ডিবির সেই ইন্সপেক্টর রুহুল আমিন দুদকের জালে, ভুয়া সনদে পাইয়ে দিতেন রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট

'হাতিয়ে নেন' ফ্রিল্যান্সারের টাকাও

একের পর এক অপরাধেও পার পেয়ে যান চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সেই ইন্সপেক্টর মো. রুহুল আমিন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) প্রতিবেদনেও রুহুল আমিনের অপকর্মের এমন চিত্র উঠে আসার পরও চাকরিতে বহাল ছিল পুলিশের এই কর্তা। শুধুই প্রতিবেদনই নয়, পুলিশের এই বিতর্কিত ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে মামলাও করে দুদক।

দুদকের মামলার বিষয়টি জানতে পেরেই, কক্সবাজার জেলার পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক থেকে আগেভাগেই বদলি হন তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত পদে। সর্বশেষ ওসির পদ ভাগিয়ে নিতে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ বদলি হয়ে আসলেও ঠাঁই হয় তার সিএমপির ডিবির ইন্সপেক্টর পদে।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানার ইসলামবাদ ইউনিয়নের মৃত জালাল আহমদের পুত্র তৈয়বের পরিবারের সাত সদস্য। তারা জন্মসূত্রে রোহিঙ্গা। বৈধ জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয়তা সনদ না থাকার সত্ত্বেও বাংলাদেশি পাসপোর্ট পেতে তাদের পক্ষে প্রতিবেদন দেন কক্সবাজার জেলার পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন।

এমন অভিযোগ জানতে পেরে ঘটনার অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় রুহুল আমিনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।

এছাড়া কক্সবাজার জেলা পুলিশ বিশেষ শাখার পরিদর্শক দায়িত্ব পালনকালে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পাসপোর্ট পেতে শত শত রোহিঙ্গার পক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন এই কর্মকর্তা।

এই ঘটনায় অনুসন্ধান করে দুদক জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। মামলা থেকে রুহুল আমিন নিজেকে বাঁচাতে তার দেওয়া রোহিঙ্গাদের পক্ষে প্রতিবেদনটি পরে বাতিলের সুপারিশ করেন।

এ ঘটনায় ২০২১ সালের ১৭ জুন কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মো. রুহুল আমিন সহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক।

দুদকের এই মামলায় রুহুল আমিন মামলায় ১৫ নম্বর আসামি ছিলেন। মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের ২ নম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

পরে দুদক মামলার তদন্ত থেকে অব্যাহতি পেতে দুদক কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করেও সাবেক এই পরিদর্শক ব্যর্থ হন বলে জানা যায়।

এই মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছেন বলে জানান দুদক পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।

দুদকের পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ‌‘২০২১ সালে এনআইডি জালিয়াতির মামলায় রুহুল আমিনসহ মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। এই মামলায় আদালতে রিপোর্ট আসেনি।’

এদিকে চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর গুলবাগ আবাসিক এলাকার আল বারাকা কুলিং কর্নার থেকে আবু বকর সিদ্দিক নামের এক ফ্রিল্যান্সারকে আটক করে ডিবির পরিদর্শক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে একটি দল। এসময় ফয়জুল আমিন বেলাল নামে আরেকজনকেও গাড়িতে তুলে নিয়ে যান মনসুরাবাদ গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে।

সেখানে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩০ মিনিটে আবু বক্কর সিদ্দিকের আইডি থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে ২ লাখ ৭৭ হাজার ডলার হস্তান্তর করেন রুহুল আমিন। এছাড়া আবু বক্কর সিদ্দিকের সিটি ব্যাংক ও ইউসিবিএল অ্যাকাউন্ট থেকে ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা জাহিদ হোসেন স্বাধীনের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হস্তান্তর করে নিয়ে নেন।

পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে আবু বক্কর সিদ্দিক ও ফয়জুলকে ১০৩ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠালে জামিন নিয়ে তারা বেরিয়ে আসেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি অন্য একটি মোবাইল ফোন কিনে নিজের ফ্রিল্যান্সিং আইডি লগইন করে আবু বক্কর সিদ্দিক দেখতে পান, গত ১৩ বছর ধরে তার আয়ের সব ডলার নিয়ে নিয়েছে পরিদর্শক রুহুল আমিন।

মানি লন্ডারিং মামলায় ফাঁসানো ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আবু বক্কর সিদ্দিকের কাছ থেকে ডলার লুটের ঘটনায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা উত্তর-দক্ষিণ (ডিবি) পরিদর্শক রুহুল আমিনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গত ৫ মার্চ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরিফুল ইসলামের আদালতে মামলাটি করেন আবু বক্কর সিদ্দিকের স্ত্রী হুসনুম মামুরাত লুবাবা। শুনানি শেষে আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এই মামলায় অন্য আসামিরা হলেন ডিবি পুলিশের এসআই আলমগীর হোসেন, মৃদুল কান্তি দে, শাহ পরান জান্নাত, এএসআই বাবুল মিয়া, কনস্টেবল মুমিনুল হক ও আবদুর রহমান এবং জাহিদ হোসেন স্বাধীন। তাদের মধ্যে স্বাধীন ছাড়া অন্য সবাই পুলিশ সদস্য।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!