চট্টগ্রাম সিটির ভোটে ৩৬ প্রার্থীর হঠাৎ ‘জোট’, নালিশ নিয়ে ধরনা নেতাদের বাড়ি বাড়ি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের অস্পষ্ট অবস্থানে অস্বস্তিতে পড়েছেন দলের মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অনেকে আবার বলছেন, কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা আদায় করে নিচ্ছেন বড় নেতাদের গোপন সমর্থনও। তবে প্রকাশ্যে এই ধরনের অবস্থান এখন পর্যন্ত খুব একটা দেখা না গেলেও এই ইস্যুতে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান দলের মনোনীত প্রার্থীদের ফেলে দিয়েছে বিভ্রান্তিতে। আর সেটা এতটাই স্পর্শকাতর হয়ে ওঠেছে যে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেও এসব প্রার্থী নিজেরা নিজেরা জোট বেধে ধরনা দিচ্ছেন নেতাদের দপ্তরে দপ্তরে।
সর্বশেষ এমন দৃশ্য দেখা গেল মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায়। এদিন আওয়ামী লীগ মনোনীত মোট ৩৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী দল বেধে দেখা করলেন চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে।
জানা গেছে, এর আগে গত ৩ জানুয়ারি ৯ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী নুরুল আবছার মিয়ার বাসায় প্রথমবারের মত একসঙ্গে বসেন ৪১ ওয়ার্ড ও ১৪ ওয়ার্ডের দলের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে ৪১ জন প্রার্থী। বৈঠকে উপস্থিতি একাধিক প্রার্থী জানান, সেখানে অংশ নেন সাধারণ ওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া ৩৩ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মনোনয়ন পাওয়া ৮ জন। সেই বৈঠক থেকেই কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে নগর আওয়ামী লীগ ও সিনিয়র নেতাদের ভূমিকা স্পষ্ট করার দাবি তোলার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এর অংশ হিসেবে পরদিন ৪ জানুয়ারি নগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা চলাকালে সেখানে যান এসব কাউন্সিলর প্রার্থী।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসার বৈঠকে উপস্থিত একজন প্রার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দলীয় প্রার্থী নিয়ে সিনিয়র নেতাদের অবস্থান আমাদের কাছে স্পষ্ট না। যেহেতু আমরা দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছি, সেহেতু আমাদের নির্বাচনের সাথে দলেরও একটা সম্পর্ক আছে। কিন্তু এই বিষয়ে দল থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সমস্যাও হচ্ছে। আমরা মোশাররফ ভাইকে সবকিছু জানিয়েছি।’
ঘন্টা দুয়েক ধরে চলা এই বৈঠকে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দলীয় প্রার্থীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন জানিয়ে ওই সূত্র চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিনি সব শুনেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হানিফ ভাইকেও তিনি আমাদের সামনে কল দিয়েছেন। যদিও কেউ কল রিসিভ করেননি। তবে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করে বলেছেন এসব বিষয়ে তিনি কেন্দ্রে কথা বলবেন।’
জানা গেছে, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বাসা থেকে বেরিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থীরা যান মেয়রপ্রার্থী রেজাউল করিমের বহদ্দারহাটের বাসায়।
আওয়ামী লীগের মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের এই নতুন ‘ঐক্য’ প্রসঙ্গে এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বললেন, ‘আমরা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল এটি। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের মনোনয়ন দিয়েছেন। এর পরেও আমাদের নিজেদের মত করে আলাদা প্ল্যাটফর্ম করতে হচ্ছে। কাজেই সংকটটা কোন্ জায়গায় ও কতটা গুরুতর সেটা বোঝাই যাচ্ছে।’
দলের মনোনীত প্রার্থীরাই কেন দলের অবস্থান জানতে এমন মরিয়া হয়ে উঠলেন— এমন প্রশ্নে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বলেন, ‘দেখুন এবারই প্রথম কাউন্সিলর পদে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আগে তো এটা ছিল না। কিন্তু এবারের নির্বাচনটা আগেরগুলোর চেয়ে আলাদা। এখন কথা হলো আমি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী। এবারে দেখা যাচ্ছে কাউন্সিলর পদে আমার সাথে যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী তিনি নৌকার নির্বাচন করছেন। আসলে কেন করছেন? তার উদ্দেশ্য নৌকার কর্মী সেজে বিদ্রোহী প্রার্থীর কাজ করা। এজন্যই কাউন্সিলর ও মেয়র পদে দলের একই টিম কাজ করা জরুরি। না হলে সংকট নিরসন হবে না।’
তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে শুধুমাত্র দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নগর আওয়ামী লীগ। এই সিদ্ধান্ত না মেনে যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন অথবা ইন্ধন দেবেন তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়। গতকালকের বর্ধিত সভা শেষেই দল মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীদের এই কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে কথায় যে তারা আশ্বস্ত হতে পারেননি, সেটি মঙ্গলবার সন্ধায় মোশাররফ-রেজাউলদের বাসায় বাসায় তাদের ধরনা দেখলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে।
এআরটি/সিপি