চট্টগ্রামে নমুনা জট প্রভাব ফেলছে করোনার চিকিৎসায়

সুস্থ রোগী হতে পারে ফের পজিটিভ

চট্টগ্রামের প্রধান করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রে তৈরি হয়েছে করোনা পরীক্ষার অস্বাভাবিক নমুনা জট। আর এই জট সরাসরি প্রভাব ফেলছে চট্টগ্রামে করোনার মূল চিকিৎসাকেন্দ্র চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায়। পরীক্ষার জন্য নগরী ও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত নমুনা নিয়ে তৈরি হওয়া জটে একদিকে রোগীদের সুস্থতার স্বীকৃতি (ছাড়পত্র) পেতে দেরি হচ্ছে, অন্যদিকে আবার সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীরও আবার করোনা পজিটিভ হয়ে পড়ার সম্ভাবনাও দেখা দিচ্ছে।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) তৈরি হওয়া নমুনা জট এখন পর্যন্ত খুব বড় সমস্যায় না ফেললেও রোগী বাড়লে করোনা চিকিৎসায় বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এ সংকট কাটাতে এখনই নমুনা পরীক্ষার ধারণক্ষমতা বাড়ানো জরুরি— এমন পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি জেনারেল হাসপাতাল থেকে পাঠানো করোনা রোগীদের নমুনাগুলো অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল জানানোর বিষয়েও জোর দিচ্ছেন তারা।

নমুনার জট কিভাবে জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় প্রভাব ফেলছে— এই প্রশ্নের জবাবে জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কোন রোগীর পর পর দুটি নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলে আমরা তাকে সুস্থ ঘোষণা করে হাসপাতাল থেকে ছাড়তে পারছি। কিন্তু এখন যে প্রসেসে হচ্ছে তাতে ৮ দিন বেশি সময় লাগছে। ধরুন একটা স্যাম্পল পাঠালাম আর ৪ দিন পর তার রেজাল্ট এলো। এই রেজাল্ট আসা ছাড়া তো আরেকটা নমুনা পাঠানোর সুযোগ নেই আমাদের। পরের নমুনা পাঠাতে এক দুই দিন সময় নিলে তার সাথে আরও ৪ দিন যোগ করতে হচ্ছে। এই দেরি হওয়াটা একটা সমস্যা। না হলে আমরা আরও রোগী বাসায় ছাড়তে পারতাম হয়তো।’

‘এখনও এটা খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু রোগী বেড়ে গেলে তখন এর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করছি’— যোগ করেন ডা. আব্দুর রব।

এই সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আসলে ল্যাব তো একটাই। উনাদের আমরা বলেছি আইসোলেশন ওয়ার্ডের নমুনাগুলো একটু যত দ্রুত সম্ভব করে দেওয়ার জন্য। তবে সবসময় তো এটা সম্ভবও না। খুব জরুরি হলে তারা ২-১ দিনে করে দেয়। চমেকে টেস্ট শুরু হলে হয়তো এই সমস্যাটা থাকবে না। বা আমরা প্রায়োরিটি দিয়ে টেস্ট করাতে পারবো।’

অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষার এই জটের কারণে খানিকটা হতাশা ছড়িয়েছে ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যেও। জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজন করোনা রোগী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের একটা নমুনা নেগেটিভ আসার পর আরেকটা নমুনা নিয়ে গেল। এটা পরীক্ষা করতে যদি ৪ দিন লাগে, ৪ দিন পর নমুনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেও এই মাঝের ৪ দিন তো আমরা আমাদের সাথে থাকা অন্য রোগীদের থেকে আবারও সংক্রমিত হতে পারি।’

রোগীদের তরফ থেকে উঠা এই প্রশ্নের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে গিয়ে জানা গেল, একবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সেরে উঠলে রোগীর এই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর এখনও অবশ্য মেলেনি। তবে অন্যান্য ভাইরাস এবং করোনাভাইরাসের এর আগেকার সংক্রমণগুলো থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো ভাইরাসে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে উঠলে রোগীর শরীরে ওই ভাইরাসের এন্টিবডি তৈরি হয়। যে এন্টিবডি তাকে ওই ভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম করে তোলে।

অতীতের বিভিন্ন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে এমন অভিজ্ঞতা থাকলেও চীন ও জাপান থেকে পাওয়া কিছু খবরে জানা গেছে সেখানে আক্রান্ত কিছু রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার পর যারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন পরীক্ষায় তারা আবার পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। তবে দ্বিতীয়বার পজিটিভ হওয়া এই ব্যক্তিরা নতুন করে কাউকে সংক্রমিত করতে পারেন না— এটিই এখন পর্যন্ত আশার কথা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!