চট্টগ্রামে পুলিশ-সন্ত্রাসীর বিশেষ সখ্যতা!

নুরুল আলম শিপু। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় তার পেশা ছিনতাই। আবার সন্ত্রাসীর তকমাও আছে তার নামের পিছনে। চট্টগ্রাম নগরী চকবাজার, বহদ্দারহাট এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি দীর্ঘদিন। তবে শিপুর রাজনৈতিক পরিচয় তিনি চকবাজার থানা ছাত্রদলের সভাপতি।

দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ চলাকালে নাশকতা ঘটনা সহ অর্ধডজন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামী শিপু। এসব মামলা এখন বিচারাধীন। পাঁচলাইশ থানায়ও তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্ফোরক মামলা। চকবাজার থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে আসামি তালিকায়ও রয়েছে সন্ত্রাসী শিপুর নাম।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে চকবাজার কাতালগঞ্জ এলাকায় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেফতার হন তিনি। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছিল ভুক্তভোগী। মামলা নং-১৫(২)১৭।

২০১৮ সালে জামিনে মুক্তি ফের নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেফতার হয় চকবাজার থানা পুলিশের হাতে। এছাড়াও নানা অপরাধ করে নগরীর বিভিন্ন থানার মামলার নথিতে আছে শিপুর নাম।

সম্প্রতি এই ছিনতাইকারী ও ছাত্রদল নেতা শিপুর চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রূপক কান্তি চৌধুরীর সখ্যতা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এসআই রুপককে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন শিপু।

জানা গেছে, কয়েকদিন আগেও বহদ্দারহাট এলাকায় শিপুর ‘আস্তানায়’ যান এই এসআই রূপক। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সখ্যতা দীর্ঘদিনের। শিপুর সঙ্গে জড়িয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে পুলিশের এই এসআই। বহদ্দারহাট মোড় ও পাশের এলাকাগুলোতে শিপুর নানা অপরাধে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এসআই রুপকের বিরুদ্ধে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার ও পাঁচলাইশ জোন এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ চলাকালে ককটেল হামলা, পেট্রোল বোমাসহ নাশকতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল শিপুর।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনীতিতে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন ও সহ সভাপতি এমইবি গ্রুপের শামসুল আলমের অনুসারী শিপু আন্দরকিল্লা থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ছিনতাই চক্রের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। এছাড়া শিপু নগর বিএনপির আরেক সহ সভাপতি আবু সুফিয়ানের স্ত্রীর ছোট বোনের জামাই।

শিপু বিএনপির ছাত্র সংগঠনের নেতা হলেও তার বড় ভাই নুর মোস্তফা টিনু যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। যদিও যুবলীগের কোনো পর্যায়ে টিনুর কোনো পদ নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বড় ভাই টিনুর ছত্রছায়ায় শিপুর অপরাধ সাম্রাজ্যে কোনো ঘাটতি হয়নি। উল্টো দুই ভাই একত্রে গড়ে তুলেছে সন্ত্রাসী বাহিনী।

পুলিশের তালিকায় কিশোর গ্যাং গডফাদার হিসেবে নাম আছে নুর মোস্তফা টিনুরও। গত বছর দেশব্যাপী জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলে চট্টগ্রামে প্রথম অত্যাধুনিক দুইটি অস্ত্রসহ র‍্যাবের হাতে আটক হয়ে এখনো কারাগারে টিনু। টিনু কারাগারে থাকলেও ভাইয়ের অপরাধ সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন শিপুর হাতে।

এসব বিষয়ে জানতে নুরুল আলম শিপুর তিনটি মোবাইল নম্বরে শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কল করা হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

শিপুর সঙ্গে সখ্যতার বিষয়ে জানতে বহদ্দারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই রূপক কান্তি চৌধুরীর মোবাইলে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!