চাচাকে বাবা বানিয়ে জমি আত্মসাৎ করতে চান জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা

চাচাকে বাবা সাজিয়ে ভুয়া কাগজপত্র বানালেন প্রথমে জনতা ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা বাদল কান্তি দাশ। উদ্দেশ্য কোটি টাকার জায়গা দখল। বাদলের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের নথি এবং সরকারী চাকরিতে যোগদানের কাগজপত্রে বাবার নাম যোগেশ চন্দ্র দাশ থাকলেও জায়গা দখলের বেলায় তিনি বাবা বানিয়ে নিলেন চাচা ক্ষেত্রমোহন দাশেকে। ভুয়া বাবার নাম দিয়ে তৈরি করে নিলেন জমির দলিলপত্র।

কোটি টাকার জমির লোভে নিজের বাবার নাম বদলে দেওয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

শুধু বাবার নাম ভুল দিয়েই ক্ষান্ত হননি বাদল কান্তি দাশ, নিজের চাচাকে বাবা বানাতে বাবার ওয়ারিশ প্রমাণের জন্য বানিয়েছেন ভুয়া পরিচয়পত্র, ভুয়া পাসপোর্ট এমনকি ভুয়া ওয়ারিশ সনদও বের করেছেন সিটি কর্পোরেশন থেকে।

নগরীর সদরঘাট থানাধীন দক্ষিন নালাপাড়ার চট্টেশ্বরী ভবনের ৪ গন্ডা জমি দখল করতেই এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বাদল কান্তি দাশ।

জানা গেছে, এই জায়গার প্রকৃত মালিক ছিলেন মৃত ক্ষেত্রমোহন দাশ। তার মৃত্যুতে এই সম্পত্তি ওয়ারিশসূত্রে মালিক তার চারপুত্র অরুন কান্তি দাশ, নারায়ন কান্তি দাশ, মধুসূদন দাশ ও শিবু শংকর দাশ। কিন্তু বাঁধাহয়ে দাড়ায় ক্ষেত্রমোহন দাশের কথিতপুত্র বাদল কান্তি দাশ। তিনি এই চার গন্ডা জায়গায় নিজের অংশীদারিত্ব নেওয়ার জন্য মধুসূদন দাশ ব্যতিত বাকি তিন ভাই ও তাদের স্ত্রীদের লোভ দেখিয়ে নিজেকে ক্ষেত্রমোহন দাশের পুত্র প্রমাণের জন্য কাগজপত্র জালিয়াতি করেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়টি তদন্ত করেন পিবিআইয়ের এসআই ফজলুল করিম।

ক্ষেত্রমোহন দাশের আসল পুত্র মধুসূদন দাশ জানান, বাদল কান্তি দাশ সম্পত্তি আত্মসাতের জন্য প্রকৃত মালিক সেজে মাদারবাড়ী মৌজার বি এস ৫৩০ নং খতিয়ানের ৩৯৮৯ দাগের ০.০৬০৬ একর সম্পত্তির অংশ দাবী করে নামজারী মামলা করেন। যার নং- ১-৮৮৬/১৬। তিনি নিজের নামে নামজারীও করেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষেত্রমোহন দাশের আসল পুত্র মধুসূদন দাশ একটি মিস মামলা করেন। এর প্রেক্ষিতে আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) জায়গার দলিলপত্র পর্যালোচনা করে দেখেন যে, বাদল কান্তি দাশ মৃত ক্ষেত্রমোহনের পুত্র নন তাই তিনি (সহকারী কমিশনার) বাদল দাশের ভুয়া খতিয়ানটি সংশোধনের আদেশ দেন।

মধুসূদন দাশ আরও জানান, এরপর প্রতিনিয়ত তার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকে বাদল কান্তি দাশ ও তার সহযোগীরা। মধুসূদন দাশ আশ্রয় নেন সদরঘাট থানার। সদরঘাট থানার তৎকালীন ওসি মর্জিনা আক্তার বেশ কয়েকবার এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন। থানায় সমাধান না পেয়ে মধুসূদন দাশ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। এ মামলায় বাদল কান্তি দাশসহ, তার সহযোগী ক্ষেত্রমোহনের দুই পুত্র অরুন কান্তি দাশ ও শিবু শংকর দাশ এবং তাদের স্ত্রী মিরা দাশ ও সেপু দাশসহ মোট সাত জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। ১০ ডিসেম্বর সদরঘাট থানা পুলিশ পাঁচজনকে আটক করলেও পলাতক রয়েছে প্রধান আসামী বাদল কান্তি দাশ ও তার পুত্র উজ্জ্বল কান্তি দাশ।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী ও ভূক্তভোগী বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মধুসূদন দাশ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই আদালত যে আদেশ দিবে আমি তা মেনে নিব। কিন্তু আসামীরা জামিনে বের হয়ে আবার আমার ক্ষতি করবে। যারা গ্রেফতার হননি তারা হুমকি দিচ্ছে আমাদের।’

এ বিষয়ে জানতে বাদল কান্তি দাশের মুঠোফোনে কল করা হলেও সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!