ইতিহাস গড়তে পারলো না বাংলাদেশের যুবারা

অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত

ইতিহাস গড়ার উপলক্ষ্য প্রস্তুত ছিলো। প্রয়োজন ছিলো ৫০ ওভার ব্যাট করে মাত্র ১০৭ রান করা। কিন্তু এ ছোট লক্ষ্যটিকেই পাহাড়সম বানিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটসম্যানরা। বোলারদের দুর্দান্ত প্রদর্শনীর বিপরীতে ব্যাটসম্যানদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স ম্লান করে দিয়েছে শিরোপা জেতার স্বপ্ন।

ভারতের বাঁহাতি স্পিনার অথর্ব আঙ্কোলেকারের ঘূর্ণিতে নাকাল হয়ে মাত্র ১০১ রানেই অলআউট হয়ে গেছে টাইগার যুবারা। যে কারণে শিরোপার খুব কাছেই গিয়েও হারতে হয়েছে মাত্র ৫ রানে। দুর্দান্ত এ জয়ে যুব এশিয়া কাপের আট আসরের মধ্যে সপ্তমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। জয়ের জন্য চাই ১০৭ রান। নেহাতই মামুলি টার্গেট। তাও আবার ফাইনালে! কিন্তু সামান্য সেই লক্ষ্যের পেছনে ছুটতে নেমে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের ব্যাটিংয়ের শুরুটা হলো আরো মামুলি। গুটিয়ে গেলো বাংলাদেশ ১০১ রানে। ফাইনাল জিতে ভারত চ্যাম্পিয়ন। ফাইনালের এই বিশ্রী ব্যাটিং, এই বাজে হার অনেক দিন কষ্ট দেবে বাংলাদেশকে। ৭৮ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন হারের অপেক্ষায়। তখনই নবম উইকেট জুটি আশা জাগিয়ে তোলে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। সামান্য পুঁজি নিয়েও ভারত ঠিকই ফাইনালে শ্রেষ্ঠত্ব দেখালো।

ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে ১০৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে বোলাররা ফাইনাল জেতার উপলক্ষ্য তৈরি করে। কিন্তু বোলারদের সাজানো সেই বাগান যে পায়ে ঢলে নষ্ট করে এলো দলের সব ব্যাটসম্যান। কলম্বোর প্রেমাদাসার উইকেট এমন কোন মাইনফিল্ড হয়ে উঠেনি যে এখানে ব্যাটিংই করা যাবে না। আসলে যে কায়দায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আউট হয়েছে তাকে বলে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসা। ১০৭ রানের সামান্য টার্গেট টপকাতে প্রয়োজন কেবল একটা ছোট খাটো জুটি। ম্যাচ জেতানোর মতো সেই জুটিই যে গড়তে পারলো না বাংলাদেশ।

আউট হয়ে গেলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের শেষ ব্যাটসম্যান। হলো না ইতিহাস গড়া। এ যেন তীরে এসে তরী ডুবল।
আউট হয়ে গেলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের শেষ ব্যাটসম্যান। হলো না ইতিহাস গড়া। এ যেন তীরে এসে তরী ডুবল।

রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশ প্রথম উইকেট হারায় ইনিংসের চতুর্থ বলে। তানজিদ হাসান ফিরলেন শূন্য রানে, এলবি হয়ে। তবে আম্পায়ারের পুরো ভুল সিদ্ধান্তের শিকার তানজিদ। পেসার আকাশ সিংয়ের বলটা নিশ্চিতভাবে লেগস্ট্যাম্প মিস করছিলো। কিন্তু আম্পায়ার আপিলে সাড়া দিলেন।

বাংলাদেশ ইনিংসে ভুলের শুরু ওভাবেই। বাকি সময়ে অবশ্য আম্পায়াররা ভুলচুক করেননি। যা ভুল করার তার সব দায় ব্যাটসম্যানদের। অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরে পড়া বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ফিরলেন আরেক ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন। মাহমুদুল হাসান, তৈাহিদ হৃদয় ও শাহাদাত হোসেন-মিডলঅর্ডারের এই তিন ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত সংগ্রহ ৪ রান! দেখতে না দেখতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডের হতশ্রী চেহারা ; ১৬ রানে নেই ৪ উইকেট!

অধিনায়ক আকবর আলী একপাশ আঁকড়ে রেখে লড়াই চালান। কিন্তু অন্যপ্রান্ত থেকে সহায়তা পেলেই কই? আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা মৃত্যুঞ্জয়ী চৌধুরী তাকে কিছুটা সঙ্গ দিলেন। মাঝে বৃষ্টির কারণে কয়েক মিনিট খেলা বন্ধ ছিলো। বৃষ্টি থামতেই বাংলাদেশের উইকেট পতনের ধারাবাহিকতা ফের শুরু। ভালো খেলতে থামা আকবর আলী ফিরলেন ২৩ রানে। স্পিনার আনকোলেকারের বলে কট এন্ড বোল্ড হন আকবর। দুই বল পরে মৃত্যুঞ্জয়ীও আউট! ২১.১ ওভারে ৭৮ রানে হাওয়া ৮ উইকেট!

নবম উইকেটে রকিবুল হাসান ও তানজিদ হাসান সাকিব যতক্ষণ খেলছিলেন মনে হচ্ছিলো বাংলাদেশ ঠিকই ম্যাচ জিতে নিবে। কিন্তু ২৩ রান যোগ করে এই জুটি ভাঙ্গতেই শেষবারের মতো ভেঙ্গে পড়ে বাংলাদেশ। ১০১ রানে শেষ দলের ইনিংস! ভারতের বাঁহাতি স্পিনার আনকোলেকার ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে লো স্কোরিং ফাইনাল জয়ের নায়ক।

-ভিলেন খুঁজছেন? সেটা যে বাংলাদেশের এই দলের সব ব্যাটসম্যান!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ১০৬/১০ (৩২.৪ ওভারে, জুরেল ৩৩, রাওয়াত ১৯, কারান লাল ৩৭, মৃত্যুঞ্জয় ৩/১৮, শামীম ৩/৮)।
বাংলাদেশ: ১০১/১০ (৩৩ ওভারে, আকবর আলী ২৩, মৃত্যুঞ্জয় ২১, তানজিম ১২, রকিবুল ১১, আনকোলেকার ৫/২৮)

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!