পাথরঘাটার বাবা-ছেলেতে শুরু হল চট্টগ্রামের ডেঙ্গুর মৌসুম

করোনাভাইরাসের এই মহামারীর মধ্যেই চট্টগ্রাম নগরীতে এবার থাবা বসালো ডেঙ্গু। নগরীর পাথরঘাটায় বাবা-ছেলের শরীরে ধরা পড়লো প্রাণঘাতী ডেঙ্গু। মাত্র এক মাস আগে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা প্রশাসকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে এ নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যেই দেখা দিল ডেঙ্গুর হানা। সাধারণত জুন-জুলাইয়ের দিকে ডেঙ্গুর উপদ্রব দেখা গেলেও এবার তা দেখা গেল অনেক আগেভাগেই।

রোববার নগরীর পাথরঘাটার কাঞ্চন দত্ত ও তার পুত্র এলিন দত্ত পিকলুর শরীরে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। কাঞ্চন দত্ত জ্বরে পড়ার চার দিনের মাথায় তার ছেলে পিকলুও জ্বরে পড়েন। কিন্তু টানা ১০ দিনেও বাবার এবং ৬ দিনেও ছেলের জ্বর না কমায় করোনাভাইরাস সন্দেহে তারা নমুনা পরীক্ষা করান। কিন্তু তাতে ফলাফল নেগেটিভ আসলে নগরীর ডা. মাহফুজুর রহমান’স ল্যাবে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে দেন। এরপরই তাদের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হল। তবে চিকিৎসকদের অসহযোগিতার কারণে বর্তমানে তারা বাসাতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এলিন দত্ত পিকলু সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজের ছাত্র।

পাথরঘাটার বাবা-ছেলেতে শুরু হল চট্টগ্রামের ডেঙ্গুর মৌসুম 1

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন নালা-নর্দমার বদ্ধ পানিতে প্রচুর মশা দেখা যাচ্ছে এই সময়ে। সেখানে নির্বিচারে ডিম পাড়ছে মশা। এমন পরিস্থিতিতে করোনা আর ডেঙ্গু যোগ হয়ে নগরবাসীর জন্য মরার ওপর খাড়ার ঘা দাঁড়াচ্ছে কিনা সেটিই বড় উদ্বেগের বিষয়। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে গেল নভেম্বর থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওষুধ ছিটিয়ে মশা তাড়ানোর মহাপরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। কিন্তু অচিরেই তাতে ছেদ পড়ে সিটি নির্বাচনের অজুহাতে। থমকে যায় চসিকের মশা মারা কার্যক্রম। এরপর খোদ প্রধানমন্ত্রীর কড়া বার্তায় আবার একটু নড়েচড়ে বসেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০ দিনের সময়ও চেয়ে নেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের জেলা প্রশাসকদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা পয়েন্ট আছে, এরপরে আসবে মশার প্রাদুর্ভাব ডেঙ্গু, কাজেই মশা মারার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ এর জবাবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আশ্বস্ত করছি গত বছরও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব ছিল। আল্লাহর রহমতে চট্টগ্রামে হয়নি আমরা যথাযথ পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণেই। এ বছরও আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, অলরেডি আমি মিটিং করেছি, সংশ্লিষ্টদের সাথে সরাসরি কথা বলেছি। গত তিনদিন ধরে আমরা ব্যাপকভাবে মশার ওষুধ ছিটাচ্ছি। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এটা একেবারে সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।’

কিন্তু সহনীয় হওয়ার তো দূরের কথা, দিন দিন চট্টগ্রাম নগরজুড়ে মশার অসহনীয় বংশবিস্তার। করোনার সম্ভাব্য খারাপ পরিস্থিতির আশঙ্কায় নেওয়া হচ্ছে নানা প্রতিরোধী পদক্ষেপ। অথচ গত বছরের ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, গেল তিন বছরের চাইতে কয়েকগুণ বেশি ছিল। তাতেও যেন নজর নেই কর্তৃপক্ষের। তার ওপর চট্টগ্রামে গেল তিন বছর টানা মশক জরিপ না হওয়ায় কোন্ ধরনের মশার ঘনত্ব বেশি তাও সঠিক জানা নেই কর্তৃপক্ষের। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এখন করোনাভাইরাস নিয়ে তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু তাদের মাথাব্যথা নেই, এই ফাঁকেই আড়ালে উঁকি দিচ্ছে আরেক প্রাণঘাতী রোগ ডেঙ্গু— সুযোগ বুঝে যা ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতি বছরই।

করোনা ভাইরাস এবং ডেঙ্গু সংক্রমণের বিস্তার ভিন্ন হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থাও পুরো আলাদা। তবে দুই ক্ষেত্রেই সচেতন হতে হবে সকলকে। তাই আগাম পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুইটা ট্রিটমেন্ট দুই ধরনের। তবে দুই ক্ষেত্রেই সচেতন থাকতে হবে সকলকে। একসঙ্গে দুইটা দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে আমাদের।’

সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এখনও চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগীর কোনো তথ্য পাইনি। সামনে বৃষ্টি হতে পারে। তখন এর প্রকোপ বাড়বে। আমরা সিটি করপোরেশনকে চিঠিও দিয়েছি যে মশার দিকে খবর নেন এবং ওষুধ ছিটান। না হলে একসঙ্গে দুটি মহামারি দেখা দিলে আমাদের জন্য বিপদ হবে। ডেঙ্গু কিন্তু এখন সারা বছরের রোগ। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কাজ করতে হবে। আর যদি ডেঙ্গুর রি-ইনফেকশন হয়, তাহলে তো আরও বিপদ।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!