চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীদের ‘ফ্লুইড ম্যানেজমেন্টে’ বড় ঘাটতি, হাসপাতালে বাড়ছে চাপ

২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১০০

চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছেই। ওদিকে ডেঙ্গু শনাক্তের পর যারা স্থিতিশীল অবস্থায় বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন— এমন অনেক রোগীও এখন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। মূলত পর্যাপ্ত তরল খাবার খেতে না পারা, খেলেও বমি হওয়া এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণেই হাসপাতালমুখো হচ্ছেন তারা।

এই অবস্থার জন্য রোগীর শরীরে ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট (তরল ব্যবস্থাপনা) ঠিকমতো না হওয়াকে দায়ী করছেন ডাক্তাররা। এজন্য বেশি বেশি প্রোটিন ও তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা।

ডাক্তারদের মতে, আক্রান্ত হওয়ার পরও যাদের অবস্থা স্থিতিশীল তারা বাসায় চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে যারা তরল খাবার খেতে পারছেন না, খেলে বমি হয়ে যাচ্ছে, যারা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং যাদের কোনো ধরনের রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

চট্টগ্রামে শনিবার (৫ নভেম্বর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ১০০ জন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছে বন্দর এলাকার বাসিন্দা তৌহিদ নামের এক শিশু।

শনিবার বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসেন ব্যবসায়ী নোমান শেখ। তার তিনদিন আগে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের পর ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু চারদিন ধরে তিনি তরল খাবার খেতে পারছেন না। কিছু খেলেই বমি হয়ে যাচ্ছে। ফলে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে মাথা পর্যন্ত তুলে দাঁড়াতে পারছেন না। ডাক্তার দেখে আজ তাকে ওয়ার্ডে ভর্তি দেন।

বহির্বিভাগ ঘুরে এই ধরনের রোগীর দেখা মিলেছে বেশি। যাদের অনেকে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। কিন্তু ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো না হওয়ার কারণে তাদের অবস্থার অবনতি হচ্ছে, ভর্তি হতে হচ্ছে হাসপাতালে।

ডেঙ্গু রোগীর বিপজ্জনক লক্ষণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন বহির্বিভাগের রেসিডেন্ট ফিজিশিয়ান ডা. মো. সাহেদ উদ্দিন বলেন, ‘কারও তীব্র পেটে ব্যথা হওয়া, বারবার বমি বা শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্তপাত হওয়া, প্রস্রাব কমে যাওয়া—এর যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে আসতে হবে। তখন দ্রুত রোগীকে স্যালাইন দিতে হবে, রিহাইড্রেশন করতে হবে।’

ডেঙ্গু নিয়ে পুষ্টিবিদরাও দিচ্ছেন নানান পরামর্শ। পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুব জরুরি। এই সময় পানিশূন্যতা, দুর্বলতা, ক্লান্তির পাশাপাশি রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণও কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে খাবার তালিকায় প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখতে হবে। প্রোটিন খুব দ্রুত আরোগ্য লাভ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।’

তিনি বলেন, ‘এই সময় মাংস, মাছ, ডাল, ডিম, বাদাম, দুধ ও দই খাবার তালিকায় রাখতে হবে। দই বা লাচ্ছি উপকারি খাবার। এটা প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস। দইয়ে অনেক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা আমাদের অন্ত্রের জন্য দরকার। এসব ব্যাকটেরিয়া সহজে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চিকেন স্যুপ, বাদাম ও মিল্ক শেক, পুডিং খুব উপকারী এবং সহজপাচ্য খাবার। জ্বরে আক্রান্ত রোগী যেহেতু ভারী খাবার খেতে পারে না, তাই পুষ্টিকর হালকা খাবার একটু পর পর গ্রহণ করলে শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ হয়।’

পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি বলেন, ‘প্রোটিনের পাশাপাশি আয়রনযুক্ত খাবার দিতে হবে, যাতে রক্তে প্লাটিলেটের ভারসাম্য রক্ষা পায়। খেজুর, কলা, ডালিম, তরমুজ, ছোলা, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, কলিজা, লাল মাংস নিয়মিত খেতে হবে। ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত খাবার যেমন—লেবু, কমলা, মাল্টা, আমলকি, জলপাই, জাম্বুরা, আনারস, কিউই, বেরিস, কাঁচা মরিচ খাওয়া যেতে পারে। ভিটামিন ‘সি’ আমাদের শরীরে সহজে আয়রন শোষণে সাহায্য করে, পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।’

ডেঙ্গু রোগীদের খাবারে ভিটামিন ‘কে’ যুক্ত খাবার থাকা জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভিটামিন ‘কে’ রক্তজমাট বাঁধতে ও রক্তপাতের ঝুঁকি কমায়। পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রোকলি, বিট, টমেটো, ধনেপাতা, লেটুসপাতা খাবার তালিকায় রাখতে হবে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের ভিটামিন ‘কে’ যুক্ত খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই। প্লাটিলেট বাড়াতে পেঁপে পাতা বা মিষ্টি কুমড়ার জুস খাওয়া যেতে পারে। পেঁপে পাতা সেদ্ধ বা ছেঁচে রস নিয়ে, সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন রোগীরা। এছাড়া প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবারও খেতে হবে।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!