গার্ড সংকটে ধুঁকছে চট্টগ্রাম রেলের পরিবহন দপ্তর, বাতিল হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রেনের শিডিউল

ডিউটি না করেও মাইলেজের টাকা নেন গার্ড, বাসা বরাদ্দের নামেও টাকা

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের পরিবহন দপ্তরে গার্ড (পরিচালক) সংকট এখনও কাটেনি। এর ফলে বাতিল হচ্ছে পণ্যবাহী মালগাড়ির সিডিউল। ট্রেনে ডিউটির বদলে গার্ড দিয়ে দপ্তরের কাজ করানো হচ্ছে। একইসঙ্গে ট্রেনে নির্ধারিত ডিউটির পর অতিরিক্ত ডিউটি করে মাইলেজ নেওয়ার নিয়ম থাকলেও অনেকে ডিউটি না করেই পাচ্ছেন মাইলেজের টাকা। এছাড়া একই দপ্তরের একজন গেটকিপারের কাছ থেকে বাসা বরাদ্দের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, পরিবহন দপ্তরের অধীনে চট্টগ্রাম স্টেশনে গার্ড মঞ্জুরি রয়েছে ৭০জন। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে ৪০। সিজিপিওয়াইতে মঞ্জুরি ৩০জন, আছেন ১৪ জন। লাকসাম মন্জুরি রয়েছে ২২ জন, রয়েছে মাত্র ৪ জন।

এমন সংকটের মধ্যে মাকসুদুর রহমান মোহন নামের এক গার্ডকে দিয়ে ট্রেনে ডিউটি না করিয়ে দপ্তরে কাজ করানো হচ্ছে। গত ২৭ নভেম্বর রেলওয়ে বিভাগীয় পরিবহন দপ্তরে গিয়ে তার ডিউটি করার সত্যতা পাওয়া যায়। অথচ ট্রেনে ডিউটি না করেও তিনি প্রতি মাসে ৩ হাজার কি.মি. মাইলেজ বিল পান বলে জানা গেছে।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম সিজিপিওয়াই থেকে কুমিল্লা লালমাই স্টেশন পণ্যবাহী মালবাহী বাতিল করা হয়। কারণ হিসেবে কন্ট্রোল আদেশে ‘গার্ড সংকট’ বলে উল্লেখ করা হয়। এ কন্ট্রোল আদেশের কপি চট্টগ্রামের প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

এছাড়া পরিবহন দপ্তরের প্রধান সহকারী নাঈম ও অফিস সহকারী হুমায়ুনের বিরুদ্ধে বাসা বরাদ্দের নামে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের মহিলা গেটকিপার রাবেয়ার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। টাকা নেওয়ার বিষয়ে এই দুই কর্মচারীর একটি অডিও রেকর্ড চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে সংরক্ষিত আছে।

গেটকিপার রাবেয়া অভিযোগ করে জানান, তার নামে রেলে বাসা বরাদ্দ ও ভাড়া কর্তন করা হলেও এখনও বাসা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। প্রধান সহকারী নাঈম, অফিস সহকারী হুমায়ুন পরিবহন কর্তার নাম ভাঙিয়ে তার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা আদায় করেছে। বাসা বুঝে না পাওয়ায় মৌখিক অভিযোগও দিয়েছেন সহকর্মী এবং কর্মকর্তাদের কাছে।

বাসা বরাদ্দের নামে টাকা নেওয়া বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান সহকারী নাঈম বলেন, ‘১ ডিসেম্বর বাসা বুঝে পাবেন তিনি। মহিলা মানুষ অনেক কিছু না বুঝেই মন্তব্য করে ফেলে।’

বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান গার্ড দিয়ে দপ্তরে ডিউটি করানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘মোহন অসুস্থ তাই তাকে দপ্তরের ডিউটি করানো হচ্ছে।’

তবে গার্ডের অভাবে মালবাহী গাড়ি বাতিলের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি। একইসঙ্গে ঘুষ নিয়ে বাসা বরাদ্দ নেওয়া কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (পূর্ব) শহিদুল ইসলামের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অতিরিক্ত চিফ অপারেটিং সুপারিন্টেন্ডেন্ট (পূর্ব) জাকির হোসেন বলেন, ‘অসুস্থ হলে মেডিকেল সার্টিফিকেট দিলে যাচাই করতে হবে। গার্ড দিয়ে দপ্তরে কাজ বিধি বহির্ভূত। ট্রেনে ডিউটি না করলে মাইলেজ দেওয়াও নিয়ম নেই।’

বাসা বরাদ্দের বিষয়ে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!