করোনাকালেই ১৭ খাতে চাঁদার জুলুম বেপজা পাবলিক স্কুলে

চট্টগ্রামের বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি ও টিউশন ফি ছাড়া সব ধরনের অতিরিক্ত বিবিধ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৯ হাজার ৮৯৫ টাকা করে অন্তত কোটি টাকা এভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) থেকে জারি করা নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই এটা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা।

জানা গেছে, গত ১৮ নভেম্বর মাউশি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে বলা হয়, পূর্বাপর বিষয়গুলো বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না বা করা হলে তা ফেরত দেবে অথবা তা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়, যদি কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে পতিত হন, তাহলে তার সন্তানের টিউশন ফির বিষয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষ বিবেচনায় নেবেন। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন কোনো কারণে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে যত্নশীল হতে হবে। পাশাপাশি বলা হয়, ২০২১ সালের শুরুতে যদি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন ফির নামে অর্থ নিতে পারবে না। এমন নির্দেশ থাকলে বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে এসব পরোয়া করছেন না।

অভিযোগ আছে, বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে সরকারের নির্ধারিত টিউশন ফি ছাড়া অতিরিক্ত সকল বিবিধ সেশন ফি বাবদ ৪০০০ টাকা, গ্রন্থাগার ফি বাবদ ২০ টাকা, ল্যাবরেটরি ফি বাবদ ৫০০ টাকা, ডায়েরি ফি বাবদ ২০০ টাকা, পাঠ্যক্রম ফি বাবদ ১০০ টাকা, অটোমেশন ফি বাবদ ৬০০ টাকা, যোগাযোগ বা এসএমএস ফি বাবদ ২৫০ টাকা, ক্রীড়া ফি বাবদ ৭০০ টাকা, স্কাউট ফি বাবদ ৫০ টাকা, আইডি কার্ড বাবদ ৩০০ টাকা, ম্যাগাজিন ফি বাবদ ৩৫০ টাকা, নিরাপত্তা ফি বাবদ ৮০০ টাকা, টিউশন ফি বই বাবদ ২৫ টাকা, পানি, বিদ্যুৎ মেরামত ফি বাবদ ১৩০০ টাকা, জাতীয় দিবস উপলক্ষে ৭০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, মাউশি টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো উন্নয়ন বাবদ ফি আদায় না করতে বললেও সেই নির্দেশ অমান্য করে বেপজা স্কুল এন্ড কলেজ প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৯ হাজার ৮৯৫ টাকা করে মোট ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত বিবিধ ফি বাবদ আদায় করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিভাবক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকার ফি নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে তা মানছে না। বাচ্চাদের জিম্মি করে অভিভাবকদের রীতিমতো হয়রানি করা হচ্ছে। করোনার মহামারীতে সরকার টিউশন ফির বাইরে অতিরিক্ত কোনো ফি না নেওয়ার আদেশ দিলেও তারা বিবিধ খরচ দেখিয়ে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি ফি ও টিউশন ফি ছাড়া বিবিধ ৯ হাজার ৮৯৫ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, করোনা মহামারির কারণে আগের মতো আয় রোজগার করা সম্ভব না হলেও কোনোভাবে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ভর্তি ফি ও টিউশন ফি পরিশোধ করে আসছি। এর মধ্যে বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে সকল ফি আদায়ের জন্য অভিভাবকদের চাপ দিয়ে আসছে। আসলে এসব অনিয়ম কেউ দেখছে না। তাদের ইচ্ছেমতো আমাদের জিম্মি করে রাখছেন।’

এ বিষয়ে জানতে বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শেখ শরিফুল ইসলাম ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় থাকার কারণে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা এমএ মোমেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘আমরা মাউশির নির্দেশের বাইরে কোন ফি আদায় করছি না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের বলা হয়েছে। কোন অভিভাবককে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে না।’

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও করোনাকালীন বিবিধ ফি আদায়ের কথা মাউশির নির্দেশনায় নেই— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সকল অতিরিক্ত বিবিধ ফি আদায় করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের প্রমাণ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে আছে— একথা জানানো হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘অভিভাবকরা মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমরা মাউশির নির্দেশের বাইরে কোনো ফি নিচ্ছি না।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার (ইনচার্জ) মশিউদ্দিন বিন মেসবাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় এসেছি। বিষয়টি আমি জানি না। আমি ম্যানেজিং কমিটির সাথে কথা বলে একসপ্তাহ পর আপনাকে জানাবো।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ স ম জামশেদ খোন্দকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের থেকে টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো ফি আদায় করতে পারবে না। মাউশির নির্দেশ যদি কোনো প্রতিষ্ঠান অমান্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিষয়টি দেখছি।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!