সাড়ে ৮ কোটিতে নিলামে গেল বন্দরে আটক মালয়েশিয়ান অয়েল ট্যাংকার জাহাজটি

মালয়েশিয়ান মালিকানাধীন বড় অয়েল ট্যাংকার জাহাজ ‘গাগাসন জহর’। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারে আটক থাকা এ জাহাজের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা ছিল। ফলে জাহাজটি আর ফেরত যেতে পারেনি দেশে। অবশেষে আদালেতের আদেশেই নিলামে ৮ কোটি ৬২ লাখ টাকায় বিক্রি হলো জাহাজটি।

গত ৫ এপ্রিল চট্টগ্রামের সাগরিকার ‘আর এ শিপ ব্রেকিং কোম্পানি’ জাহাজটি নিলামে ক্রয় করে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, গত ২০১৪ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে আটক ছিল অয়েল ট্যাংকারটি। এর মধ্যে অয়েল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান, সাপ্লাইয়ারসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপুরণ মামলা করে জাহাজের বিরুদ্ধে। জাহাজের মালিকের কাছে পাওনাদারের দাবির অংক দাঁড়ায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।

সূত্র মতে, গাগাসন জহর জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার গ্যারাকলে বন্দি হয়ে থাকাকালে জাহাজের মালিক মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের ‌‌’গাগাসন ক্যারিয়ার এনডিএনবিএইচডি’ কোম্পানিটি দেউলিয়া হয়েছে গেছে। ফলে জাহাজের পক্ষে আইনী লড়াই করার মত কেউই ছিল না। এর মধ্যে ওই জাহাজ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে তিন পক্ষ। এরা হলো- জাহাজের নাবিক-ক্রো, রসদ সাপ্লাইকারি ও পণ্য আমদানিকারক কোম্পানি।

ঘটনার সুত্র
২০১৪ সালের পানামা পাতাকাবাহী ‘এমটি গাগাসন জহর’ আইএমও নম্বর ৫০৮৩৯৮৫ জাহাজটি পোর্ট ক্লাং বন্দর থেকে ফার্নেস অয়েল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আসে। ওই ফার্নেস অয়েলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিল চট্টগ্রামের টি কে গ্রুপ। চালানে যে পরিমাণ ফার্নেস অয়েল থাকার কথা ছিল সেই পরিমাণ না থাকার অভিযোগ এনে হাইকোর্টে মামলা করে টি কে গ্রুপ। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে নির্দেশনায় ট্যাংকার জাহাজ ‘গাগাসন জহর’ আটক রাখা হয় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে। এর মধ্যে জাহাজে প্রয়োজনীয় রসদ সরবরাহের দাবি করে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আরেকটি মামলা করেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইউনিয়ন ট্রেডিং এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের পক্ষে ঢাকার খিলগাঁওয়ের মোহাম্মদ মোস্তাফা জুবায়ের হায়দার। ওই কোম্পানি বাংলাদেশি ৩২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দাবি করে মামলা করে। এতে জাহাজ, জাহাজের ক্যাপ্টেন, গাগাসন জহরের পরিচালনা নিয়োজিত এজেন্ট, শিপ ম্যানেজমেন্ট, বাংলাদেশের লোকাল এজেন্ট মোহাম্মদী সি ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম, চেয়ারম্যান বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কাস্টমস কমিশনার, অফিসার ইনচার্জ বন্দর পুলিশ, জোনাল কমান্ডার কোস্ট গার্ড পূর্বজোনসহ ১২ জনকে বিবাদি করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্দরের বহির্নোঙ্গরে থাকায় অবস্থায় ২০১৬ সালে ২২ মে বঙ্গোপসাগরের অপর মাদার ভ্যাসেল ‘এমভি বাংলার শিক্ষা’র সঙ্গে সংষর্ঘ লাগে ‘এমটি গাগাসন জহরের’। এতে আংশিক ক্ষতি হয় বাংলার শিক্ষার জাহাজের। এতে ক্ষতি পুরণ দাবি করে আদালতে মামলা দায়ের করে ‘এমভি বাংলার শিক্ষা’ কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে, গাগাসন জহুরে চাকুরি করা কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষ থেকেও অপর একটি মামলা করা হয়। সব মামলায় ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয় গাগাসন জহরের মালিকের কাছে। কিন্তু ক্ষতিপুরণ না দিয়ে দেউলিয়া হয়ে যায় গাগাসন জহরের মালিক।

এছাড়াও দীর্ঘদিন বন্দরের বহিনোঙ্গরে পড়ে থাকায় জাহাজ থেকে বিভিন্ন বর্জ্য পানিতে মেশা, বন্দরের আউটারে বিভিন্ন রসায়নিক পানিতে ছড়িয়ে পড়াসহ বিভিন্ন বিপদের আশঙ্কা করেছিল শিপিং ব্যবসায়ীরা।

এফএমএস শিপিং লাইনের সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সিকদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের আউটারের দীর্ঘদিন ধরে থাকা গাগাসন জহর পরিবেশ দুষণ করেছিল। আারও আগে জাহাজটি সরানো দরকার ছিল।

এমটি গাগাসন জহরের লোকাল এজেন্ট মোহাম্মদী সি ট্রান্সপোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ নাঈম উদ্দিন বলেন, আমাদনিকারক টি কে গ্রুপের পণ্য কম পড়ায় জাহাজের বিরুদ্ধে মামলা করে। ফলে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড়পত্র নিতে নিষেধ করে দেয় আদালত। তখন থেকেই বন্দরের আউটারে পড়ে আছে গাগাসন জহর। এবার আদালতই জাহাজটি নিলামে তুলে। আদালত পাওয়ানাদারদের টাকা বুঝিয়ে দিবেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য হারবার কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (বিএন) চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জাহাজ এমটি গাগাসন জহরকে আটক রেখেছিলাম। এখন হাইকোটের নির্দেশেই নিলামে প্রাপ্ত মালিককে বুঝিয়ে দিয়েছি।

চট্টগ্রাম বন্দরের ডেপুটি কনজারবেটর ক্যাপ্টেন ফরিদ উদ্দিন বলেন, গাগাসন জহরকে নিয়ে আমরা অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম। অবশেষে নিলামে বিক্রি হলো জাহাজটি। আমরা এ মাসের প্রথম সপ্তাহে আর এ শিপ ব্রেকিং কোম্পানিকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তবে জাহাজটির আয়ু শেষ হয়ে গেছে। তাই এটি স্ক্র্যাপ বানানো ছাড়া আর কোন কাজে আসবে না।

এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!