চট্টগ্রামের দুই ব্যবসায়ী দুদকের জালে, ২ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকায় মেসার্স অনামিকা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ ফারুখ আহমেদ ওরফে শাহরিয়ার ২০০৩ সালে মালিকানার তথ্য গোপন করে তার দুটি প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন নাম দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলেন। অনামিকা ট্রেডার্সের নামে হিসাব খুলতে সত্বাধিকারী দেখিয়েছেন অলি আহম্মদকে এবং মেসার্স আলিফ এন্ট্রারপ্রাইজের সত্বাধিকারী দেখিয়েছেন গোলাম ফারুকের নাম দিয়ে।

মূলত এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক শেখ ফারুখ আহমেদ ওরফে শাহরিয়ার। তাকে এসব কাজে সহযোগিতা করেছেন আমিরুল ইসলাম।

উভয়ই পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রামের ইউসিবিএল বন্দর শাখায় ১৭টি এলসি’র মাধ্যমে সুপার গ্লু আমদানি করেন। পরবর্তীতে বিদেশ থেকে আনা বেশি দামে এসব সুপার গ্লু’র কম মূল্য দেখিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। অনুসন্ধান শেষে দু’জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপসহকারী পরিচালক (সংযুক্ত) সবুজ হোসেন বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, চাঁদপুরের মতলব উত্তর থানার আমুয়াকান্দা গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন পাটোয়ারীর ছেলে মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম (৬০) এবং চট্টগ্রামের খুলশী থানার লালখানবাজার বাঘগোনা জাহাঙ্গীর অ্যান্ড রিজিয়া টাওয়ারের ২০১ এর শেখ নুরুল ইসলামের ছেলে শেখ ফারুখ আহমেদ ওরফে শাহরিয়ার (৪৯)।

দুদকের মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ঢাকার ৯৭/১, পূর্ব এর মেসার্স সততা ইন্টারন্যাশনালের স্বত্ত্বাধিকারী আসামি মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রামের ৩০, খাতুনগঞ্জের অনামিকা ট্রের্ডাসের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ ফারুখ আহমেদ প্রকাশ শাহরিয়ার। ১৯৯৬-১৯৯৯ সালের মধ্যে সততা ইন্টারন্যাশনালের বরাতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের মাধ্যমে ৮টি ঋণপত্র খুলে ৯টি চালান মোতাবেক সুপার গ্লু আমদানি করেন।

১৯৯৬-১৯৯৯ সালের মধ্যে অনামিকা ট্রেডার্সের বরাতে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মাধ্যমে ৭টি ঋণপত্র খুলে ৮টি চালান মোতাবেক সুপার গ্লু আমদানি করেন অনামিকা ট্রের্ডার্স। এই ২টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৫টি ঋণপত্রের বরাতে ১৭টি চালানভুক্ত সুপার গ্লু ১৭টি বিল অব এন্ট্রি মূলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে শুল্কায়ন করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করে নেন ওই দুই প্রতিষ্ঠান।

১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৯ সালে ঢাকার নবাবপুর শাখা থেকে সততা ইন্টারন্যাশনাল ও অনামিকা ট্রেডার্স প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দর শাখা থেকে ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক থেকে ১৭টি এলসি’র মাধ্যমে সুপার গ্লু আমদানী করে। বেশি মূল্যে আনা সুপার গ্লু’র এ চালানের কম মূল্য দেখিয়ে ১ কোটি ৭২ লাখ ৯২ হাজার ৯২৪ টাকার সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদক আরও জানায়, চট্টগ্রামের খাতুগঞ্জ মেসার্স অনামিকা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী শেখ ফারুখ আহমেদ প্রকাশ শাহরিয়ার চট্টগ্রাম নামে ইউসিবিএলের বন্দর শাখায় হিসাব খোলার সময়ে তার প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী দেখানো অলি আহম্মদকে। যার নম্বর ছিল ০০৪৯১১১০০০০৬৯৮।

২০০৩ সালের ১৯ মে দুদকের রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, ০০৪৯১১১০০০০৬৯৮ নম্বর হিসাব মেসার্স আলিফ এন্ট্রারপ্রাইজ নামে খোলা, যার স্বত্ত্বাধিকারী গোলাম ফারুক। গোলাম ফারুক এবং শেখ ফারুক আহম্মেদ প্রকাশ শাহরিয়ার একই ব্যক্তি। অর্থাৎ আমিরুল ইসলাম ও শেখ ফারুক আহমেদ পরস্পর যোগসাজশে চট্টগ্রামের ইউসিবিএল বন্দর শাখায় উক্ত হিসাব খুলেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অনামিকা ট্রেডার্স এবং আশা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক হলেন শেখ ফারুক আহমেদ প্রকাশ শাহরিয়ার। তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১, ৪০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।

এমএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!