চট্টগ্রামে আজ বসছে ভার্চুয়াল আদালত, হবে জামিন শুনানি

কিছু সমস্যা দেখছেন প্রবীণ আইনজীবীরা

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত-দ্বিমত ও জটিলতা নিয়েই মঙ্গলবার (১২ মে) থেকে চট্টগ্রাম আদালতেও শুরু হচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্ট কার্যক্রম। মঙ্গলবার (১২ মে) সকাল ১১টা থেকে শুরু হবে ভার্চুয়াল কোর্ট।

করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অন্যদিকে ন্যায়বিচার যাতে লঙ্ঘন রোধ করতে বিচার প্রক্রিয়া চালু রাখতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে মামলার কার্যক্রম পরিচালনায় বিশদ নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ভার্চুয়াল পদ্ধতির আদালতে শুরুর দিকে শুধু জামিন শুনানি পরিচালিত হবে। পরবর্তী মামলার বিচার (ট্রায়াল), বিচারিক অনুসন্ধান (ইনকোয়ারি), যুক্তিতর্ক (আরগুমেন্ট) ও রায়সহ মামলার যাবতীয় কার্যাবলী পরিচালনার প্রস্তুতি চলছে।

ভার্চুয়াল আদালত চলবে এভাবেই।
ভার্চুয়াল আদালত চলবে এভাবেই।

এদিকে এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন আইনজীবীরা। সঠিক প্রশিক্ষণ ও কম্পিউটার পরিচালনায় অদক্ষতাসহ এ প্রক্রিয়ার বিচার কার্যক্রম জটিল বলে দাবি করেছেন তারা। এছাড়াও বিচারিক প্রক্রিয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বিচার কার্যক্রমের ভিডিও দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ার আশংকাও করছেন তারা।

এ বিষয়ে আইনজীবী টিআর খান বলেছেন, ভার্চুয়াল কোর্টে নিম্ন আদালতে প্রাকটিসিং আইনজীবীরা অনেক সমস্যা ফেস করবে। অনেকের কাছেই আমাদের ল্যাপটপ, প্রিন্টার, স্ক্যানার, স্মার্টফোন নেই। নেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ। এছাড়া অনলাইন সুবিধাও অনেকেরই নেই। অনেক সিনিয়র আইনজীবী জীবনে কোনদিন স্মার্টফোন ব্যবহারই করেননি। কম্পিউটার দক্ষতা বা এ বিষয়ক জ্ঞান আছে কিছুসংখ্যক তরুণ আইনজীবীর। বাকিরা ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যাপারটাই বুঝতে পারছেন না। শুধুমাত্র যারা জানেন তারা ছাড়া বাকিরা কী করবেন? এছাড়াও আইনজীবীদের অবশ্যই কোর্টে যেতে হবে। কম্পিউটারে দরখাস্ত রেডি করা, জেলখানায় ওকালতনামা পাঠানো, দরখাস্ত শুনানির জন্য প্রস্তুত করা, স্ক্যানিং করা, নথি দেখা, বন্ড দেয়া ইত্যাদি কাজে কোর্টে যেতে হবে। তাহলে আর ঘরে থাকতে পারছি কোথায়? তাছাড়া শুনানির ভিডিও কেউ রেকর্ডিং করে যদি অনলাইনে ছড়িয়ে দেয়?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ভার্চুয়াল কোর্টের বিপক্ষে নই। বরং বিপদের সময় নতুন এই সিস্টেমকে স্বাগত জানাই। তবে কোন প্রস্তুতি এবং প্রশিক্ষণ ছাড়া আদালতের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনই অনলাইন পদ্ধতি গ্রহণ করা সমীচিন হয়নি।’

এ বিষয়ে আইনজীবী আয়শা আকতার ( ছদ্মনাম) বলেন, ‌‘আসলে এদিক-ওদিক দুদিকেই সমস্যা। কোর্ট খুললেও সমস্যা, আবার কোর্ট না খোলার কারণে অনেক আসামি জামিন শুনানি ছাড়াই জেলে আছে। তাই আপাতত ভার্চুয়াল কোর্টকে আদালতের মূল কার্যক্রম না ভেবে কেবল একটি বিকল্প উপায় হিসেবে দেখতে হবে।’

ভার্চুয়াল আদালত কিভাবে চলবে— এ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তিনি জানান, ‘এক্ষেত্রে একটি ইমেইল আইডি, ভিডিও চ্যাট অ্যাপ (জুম, গুগল মিট, মাইক্রোসফট টিম) ও স্ক্যানার সফটওয়্যার থাকতে হবে। স্ক্যানার ইন্সটল করে সেটআপ করে রাখতে হবে ডকুমেন্টস স্ক্যান করার জন্য। আবেদন করতে দরখাস্তে আইনজীবী সমিতির লিন নাম্বার, ফোন নাম্বার এবং ইমেইল আইডি দিতে হবে। ডকুমেন্ট স্ক্যান করে সংশ্লিষ্ট কোর্টের ই-মেইল আইডিতে মেইল করে দিলে একটা ভার্চুয়াল নাম্বার পড়বে। ফিরতি মেসেজে পাওয়া যাবে শুনানির সময়। যথাসময়ে উপস্থিত হলেই শুনানি হয়ে যাবে। বেইল বন্ড, বেইলবন্ড স্টিকার, হাজিরা ফরম ওকালতনামার ব্যবস্থা কিভাবে হবে সে বিষয়ে এখনও স্বচ্ছ ধারণা পাইনি। হয়তো এগুলো সংগ্রহ করতে আমাদের আদালতে উপস্থিত হতে হবে। আশা করি দু-একদিনে এরকম অনেক জটিলতার অবসান হবে।’

ভার্চুয়াল আদালতের ম্যানুয়াল।
ভার্চুয়াল আদালতের ম্যানুয়াল।

এ বিষয়ে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (বান্দরবান) মোহাম্মদ আবুল মনসুর সিদ্দিকী বলেন, ‘ভার্চুয়াল কোর্ট সন্দেহাতীতভাবেই বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করায় এটি সহায়ক হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন কোন পদ্ধতি এলে সেখানে গ্যাপ থাকে। কিছু জটিলতাও সৃষ্টি হয়। কিন্তু করোনার এই আপৎকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ ভার্চুয়াল কোর্টের নেপথ্যে যারা ভূমিকা রেখেছেন সেটি খুবই প্রশংসার দাবি রাখে।’

যারা ভার্চুয়াল কোর্টের সাথে সরাসরি জড়িত তারা পরস্পর ধৈর্য্য নিয়ে কাজ ও সহযোগিতা করলেই এ সিস্টেমের সর্বোচ্চ সুফল পাওয়া যাবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!