ্যে ৩২ লাখ ৮৯ টাকা উদ্ধার করেছে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানা পুলিশ।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি রিজিওনাল সেলস ম্যানেজার নবী আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। এর পরপরই এই থানার এসআই মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে টাকা উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ।

একপর্যায়ে শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) পাবনা জেলা সদর থানার হেমায়েতপুর ইউনিয়নেট পূর্ব পাড়ার নিয়ামত উল্লাহপুর এলাকার নুরুল মন্ডলের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ফারুক হোসেনের স্ত্রীর কাছ থেকে আত্মসাৎ হওয়া ৩২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এই টাকাগুলো দুইটি কলসি ও একটি বাক্সের ভেতরে করে ওই বাড়ির মাটির নিচে পুঁতে রাখা ছিল।

পুলিশ এ সময় একটি ল্যাপটপ ও একটি মোবাইল সেটও জব্দের পাশাপাশি ফারুক হোসেনের স্ত্রী নুর জাহান বেগমকে আটক করে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তারেও অভিযান চালায় পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, ‘ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের টাকা সংগ্রহ করে ব্যাংকে জমা না দিয়ে ফারুক হোসেন তা আত্মসাৎ করে। গত ২২ এপ্রিল এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। পাবনা জেলা পুলিশের সহায়তায় ফারুকের স্ত্রী নুর জাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে আত্মসাৎ হওয়া টাকার বড় একটি অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতের কাছে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।’

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া এসআই মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর জাহান স্বীকার করেছেন এই টাকাগুলো ওয়ালটন কর্তৃপক্ষসহ এই সংশ্লিষ্টদের। তারা পরিকল্পিতভাবে মাত্র ১০ দিনে ১ কোটি ৫১ লক্ষ ৮৫০ টাকা সংগ্রহের পর আত্মসাৎ করে চট্টগ্রাম থেকে পালিয়ে যান। উদ্ধার হওয়া ৩২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা গুপ্তধনের মতো করে মাটির নিচে কলসি ও টিনের বাক্স ভরে পুঁতে রেখেছিলেন ফারুকের স্ত্রী নুর জাহান।’

মেহেদী হাসান আর বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওসি স্যারের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে পাবনা জেলায় অভিযান চালিয়ে প্রাথমিকভাবে এই টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। নুর জাহান স্বীকার করেছেন আত্মসাৎ করা বাকি টাকা তার স্বামী ফারুক হোসেনের কাছে রয়েছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকায় নুর জাহানকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই মামলার প্রধান আসামী ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

জানা গেছে, বিগত ৩ বছর ধরে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের পিএলসি প্রতিষ্ঠানের এরিয়া ম্যানেজার পদে চাকরি করছে ফারুক হোসেন। চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার, জুবিলী রোড, কে সি দে রোড, আমতল, নন্দনকানন এলাকার এরিয়া ম্যানেজার পদে নিয়োজিত ছিল সে।

আমতল, নন্দনকানন এলাকার বিভিন্ন ইলেকট্রিক দোকানদারদের কাছে ওয়ালটনের এলইডি বাতি, ওয়ালটন সেইফ ইমার্জেন্সি বাল্ব, টেপ, নেট ফ্যান, সিলিং ফ্যান, চার্জার ফ্যান, ডিবি বক্স, সারফেস প্যানেল লাইট বিক্রি করে পণ্যের অর্থ সংগ্রহ করা ছিল তার দায়িত্ব। লেনদেনের হিসেব করে হেড অফিসে প্রতিদিন টাকার হিসেব জমাও দিতো সে।

কিন্তু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে সম্প্রতি ১ কোটি ৫১ লক্ষ ৮৫০ টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানে জমা না দিয়ে পালিয়ে যায় চট্টগ্রাম থেকে। পরে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ।

আরএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!