কুতুবদিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা সরকারী তালিকার বাইরে !

কুতুবদিয়ায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা সরকারী তালিকার বাইরে ! 1ইফতেখার শাহজীদ রোকন, কুতুবদিয়া : দেশ রক্ষায় স্বাধীনতার স্বপক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেও স্বীকৃতি না পেয়ে চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাগণ। স্বাধীনতার পর থেকে কুতুবদিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোসলেম খাঁন এলএলবি ১৯৭২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটানা ৩৫ বছর কুতুবদিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। গত ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তৎকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন করেন। একই ভাবে সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলামকেও তাঁর মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন করা হয়। কিন্তুু দূঃখের বিষয় বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তাদের নাম নেই। আক্ষেপের সাথে কথাগুলো বললেন বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।

কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর জানান, তৎকালীন সময়ে (১৯৭১ সালে) পাকিস্তান সরকারের আমলে দেশদ্রোহী হিসেবে কুতুবদিয়া থানায় ডাক্তার আবু ছৈয়দ, মোসলেম খাঁন এলএলবি, নুরুল ইসলাম (সাবেক চেয়ারম্যান) জোনাব আলী মাতবরসহ ৩২ জনের তালিকা তৈরী করে মামলা রুজু করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় তাঁরা জেলÑজুলুম ও নির্যাতন ভোগ করেছেন অসংখ্য বার।

গত ১৮ ফেব্র“য়ারী কুতুবদিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের সময় দেখা যায় ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছেন। ওই দিন ভাতা ভোগী ১৬ জনের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে ১৫ জনের তথ্যসমুহ সঠিক থাকলেও উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মৃত ফারুক আহমদ ১৯৭১ সালের ৭ জুন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গঠিত “শান্তি কমিটি”তে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ১৪নং তালিকায় তালিকাভুক্ত থাকায় যাচাই বাছাই কমিটি তাকে বাদ দিয়েছেন। অবশ্য তিনি কৌশলে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ২০১০ সালের প্রাথমিক খসড়া ভোটার তালিকার কুতুবদিয়া উপজেলার ১১ নং সদস্য ছিলেন। এছাড়াও এদের মধ্যে ১০ নং গেজেটের ক্রমিক-২৯৯ নাম্বারে তার নাম রয়েছে। সে সময়ে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধার ভাতাসহ সরকারী বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগকারীদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছে বলে এ প্রতিনিধিকে আ’লীগের সভাপতি নিশ্চিত করেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারী কুতুবদিয়া উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) আবু হাসনাত মোঃ শহীদুল হক যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি রনজিত কুমার শীল, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের প্রতিনিধি নুরুচ্ছাফা বিকম, জেলা কমান্ডার প্রতিনিধি ভোলানাথ দাশ, উপজেলা কমান্ডার সদস্য মোজাফ্ফর আহমদ, মুবিম প্রতিনিধি আবুল খায়ের, জামুকা প্রতিনিধি মোঃ হোসেন চৌধুরী।

কৈয়ারবিল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ন আহবায়ক মোসলেম খান মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় কৈয়ারবিলের বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মৃত মুসলিম খাঁন এলএলবি, মৃত আমির হোছেন ও মৃত জোনাব আলীর নাম তালিকাভূক্ত করার জন্য ১৮ ফেব্র“য়ারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি বরাবরে লিখিত আবেদন করেন।

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটির জেলা কমান্ডার প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা ভোলা নাথ দাশ জানান, ১৯৭১ সালের ২৭ জানুয়ারী তিনি এবং মোসলেম খাঁন এলএলবিসহ ৩২ জন পাকিস্তান সরকার বিরোধী মামলায় অভিযুক্ত আসামী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীর মধ্যে কয়েকজন অনলাইনে আবেদন করলেও অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা অনলাইনে আবেদন না করায় বাদ পড়েন। ওই মুক্তিযোদ্ধাদের সান্তনা হিসেবে ৪২ জনের লিখিত আবেদন গ্রহণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে না পারায় হতাশ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে অনলাইনে আবেদন করার কথা উল্লেখ রয়েছে বলে ইউএনও অফিস সূত্রে জানা গেছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!