ঠিকাদার ছাড়াই বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ, ৪ প্রকৌশলীর অনিয়মের আখড়া রাঙামাটির বিদ্যুৎ বিভাগ

টাকা ছাড়া ট্রান্সফরমার বসান না প্রকৌশলী

রাঙামাটির বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে লাইন সম্প্রসারণের অভিযোগ উঠেছে। বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর মদদে তিন সহকারী প্রকৌশলী মিলে এসব অনিয়ম করে বেড়াচ্ছে। ঠিকাদার ছাড়া বিদ্যুৎ লাইন সম্প্রসারণ ও নিয়মে বাইরে পোলের তার ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন এলাকায় ট্রান্সফরমার লাগানোর জন্যও তারা ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রাঙামাটির বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট তিনজন হলেন সহকারী প্রকৌশলী আতিকুল আলম, আবুল হাসেম, ওয়াহেদুজ্জমান শীতল। এছাড়া তাদের দলে আরও আছেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী সরওয়ার কামাল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাঙামাটি উপজেলা কোয়ার্টারের পেছনে ভাণ্ডারি টিলায় পাঁচটি পোল ও আনুষাঙ্গিক মালামাল দিয়ে অবৈধ আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে লাইন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এজন্য কোনো ধরনের ঠিকাদারও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এছাড়া ব্যবহৃত এসব মালামাল এক ঠিকাদারের। ওই এলাকায় আর্থিক সুবিধা নিয়ে স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে লাইন সম্প্রসারণ করেন সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসেম।

অথচ পিডিবি সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী ঠিকাদারের মালামাল সরকারি সংরক্ষিত এলাকায় রাখার নিয়ম নেই। দরপত্র দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ ছাড়া এভাবে লাইন সম্প্রসারণও করা যায় না। কোনো ঠিকাদারের পোল ও আনুষাঙ্গিক মালামাল থাকলে তা স্টোরে (ভাণ্ডার) জমা দিতে হয়।

ওই মালামালের ঠিকাদার মাহমুদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মাহী অভিযোগ করে বলেন, ছয় কার্যাদেশের প্রতিটি পাঁচ লাখ টাকার বেশি মূল্যের কাজ। জুনের আগে আংশিক বিল উত্তোলন করলেও সম্পূর্ণ বিল এখনও পাইনি। কাজ শেষ হওয়ার আগে আমার কাজের এসব ৩৪টি পোল ও মালামাল মাঝের বস্তি উপকেন্দ্রের সংরক্ষিত এলাকায় ৩৪টি পোল ২ বান্ডেল তার নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুর রহমানের নির্দেশে রাখা হয়। এমনকি আমাকে দিয়ে অতিরিক্ত কাজও করানো হয়েছে। আমার বিল পরিশোধ না করলে আমি লিখিত অভিযোগ করবো।

সরেজমিন মাঝের বস্তি উপকেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ৩৪টি পোল ২ বান্ডেল তার থাকার কথা থাকলেও সেখানে রয়েছে মাত্র এক বান্ডে তার ও প্রায় ১২টি পোল।

জানা গেছে, এর আগে আবুল হাসেম কালিন্দিপুর ববি বাবুর এলাকায় ট্রান্সফরমার বসানোর জন্য ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে। মানিকছড়ির সাপছড়িতে স্থানীয় স’মিলের মালিকের ছেলে আবচার থেকে ২৫হাজার টাকা ও শিমুলতলীতে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ট্রান্সফারমার বসানো হয়। এছাড়া মানিকছড়ি বিসিক এলাকায় লোড বাড়িয়ে দিতে রাজামিয়া থেকে ২৫ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসেম অবৈধ অর্থ আয়ের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীর কর্নেলহাট এলাকায় জায়গা কিনেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিক নবীর নেতৃত্বে অপর দুই শ্রমিক কুদ্দুছ ও জসিম অবৈধ লাইন সম্প্রসারণ করে আসছে।

এই বিষয়ে জানতে সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসেমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জরুরি কাজে আছেন বলে সংযোগ কেটে দেন। পরে আবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।

এই বিষয়ে স্টোরকিপার মীর হুমায়ন কবির রতন বলেন, ‘স্টোর থেকে ভাণ্ডারি পাহাড়ের জন্য কোনো মালামাল ইস্যু হয়নি। এসব মালামাল কোথা থেকে কিভাবে আসলো কেউ জানে না। বাইর থেকে পোল ও আনুষাঙ্গিক মালামাল দিয়ে সম্প্রসারণ লাইন দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিন জায়গায় তিনটি ট্রান্সফারমার নষ্ট হয়েছে আমি শুনেছি। তিন জায়গায় সহকারী প্রকৌশলী ওয়াদুজ্জমান শীতলসহ অন্যরা গ্রাহকদের সঙ্গে দেন-দরবার শুরু করেছে।’

ঠিকাদার মাহীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কাজের আরও ছয় লাখ টাকা বিল দেয়নি, ১০ লাখ টাকার ওপরে কাজ করিয়েছে। আমার পোল ও আনুষাঙ্গিক মালামাল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে লাইন সম্প্রসারণ করছে। আমি এই বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে অভিযোগ করবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!