কর্ণফুলী নদীতে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণের দাবিতে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কালুঘাট এলাকায় সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা কমিটি আয়োজিত সমাবেশ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করার পাশাপাশি সেতু অবরোধের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
সেতু অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের প্রতি সরকার বিমাতাসূলভ আচরণ করছে। কালুরঘাটের এই মরণ যন্ত্রণায় কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অক্টোবরে পূর্ব রেলের সদর দপ্তর ঘেরাও করা হবে। নভেম্বরে বোয়ালখালী ও পটিয়ার জনগণকে সাথে নিয়ে সিপিবি বোয়ালখালী থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। এরপরও যদি সেতু নির্মাণ শুরু না হয় সেতু অবরোধ করবে সিপিবি।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিপিবি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুন নবী, সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, সহ-সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মছিউদ্দৌলা, অধ্যাপক কানাই লাল দাশ, সিপিবি বোয়ালখালী শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক শেহাবুদ্দিন সাইফু, অনুপম বড়ুয়া পারু প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্মা ফ্রন্টের সৈন্য পরিচালনার জন্য ১৯৩০ সালে কর্ণফুলী নদীতে একটি আপদকালীন সেতু নির্মাণ করা হয়। ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি ব্রিজ বিল্ডার্স হাওড়া নামে একটি প্রতিষ্ঠান ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে ৭০০ গজের সেতুটি তৈরি করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে মোটরযান চলাচলের জন্য সেতুতে ডেক বসানো হয়। ১৯৫৮ সালে এই এক লেনের সেতুটিই সব ধরনের যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, এখন বয়সে ভারাক্রান্ত সেতুটি। ফলে ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কালুরঘাট রেল ও সড়ক সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জোড়াতালি দিয়ে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার হাজার মানুষ। এ অবস্থায় সেতু ব্যবহারকারী বোয়ালখালী উপজেলা ও পটিয়ার একাংশের বাসিন্দারা একই স্থানে নতুন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। অস্ট্রেলিয়া, তাইওয়ান ও বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান নতুন সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই করে।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত কালুরঘাট রেল ও সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এবং বর্তমান সরকারের সদিচ্ছায় প্রস্তাবিত চীন, মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্ক স্থাপন এবং কর্ণফুলী নদীর ওপর পুরানো কালুরঘাট রেল সেতু ভেঙে নতুন করে রেল ও সড়ক সেতু নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ সেতুটি সরকারের মেগা প্রকল্প দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইনের অন্তর্ভুক্ত।
সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কালুরঘাট কর্ণফুলী নদীর ওপর রেল ও সড়ক সেতু নামে একটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) তৈরি করে ঢাকাস্থ রেলভবন কার্যালয়ে পাঠায়। পরে সেটি যাচাই-বাছাই শেষে কয়েক দফা পুনর্গঠন করে ২৭ মার্চ সংশোধিত ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠানো হয়।
প্রকল্প অনুসারে ২০২০ সালের শুরুতে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকার দক্ষিণ কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ)। বাকি টাকার যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।
রেল কর্মকর্তাদের মতে, প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের যে প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে, তার সুফলও নির্ভর করছে কালুরঘাটে নতুন সেতু নির্মাণের ওপর।
এফএম/এসএস