করোনা সেরে ওঠার পরও বিপদ—যত্ন না নিলে ‘ফুসফুস বিকল’

করোনায় বেশি অসুস্থ হওয়া রোগীদের হাসপাতালের সাধারন কেবিন থেকে আইসিইউতে (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট) চিকিৎসাধীন থাকতে হচ্ছে বেশি। করোনায় ফুসফুস সংক্রমিত হওয়ার ফলে জটিল হয়ে পড়ে রোগিকে দ্রুত সুস্থ করে তোলা। চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসার পর করেনা পজিটিভ রোগী নেগেটিভ হয়ে বাসায় ফিরে গেলেও ফুসফুস সংক্রমণের ফলে তাদের বিপদ কাটছে না। রোগিদের অনেকেই বাসায় ফেরার পর ফুসফুসের পরবর্তী অবস্থা কী তার খোঁজ নিচ্ছেন না। করছেন না প্রয়োজনীয় পরবর্তী পরীক্ষা। তাই করেনা নেগেটিভ হলেও এসব রোগিদের বিপদ থেকেই যাচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদের জন্য ফুসফুস বিকল হয়ে যেতে পারে বলছেন চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, যারা করোনাভাইরাসে গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের একটা বড় অংশের ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে, যাকে বলা হয় পালমোনারি ফাইব্রোসিস। ফুসফুসের এই ক্ষতি থেকে সেরে ওঠা যায় না। করোনা ফুসফুস আক্রান্ত হওয়ার পর ফুসফুসে একটা আস্তরণ পড়ে। করোনা নেগেটিভ হলেও সেই আস্তরণটি থেকে যায়।

যার ফলে করেনা রোগিদের পজিটিভ আসার পরও মারাত্মক শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং ক্লান্তিবোধ থাকছে। এসব রোগিরা সিঁড়ি ভাঙতে বা ছোটখাট সহজ কাজ করতে গিয়ে হাঁপিয়ে পড়ছেন। নিচু হতে গিয়েও তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বলছেন চিকিৎসক ও ভুক্তভুগী রোগিরা।

চট্টগ্রামে যে কয়টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা চলছে সেসব হাসপাতালের মোট ৫ জন চিকিৎসকের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছে চট্টগ্রাম প্রতিদিন। তাদের কথার সার সংক্ষেপ মিলে গেছে এক জায়গাতেই।

তারা বলছেন, হাসপাতালে সিটি স্ক্যানে দেখা গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর তার দুটি ফুসফুসের ওপরই একটা সাদা কুয়াশার আস্তরণ তৈরি হয়েছে- অনেকটা ভাঙা কাঁচের মত দেখতে। এটা করোনাভাইরাস আক্রমণের একটা বৈশিষ্ট্য।

বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির সভাপতি ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. আহমেদুল কবীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মুগদা হাসপাতালে যত করোনা রোগী চিকিৎসাধীন ছিল তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ফুসফুস সংক্রমনজনিত কারনে। করোনা আক্রান্ত হওয়ার দুই একদিনের মধ্যেই তাদের প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অক্সিজেন লেভেল হুট করে ৪০ এর নীচে চলে আসে। তখন তাদের আইসিইউতে শিফট করা ছাড়া উপায় থাকে না। অনেকে ফিরে আসে। অনেকে ফিরছেন না। তাছাড়াও ডায়াবেটিস, হাইপার টেনশন, হৃদরোগ এবং তারপর অন্যান্য ক্রনিক রোগ থাকলে রোগী বেঁচে ফিরছেন না। আর আইসিইউ বেড না পাওয়া গেলে কেবিনেই তাদের মৃত্যু হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. লক্ষীপদ বলেন, ‘করোনায় প্রধানত ফুসফুস সংক্রমিত হয়। তারপরই এই ভাইরাস হৃদযন্ত্রকে আক্রান্ত করে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হয়।’

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আব্দুর রব বলেন, ‘আমরা করোনা রোগির পরবর্তী চিকিৎসার জন্য জেনারেল হাসপাতালে পোস্ট কোভিড ইউনিট চালু করেছি। করোনা শেষে রোগিরা কী কী সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তা শুনছি। যেসব রোগির ফুসফুস সংক্রমণ ছিল তাদের পরবর্তীতে ফুসফুস এক্সরে করে দেখতে বলা হচ্ছে। সংক্রমণের মাত্রা দেখে পরবর্তী ট্রিটমেন্ট দিচ্ছি আমরা। তবে সেরে ওঠার ছয় সপ্তাহ পর যেসব রোগির ফুসফুসের স্ক্যান আমরা দেখেছি, তার থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রোগির ফুসফুসে ক্ষত হয়ে গেছে। যা সারতে সময় লাগবে।’

‘করোনা নেগেটিভ হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অবহেলা করা যাবে না। ফুসফুসের প্রতি যত্ন নিতে হবে। সুষম খাবার খেতে হবে। ধুমপান ত্যাগ করতে হবে’ -বলেন ডা: রব। ডা. রব আরো বলেন, কিন্তু রোগীদের সাড়া পাচ্ছি কম। তারা করোনা নেগেটিভ মানেই নিজেরা সুস্থ হয়ে গেছেন বলে ভাবছেন। কোভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তিদের একটা বড় অংশের পালমোনারি ফাইব্রোসিস হচ্ছে। ফাইব্রোসিস হয়ে গেলে ফুসফুস শক্ত আকার ধারণ করে। তখনই অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের যাওয়া আসা ব্যাহত হয়। কারণ ফুসফুসের থলিগুলো ফুলতে পারে না। রোগী একটি দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টে ভোগে।’

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!