তিন দিন লড়ে চট্টগ্রামের গুলিবিদ্ধ ব্যবসায়ী হার মানলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়

সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়ে তিন দিন ধরে লড়েছেন মৃত্যুর সঙ্গে। হার মেনে শেষপর্যন্ত না ফেরার দেশে চলে গেলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন খান (৪৫)।

গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রধান শহর জোহানেসবার্গের অদূরে কসমো সিটিতে এশার নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন আনোয়ার হোসেন খান। পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭ টায় মারা যান এই বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধা। খবর আকাশযাত্রার

নিহত আনােয়ার হোসেন খান চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ রসুলাবাদ গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের সেজ ছেলে। দেশে তার স্ত্রী ছাড়াও চতুর্থ শ্রেণী ও নার্সারি পড়ুয়া দুই ছেলে ও এক শিশু কন্যা রয়েছে। উত্তর সাতকানিয়া জাফর আহমেদ চৌধুরী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র আনােয়ার খান সাতকানিয়ার একসময়ের নামি ফুটবলারও ছিলেন।

১৯৯৬ সালে আনোয়ারের বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন প্রথমে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান। তার হাত ধরে ২০০০ সালে ছোট ভাই বেলায়েত হোসেনসহ আফিকায় যান আনোয়ার। তিন ভাই মিলে সেখানকার জোহানেসবার্গ শহরে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসা গড়ে তোলেন। বর্তমানে দুই ভাই দেশে আছেন। জোহানেসবার্গে আনোয়ার একাই ব্যবসা দেখতেন।

দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থানরত আনোয়ারের ভগ্নিপতি মুহাম্মদ শাহজাহান জানান, কসমো সিটিতে বাংলাদেশি মসজিদে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে জিকির-আজকার করা হয়। সেখানে আনোয়ার নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ঘটনার দিন তিনি এক পাকিস্তানিকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশি আবু বকরের দোকানে যান। আবু বকরকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নেমে ডাকতে গেলে সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। এ সময় তিনটি গুলি আনোয়ারের গায়ে বিদ্ধ হয়।

তিনি আরও জানান, অন্য বাংলাদেশীরা গুরুতর অবস্থায় আনােয়ারকে উদ্ধার করে দ্রুত স্থানীয় হেলেন জোসেফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ৩ দিনে তাকে দুইবার অস্ত্রোপাচার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৩ অক্টোবর) মারা যান তিনি।

ধারণা করা হচ্ছে, সংঘবদ্ধ কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা ওই বাংলাদেশি দোকানের সামনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিল। দোকান লাগানোর সময় তারা ডাকাতির চেষ্টা করার প্রাক্কালে আনোয়ার খান সেখানে গেলে সন্ত্রাসীরা মনে করে দোকানদার হয়তো তাদেরকে ডেকে এনেছে। অনেকটা ভয় থেকেই ডাকাতরা তাদের উপর গুলি ছোঁড়ে।

জানা যায়, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত আনোয়ার হোসেন খানের মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে বিমানে করে দেশে পাঠানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রতিবেশী প্রবাসীদের কাছ থেকে জানা যায়, আনোয়ার জোহানেসবার্গের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ব্যবসা করতেন। গত বছরের ডিসেম্বরে চট্টগ্রামে এসে একটানা ৯ মাস ছিলেন আনােয়ার খান। গত ২২ সেপ্টেম্বর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় কর্মস্থলে ফিরে আসেন। একমাসের ব্যবধানে তাকে দেশে ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে।

নিহত আনোয়ারের বন্ধু ওমানপ্রবাসী আব্দুল মান্নান জানান, আনোয়ার খান অমায়িক একজন মানুষ ছিলেন । তার কোন শত্রু থাকার কথা নয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!